
টানা ৬৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি। রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতিতে (West Bengal Recruitment Scam) অভিযুক্ত হিসেবে এখনও পর্যন্ত যতজন তৃণমূল বিধায়ক ও নেতা গ্রেফতার হয়েছে, তার মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে সবচেয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই-কে (CBI) সবচেয়ে বেশি নাকানিচোবানি খাওয়ালেন তিনি। এমনকী সিবিআই গ্রেফতারি থেকে বাঁচতে দুটি মোবাইলও বাড়ির সামনের ডোবায় ছুড়ে ফেলেন। তবু শেষরক্ষা হল না। ভোররাতে গ্রেফতার শাসকদলের তৃতীয় বিধায়ক মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা (Jiban Krishna Saha)। শুক্রবার বিকেলের দিকে অসুস্থতার কথা বলে বাথরুম যাওয়ার নাম করে গিয়ে নিজের দু’টি মোবাইল বাড়ির পিছনের পাঁক ভর্তি ডোবায় ছুড়ে ফেলে দেন তিনি। ছোড়েন দু’টি পেনড্রাইভ এবং একটি হার্ডডিস্কও। সেগুলিরও খোঁজ চালানো হচ্ছিল। প্রায় ৩২ ঘণ্টা তল্লাশির পর ডোবা থেকে একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়। ওই মোবাইলের তথ্য উদ্ধার কীভাবে করা যায়, সেই চেষ্টা চালাচ্ছে সিবিআই।
কে জীবনকৃষ্ণ সাহা?
নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্যের পরে জীবনকৃষ্ণই তৃতীয় বিধায়ক, যিনি সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হলেন। মুর্শিদাবাদে তাঁকে গ্রেফতার করে এবার নিজাম প্যালেসে জেরা চালিয়ে যাবে সিবিআই। সিবিআই সূত্রের খবর, আরও ৮-১০ জন বিধায়কও নাকি কেন্দ্রীয় সংস্থার স্ক্যানারে রয়েছেন।
প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু
জীবনকৃষ্ণ নিজেও পেশায় শিক্ষক। বাবার নাম বিশ্বনাথ সাহা। ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান ২০০৪ সালে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলেন। তাঁর বাবা সাঁইথিয়ায় তেল কল ও আলুর কোল স্টোরেজ আছে বলে জানা গিয়েছে। বড়ঞায় রেশন ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যবসাও রয়েছে। ২০১৩ সালে বীরভূমের নানুরে একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতায় যোগ দেন জীবনকৃষ্ণ। ২০২১ সালে ট্রান্সফার নিয়ে অন্য স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তৃণমূলের টিকিটে বিধানসভা ভোটে দাঁড়ান। বড়ঞায় জয়ী হন। বিধায়ক হওয়ার পর শিক্ষকতা ছেড়ে দেন।
স্ত্রী ও শ্যালকও প্রাইমারি স্কুল টিচার
২০২১ সালে বড়ঞায় বিজেপি প্রার্থী অমিয় দাসকে ২ হাজার ৭৫৩ ভোটে পরাজিত করেন জীবনকৃষ্ণ। কলেজ জীবন থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস করতেন। ২০১৩ সালে টগর সাহাকে বিয়ে করেন জীবনকৃষ্ণ। ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় চাকরি পান টগরও। বাড়ির কাছেই একটি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষিকা জীবনের স্ত্রী। ওই বছরেই শ্যালক নিতাই সাহাও প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পান।
জালে তৃতীয় বিধায়ক
এর আগে বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। দু’জনেই বর্তমানে জেলবন্দি। এবার সেই লিস্টে বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা।