এরাজ্যে বিরোধীদের একসঙ্গে জগাই, মাঝাই আর গদাই বলে আগেও সম্বোধন করতে দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বুধবার বাঁকুড়ার জনসভাতেও সেই একই সমীকরণের কথা বললেন তৃণমূলনেত্রী। তবে এবারের জনসভায় কেবল বিজেপিকেই হাইলাইট করেননি তৃণমূলনেত্রী, সহযোগী হিসাবে আক্রমণ শানিয়েছেন সিপিএমের দিকেও। বাঁকুড়ায় সিপিএমের অত্যাচারের স্মৃতি সুচারু ভাবে মানুষের মধ্যে উস্কে দিতে চেয়েছেন। এদিন জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন লোভী আর ভোগীর তত্ত্বও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় এরাজ্যে সিপিএম লোভী আর বিজেপি ভোগী। নারদা, সারদার মত দুর্নীতি থেকে মুক্তি পেতে এখন সেই লোভীরাই ভোগীদের পায়ে গিয়ে পড়েছে। সিপিএমের দুষ্কৃতীরাই রং পাল্টে এখন গেরুয়া শিবিরের সিপাহী হয়েছে।
সিপিএম-কংগ্রেস ও বিজেপির আঁতাত নিয়ে সোচ্চার হলেও মমতার মূল আক্রমণের নিশানায় কিন্তু ছিল গেরুয়া শিবিরই। গত সোমবারই সরকারি সভায় অমিত শাহের আদিবাসী বাড়িতে ফাইভস্টার হোটেল থেকে খাবার এনে খাওয়ার কথা বলেছিলেন মমতা। এদিনও সেই একই অভিযোগ করতে শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। পাশাপাশি এরাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষকেও নাম না করে আক্রমণ করেছেন মমতা। ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই প্রায় প্রতিদিন তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন দিলীপ ঘোষ। এদিন যেন তৃণমূলনেত্রী তারই পাল্টা দিলেন। দিলীপ ঘোষের গোমূত্র পান ও গরুর দুধে সোনা নিয়ে কটাক্ষ করেন মমতা। তৃণমূলনেত্রীর নিশানা থেকে বাদ যাননি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। রাজ্যপালের নাম না করে তাঁর ট্যুইট করা নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন মমতা।
বাংলা জয় করতে রাজ্যে একের পর এক কেন্দ্রীয় নেতাকে পাঠাচ্ছে গেরুয়া শিবির। এই নেতাদের পরিচয় নিয়েও বাঁকুড়ার জনসভা থেকে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। ফের বহিরাগত তত্ত্ব তুলে বাংলায় অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন গেরুয়া শিবিরের দিকে। তৃণমূলনেত্রীর কথায় বিজেপি মিথ্যের ডাস্টবিন। ৩৬৫ দিন মানুষকে বোকা বানিয়ে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। পাশাপাশি রাজ্যে আলু,পেঁয়াজের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির দায়ে গেরুয়া শিবিরের দিকেই চাপিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। মঙ্গবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠকে বাংলার পাওনা নিয়ে মোদী কাছে নালিশ করেছিলেন মমতা। এদিনও মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন কেন্দ্র রাজ্য থেকে টাকা তুললেও প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করছে রাজ্যবাসীকে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে বাংলা জয় করতে ইতিমধ্যে ঝাঁপিয়েছে গেরুয়া শিবির। রাজ্যে এসে পৌঁছেছেন একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। রোজই বিজেপি নেতারা নিশানা করছে তৃণমূল সরকারকে। এই আবহে তাই আর চুপ বসে থাকতে রাজি নন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মহামারীর আবহে আগেই সভা, মেলা করার অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। এবার নিজেও সেই ময়দানে নেমে পড়লেন তৃণমূলনেত্রী। বিজেপি যতই এরাজ্যে পদ্ম ফোঁটানোর ছক কষুক না কেন বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও যে তিনি ছাড়বেন না বাঁকুড়ার জনসভা থেকে ফের তা স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূলনেত্রী।