West Bengal State Universities: দীর্ঘদিন স্থায়ী উপাচার্য (Permanent Vice Chancellor) নেই রাজ্যের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে (State Universities)। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (CU), নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (NSOU), উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় (Uttarbanga University) ও দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয় (Dakshin Dinajpur University)। কোনও উপাচার্যই নেই MAKAUT-এ। যে কারণে অভিযোগ উঠেছে, ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক কাজ। ছ'মাস, এক বছরের দায়িত্বে আসছেন অস্থায়ী উপাচার্যেরা। মেয়াদ ফুরোলে পরের নিয়োগ পর্যন্ত ফের ফাঁকাই পড়ে থাকছে সেই স্থান।
গত ১০ এপ্রিল নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। যাতে বলা হয়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২-এ পূর্বতন উপাচার্য অধ্যাপক শুভঙ্কর সরকার অব্যাহতি নেন। এরপর অস্থায়ী উপাচার্য হয়ে আসেন অধ্যাপক ড. রঞ্জন চক্রবর্তী। কিন্তু তাঁর মেয়াদও শেষ হয়েছে গত ১৪ মার্চ, ২০২৩-এ। এরপর তিনি যাদবপুরের পদে ফিরে যান। এই মুহূর্তে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদ শূন্য। এছাড়াও, অস্থায়ী নিবন্ধকের পদে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক ড. অসিতরঞ্জন আইচ। তাঁর মেয়াদকাল ১ বছরের জন্য পুনর্নবীকরণ করা হয়েছে। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সচিব চলতি মাসেই অবসর গ্রহণ করতে চলেছেন, স্টাডি সেন্টার অধিকর্তার পদও ফাঁকা। এরকম বিভিন্ন কারণে প্রশাসনিক অচলাবস্থার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ হিউম্যানিটিজের ডিরেক্টর অধ্যাপক মননকুমার মণ্ডল এ বিষয়ে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, "বর্তমানে নেতাজি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি খুব সঙ্কটজনক। প্রশাসনিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। অস্থায়ী উপাচার্য ড. রঞ্জন চক্রবর্তী (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক) তিনি ফিরে গেছেন তাঁর পুরনো পদে। সমস্যার সূত্রপাত, যিনি ফিনান্স অফিসার, তিনি ডেপুটেশনে আছেন। এ মাসে তিনি অব্যাহতি নেবেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ লক্ষ শিক্ষার্থী এবং ১৬৪টি স্টাডি সেন্টার আছে, ৩৩টি কোর্স পড়ানো হয়। ১০০ জন শিক্ষক ও ৭৭ জন অশিক্ষক কর্মচারী আছেন। ফিনান্স অফিসার চলে গেলে তাদের বেতনের বিলে সই করবেন কে? আমরা এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ চেয়ে রাজ্য সরকারকে দুটি চিঠি দিয়েছি। তার উত্তর পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমিতির তরফে আমরা মনে করি, আচার্যের হস্তক্ষেপ করা উচিত। এই মুহূর্তে সেই মর্মেই আমরা হস্তক্ষেপ দাবি করছি। আমরা অবিলম্বে চাইছি অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ এবং অর্থনৈতিক-প্রশাসনিক অচলাবস্থা নিরসন হোক।"
অস্থায়ী উপাচার্য প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার (Educationist Dr. Pabitra Sarkar) বলেছেন, "বেআইনি নিয়োগ হয়েছিল বলে আদালতের নির্দেশে উপাচার্যদের চাকরি চলে গেল। এটি রাজ্যের শিক্ষা দফতরের ব্যর্থতা, তারা উপাচার্য নিয়োগ করতে পারছে না। আমার মনে হয় শাসক দল তাদের পছন্দের উপাচার্য খুঁজে পাচ্ছে না যারা দলের কথা শুনে চলবে। এক উপাচার্যের বিরুদ্ধে এমন লোক লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এমন অশান্তি তৈরি করা হচ্ছে, যাতে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই সরকার কোনও শিক্ষা চালিয়ে যেতেই আগ্রহী নয়। প্রাথমিক থেকে শুরু করে যে দুর্নীতি করেছে তাতে তারা আগ্রহী নয়। শুধু উপাচার্যই নয় প্রচুর পদ খালি পড়ে রয়েছে। সব জোড়াতালি দিয়ে চলছে।"
প্রসঙ্গত, এর মধ্যে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে গত ১৪ মার্চ একটি রায় ঘোষণা করে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। তাতে স্পষ্ট জানানো হয়, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগের ক্ষমতা নেই রাজ্যের। উপাচার্যদের শুধুমাত্র নিয়োগ করতে পারবেন আচার্য। পাশাপাশি, রাজ্যের নিয়োগ করা সকল উপাচার্যকে পদ থেকে খারিজ করার নির্দেশও দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
গত ২১ মার্চ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস দু'মাসের অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্রকে পুনর্নিযুক্ত করেন। তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর জানুয়ারি থেকে এই পদটি শূন্য ছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসাবে আশিস চট্টোপাধ্যায়ের মেয়াদও আরও এক মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এক মাস, দু'মাস, ছ'মাস করে এভাবে আর কতদিন টানাপোড়েন চলবে?