ঋতু পরিবর্তনের সময় জ্বর-সর্দি-কাশি নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেই নিরীহ ভাইরাস জনিত রোগই দাপট দেখাতে শুরু করেছে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। কলকাতা-সহ একাধিক জেলায় কাবু মানুষ। জ্বর কমলেও কাশি থামতে চাইছে না। সবথেকে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। ফলে হাসপাতালগুলিতে অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত শিশু রোগীর ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। ইতিমধ্যে কলকাতার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে শিশু ওয়ার্ডে প্রায় সমস্ত বেড ভর্তি। পরিস্থিতি সামাল দিতে নির্দেশিকা জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর।
শনিবার রাতে জারি করা সেই নির্দেশিকায় সংক্রমণ ঠেকাতে অভিভাবকদের বিশেষ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অ্যাডেনো ভাইরাস মোকাবিলায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদেরও বেশি কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, অ্যাডিনো ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য দফতরের অধিকর্তা। সেই বৈঠকে মূলত হাসপাতালগুলিতে অ্যাডিনো ভাইরাসের আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা ও তাদের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
শিশু চিকিৎসকেরা কোভিডের মতোই অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রামক জানিয়ে মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মেনে চলা সহ বিশেষ নির্দেশিকা জারি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেখানে শিশুদের বাবা-মায়ের উদ্দেশে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বিবৃতি দিয়ে অ্যাডিনো ভাইরাস মোকাবিলায় বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যে পাঁচ পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলি হল-
১) অসুস্থ শিশুকে স্কুলে পাঠাবেন না।
২) ভিড় জায়গা এড়িয়ে চলুন।
৩) বাস-ট্রেন-সহ ভিড় এলাকায় মাস্ক পরুন।
৪) নিজেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া নয়।
৫) জ্বর, মাথাব্যথা, সর্দি-কাশির উপসর্গ হলেই শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া জরুরি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্দেশেও ৩ নির্দেশ জারি করা হয়েছে। সেগুলি হল-
১) পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর, অক্সিজেনের জোগানে নজরদারির জন্য সিএমওএইচ, মেডিক্যাল কলেজগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
২) প্রয়োজনে শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
৩) পরিস্থিতির নিরিখে কলকাতার হাসপাতালগুলিতে অসুস্থ শিশুদের রেফার করতে হবে।
শুধু তাই নয়, কোভিডের ধাঁচে ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেস বা ইলি এবং শ্বাসকষ্টজনিত অসুখের ডেটা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়াও চালু করা হয়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালগুলিতে কত নতুন শিশু ভর্তি হচ্ছে, কতজনের মৃত্যু, নতুন-পুরোনো মিলিয়ে কতজন শিশু, চিকিৎসাধীন রয়েছে, পিকু, নিকু, সিসিইউ, এসএনসিইউয়ে কতজন রয়েছে, ভেন্টিলেটরে কতজন রয়েছে- সব তথ্য হাসপাতালগুলিকে জানানোর নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
অ্যাডেনো ভাইরাসে মূলত ১-১৪ বছরের বাচ্চারা আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে স্কুল থেকে শিশুদের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। ফলে স্কুলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সতর্কতা অবলম্বন জরুরি বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।
অন্যদিকে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মেনে চলা এবং স্যানিটাইজার ব্যবহারে জোর দিতে হবে।
আরও পড়ুন-শুধু অ্যাডেনো নয়, ভাইরাস ককটেলে কাবু কলকাতার শিশুরা, বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?