Advertisement

জ্যোতিবাবুকে ফোন করে গনিখান বললেন, 'আপনি আমার গাড়িতে কর্মসূচিতে যাবেন'

তত্‍ক্ষণাত্‍ কলকাতায় জ্যোতি বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন গনিখান। বলে দেন, 'কোনও চিন্তা করবেন না। আপনার জন্য আমার গাড়ি স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমার ড্রাইভার আপনাকে কর্মসূচিতে নিয়ে যাবে। দরকার হলে আপনি নিজেও ড্রাইভ করতে পারেন।'

এবিএ গনি খান চৌধুরী ও জ্যোতি বসু -- India Today Archive Image
অরিন্দম গুপ্ত
  • কলকাতা,
  • 08 Mar 2021,
  • अपडेटेड 2:08 PM IST
  • বরকত গনিখানের সঙ্গে জ্যোতি বসুর বন্ধুত্ব ছিল অটুট
  • গনিখানের গাড়িতেই কর্মসূচিতে গেলেন জ্যোতিবাবু
  • গনিখানের বোনের হাতের বিরিয়ানি প্রিয় ছিল জ্যোতি বসুর

বর্তমান দলবদলের বঙ্গ রাজনীতির সঙ্গে এ কাহিনি সত্যিই বেমানান!

এই তো সে দিন, জনসভা থেকে ফেরার পথে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে একই পথে দেখা হওয়ায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ও শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে খানিক বারুইপুরে চা সহযোগে খানিক কুশল বিনিময় হয়। গোটা রাজ্য রাজনীতি তুমুল জল্পনা শুরু হল, কুণাল ঘোষও কি তবে বিজেপি-র দিকে পা বাড়াচ্ছেন? তারপর কুণাল ঘোষ নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে জানালেন, তিনি তৃণমূল ছেড়ে কোথাও যাচ্ছেন না। 

এখন কুণাল ঘোষ বিজেপি-তে যাবেন কিনা, সেটা অন্য বিষয়। কিন্তু বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে কুশল বিনিময়েও দলবদলের গন্ধ পাওয়া, বাংলার রাজনীতিতে এক বিচিত্র প্রবণতা। 

আরও পড়ুন: কুণাল-বাবুল-শুভেন্দু হোটেলে 'সাক্ষাত্‍', কী বললেন কুণাল? 

এখন জোট হলেও, একটা সময় বামেদের চরম রাজনৈতিক শত্রু ছিল কংগ্রেস। মালদায় স্রেফ গনিখান চৌধুরীর জনপ্রিয়তায় বামেরা দাঁত ফোটাতে পারেনি কখনও। বাম-কংগ্রেসের লড়াইয়ের এক দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী ইতিহাসও রয়েছে। রাজনৈতিক হিংসা দেখেছে পশ্চিমবঙ্গ। তা সত্ত্বেও গনিখানের সঙ্গে জ্যোতি বসুর প্রগাঢ় বন্ধুত্বের এমন সব ঘটনা রয়েছে, বর্তমানে যা ঘটলে, নিশ্চিত জল্পনা শুরু হত, গনিখান কি সিপিআইএম যোগ দিচ্ছেন? নাকি জ্যোতি বসু কংগ্রেসে?

এবিএ গনি খান চৌধুরী - India Today Archive Image

বরকত ও জ্যোতি বসুর মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক ছিল, তার দু একটি নজির রইল। বিরোধী নেতার বক্তৃতার পরে সরকারি পক্ষের কটাক্ষের রেওয়াজ এখনও আছে, তখনও ছিল। জ্যোতি বসুর বক্তৃতার পরে কংগ্রেসের নেতারা নানা ভাবে কটাক্ষ করতেন। কিন্তু গনিখান বলতেন, 'ওঁর বক্তৃতায় যথেষ্ট সারবত্তা আছে, তাই আমি অত্যন্ত মন দিয়ে তা শুনি।'

Advertisement

ষাটের দশকের মাঝামাঝি জ্যোতি বসু জেল থেকে বেরিয়ে মালদা সফরে গিয়েছিলেন। মালদায় তখন সৌরীন মিশ্রের বেশ দাপট। তিনি ছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র সেন মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী। সৌরীন মিশ্র রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে ট্যাক্সিচালক, সবাই বলে রেখেছিলেন, 'চিনের দালাল' জ্যোতি বসুকে যেন কেউ না চাপায়। খবরটা কোতোয়ালি ভবনে পৌঁছয় গনিখানের কানে। তিনি তখন মালদা জেলা কংগ্রেসের নেতা। তত্‍ক্ষণাত্‍ কলকাতায় জ্যোতি বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন গনিখান। বলে দেন, 'কোনও চিন্তা করবেন না। আপনার জন্য আমার গাড়ি স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমার ড্রাইভার আপনাকে কর্মসূচিতে নিয়ে যাবে। দরকার হলে আপনি নিজেও ড্রাইভ করতে পারেন।'

জ্যোতি বসু -- India Today Archive Image

তা-ই হল। স্টেশন থেকে গনিখানের গাড়িতেই কর্মসূচিতে গেলেন জ্যোতিবাবু। দুদিনের মালদা সফরে তিনি কোতোয়ালি ভবনেই রাতে খাওয়া-দাওয়া সারলেন। সৌরীনরা ভাল ভাবে নেননি বিষয়টি। তাঁরা চিঠি দিলেন অতুল্য ঘোষকে নালিশ জানিয়ে। অতুল্য ঘোষ তা পাঠিয়ে দিলেন প্রফুল্ল সেনের কাছে।

প্রফুল্ল সেনের উত্তরটা ছিল, 'বরকত ঠিকই করেছেন। ওঁর পদোন্নতি হওয়া উচিত।' কংগ্রেসের ট্রেজারারের পদ পেলেন গনিখান। এ ঘটনা নিয়ে পরে গনিখান বলেছিলেন, 'বিরোধীদের সম্মান না-দেখালে গণতন্ত্র কার্যকর হয় না।' বরকত গনিখান কলকাতায় এলে মহাকরণে সকালে দেখা করতেন জ্যোতি বসুর সঙ্গে। রাতে জ্যোতি বসুর বাড়িতে। 

জ্যোতি বসু খেতে ভালবাসতেন। গনিখানের বোন রুবি নূর খুব ভাল বিরিয়ানি রাঁধতেন। জ্যোতি বসুর বাড়িতে সেই বিরিয়ানি যেত। মাঝে মাঝে জ্যোতি বসুও রুবি নূরের বাড়িতে গিয়ে বিরিয়ানি খেয়ে আসতেন। জ্যোতি বসু অবসর নেওয়ার পরেও এই সম্পর্ক অটুট ছিল।

মালদায় একবার গনিখান অসুস্থ হয়ে পড়েন। জ্যোতি বসু ফোনে খবর না নিয়ে সোজা কোতোয়ালি ভবনে চলে যান। জ্যোতি বসুকে দেখে গনিখান এক্কেবারে চাঙ্গা। দুই বন্ধু দেদার আড্ডা দিলেন। 

মালদহে সিপিআইএম নেতারা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন এই ঘটনায়। জ্যোতি বসু বলেছিলেন, 'আমার বয়েই গেছে।' 

ঋণ স্বীকার: গনি খান চৌধুরীর ডায়েরি 

কাজের মানুষ কাছের মানুষ, সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement