Advertisement

শান্তনু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, '২৪-এর আগে রাজ্যে CAA লাগু লক্ষ্য?

এই প্রথম মতুয়া সম্প্রদায়ের কোনও প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন। এর আগেও অবশ্য ঠাকুর বাড়ি থেকে রাজ্যের মন্ত্রী সভায় গিয়েছিলেন শান্তনু ঠাকুরের ঠাকুরদা প্রমথরঞ্জন ঠাকুর ৷ মন্ত্রী হয়েছিলেন বিজেপি সাংসদের বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরও । কিন্তু তাঁরা কেউই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন না ৷ মতুয়াদের মনে হচ্ছে, তাঁদের দীর্ঘদিনের নাগরিকত্বের দাবি এবার শান্তনু ঠাকুরের হাত ধরে পূরণ হতে চলেছে। নাগরিকত্ব সহ মতুয়াদের ১১ দফা দাবি রয়েছে । যা নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন তাঁরা । সেইসব দাবিও এবার পূরণ হতে চলেছে বলে মনে হচ্ছে তাঁদের । তবে মতুয়াদের আশা পূরণ কতটা হবে, সেই বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের।

 শান্তনুকে মন্ত্রী করে মতুয়া ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা? শান্তনুকে মন্ত্রী করে মতুয়া ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা?
সুমনা সরকার
  • কলকাতা,
  • 15 Jul 2021,
  • अपडेटेड 11:19 PM IST
  • শান্তনুকে মন্ত্রী করে মতুয়া ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা
  • তবে মতুয়াদের আশা পূরণ কতটা হবে
  • সেই বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের

 বিধানসভা ভোটের আগে মতুয়া মন জয় করতে অনেক কিছুই করেছিল বিজেপি। এমনকি বিরোধীদের অভিযোগ, মতুয়া ভোটের লক্ষ্যেই বাংলাদেশে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের জন্মভিটেতে গিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মতুয়া ভোটারদের মন পেতে চেষ্টার কসুর করেনি তৃণমূলও।  এই টানাটানিতে মতুয়ারা শেষমেশ কার উপরে ভরসা রাখেন, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল রাজনৈতিক মহলেরও। ভোটের ফলে দেখা গেছে, গত লোকসভায় যে মতুয়া ভোটের সিংহভাগই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল ঘাসফুল শিবির থেকে, তার অনেকটা ফেরাতে পেরেছে তৃণমূল। তবে মতুয়া ভোটের বড় অংশ ধরে রেখে বহু আসনে টেক্কা দিয়েছে বিজেপি। মতুয়া ভোটের ভরসায় নদিয়ায় একাধিক আসন ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। তবে দু’বছর আগে লোকসভা ভোটের তুলনায় ব্যবধান কমেছে কিছুটা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়া জেলার দক্ষিণ প্রান্তের কয়েকটি আসনে জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে মতুয়া ভোটারদের। এবার সামনে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন। বাংলায় ভাল ফল করতে এই মতুয়া ভোট ধরে রাখতেই হবে তা ভালই জানেন মোদী-শাহরা। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে মতুয়াদের সিএএ-এর মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। একুশের ভোট প্রচার  সিএএ  নিয়ে সরগরম থাকলেও, রাজ্যে তার প্রয়োগ নিয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি। এই আবহে সম্প্রসারিত মোদী মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন মতুয়াদের প্রতিনিধি শান্তনু ঠাকুর। মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে নিঃসন্দেহে শান্তনুর মন্ত্রী হওয়া গর্বের বিষয়। কিন্তু যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মতুয়া ভোট ঘরে তুলেছেন শাহ-মোদীরা তার বাস্তবায়ন কি আগামী লোকসভা ভোটের আগে সম্ভব?

 

 

আরও পড়ুন

গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে মতুয়া সংগঠনের নেতা ও বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বেসুরো হয়ে গেছিলেন। নাগরিকত্বের প্রশ্নে তিনি বিশ্বাস রাখতে পারছিলেন না কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের ওপর।  জানা গিয়েছে, মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেসে প্রত্যাবর্তনের দিনই বনগাঁয় দিলীপ ঘোষের বৈঠকে ছিলেন না সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। আর তাতেই তুঙ্গে ওঠে চর্চা।  শান্তনু কি এবার বিজেপির হাতছাড়া হতে পারেন? তা নিয়ে জল্পনা চলতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে তাঁকে মন্ত্রী করে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল। এক, শান্তনুকে শান্ত করা হল। দুই, মতুয়াদের বার্তা দেওয়া হল কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের পাশেই আছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: 'ভুল করে BJP-তে গেলে চলে আসুন', এবার একুশেও সেই বার্তা?

বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর মন্ত্রী হতেই স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছসিত  মতুয়ারা। স্বাধীনতার পর থেকে এতবড় সম্মান আগে কখনও দেওয়া হয়নি। এমনটাই মনে করছেন মতুয়ারা।  এই প্রথম মতুয়া সম্প্রদায়ের কোনও প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন। এর আগেও অবশ্য ঠাকুর বাড়ি থেকে রাজ্যের মন্ত্রী সভায় গিয়েছিলেন শান্তনু ঠাকুরের ঠাকুরদা প্রমথরঞ্জন ঠাকুর ৷ মন্ত্রী হয়েছিলেন বিজেপি সাংসদের বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরও । কিন্তু তাঁরা কেউই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন না ৷ মতুয়াদের মনে হচ্ছে, তাঁদের দীর্ঘদিনের নাগরিকত্বের দাবি এবার শান্তনু ঠাকুরের হাত ধরে পূরণ হতে চলেছে। নাগরিকত্ব সহ মতুয়াদের ১১ দফা দাবি রয়েছে । যা নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন তাঁরা । সেইসব দাবিও এবার পূরণ হতে চলেছে বলে মনে হচ্ছে তাঁদের । তবে মতুয়াদের আশা পূরণ কতটা হবে, সেই বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের। 

আরও পড়ুন: গায়ক থেকে সোজা মন্ত্রী হয়েছিলেন, এবার কোন পথে বাবুল?

বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর পেয়েছেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাঁর হাতে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২১-এ বাংলায় ২০০ আসনের টার্গেট পূর্ণ হয়নি বিজেপির। সেই হার থেকে শিক্ষা নিয়েই ২০২৪-এ বঙ্গে লোকসভা ভোটের রণকৌশল ঠিক করার কাজ শুরু করেছে গেরুয়া শিবির।  আর তার অংশ হিসাবেই  আগামী ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে মতুয়াদের ভোট যাতে বিজেপিতেই থাকে  সেটা শান্তনুকে মন্ত্রী করে নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করলেন নরেন্দ্র মোদী। 

 

 

বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করা নিয়ে বেঁকে বসেছিলেন শান্তনু ঠাকুর। সেই সময় বনগাঁর সাংসদকে বোঝাতে  কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হয়েছিল। বনগাঁর সাংসদ সেই সময় এমনটাও বলেন যে, তাঁর কাছে আগে মতুয়াস্বার্থ, তারপর বিজেপি। ভোটর আগে স্বরূপনগরে গিয়ে অমিত শাহকে বলতে হয়েছিল, ‘মতুয়াদের যথাযোগ্য সম্মান দেবে বিজেপি। ৭০ বছর ধরে মতুয়া, নমঃশূদ্ররা নাগরিকত্ব পাননি। ২০১৮ সালে বলেছিলাম মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেবে বিজেপি। ২০১৯ সালে মতুয়া সমাজ বিজেপির ঝুলি ভরে দিয়েছিল। ২০২০ সালে সিএএ নিয়ে এসেছি। করোনার জন্য সিএএ পিছিয়ে গেছে।' তবে এরাজ্যে ভোট মিটলেও সিএএ-র প্রয়োগ নিয়ে এখনও কেন্দ্রের তরফে কিছু শোনা যায়নি। এর মাঝেই গত মে মাসের শেষে  দেশের ১৩টি জেলায় পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা করেছে কেন্দ্র।

আরও পড়ুন: BJP নয়, নিশানায় শুভেন্দু,সমস্যা কোথায় রাজীব-সৌমিত্রদের?

২০১৯-এ দেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাস হওয়ার পর উত্তাল হয়েছিল আসমুদ্রহিমাচল। এরপর আসামে নাগরিকত্ব তালিকায় বহু হিন্দুর নাম বাতিলে প্রশ্ন উঠেছিল সিএএ কার্যকরিতা নিয়ে। এরপর থেকেই স্থগিত হয়েছে এই প্রক্রিয়া। কিন্তু সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানান হয়েছে যে অ-মুসলিম শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু হচ্ছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এবং গুজরাত, রাজস্থান, ছত্তিসগড়, হরিয়ানা, পাঞ্জাবের মতো রাজ্যর ১৩ জেলায় বসবাসকারী হিন্দু, শিখ, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ভারতীয় নাগরিকত্বের আবেদন করার বিজ্ঞপ্তি গত মে মাসেই জারি করেছে কেন্দ্র। বিরোধীদের বক্তব্য, এ হল নরেন্দ্র মোদী সরকারের অসৎ ভাবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) প্রয়োগের কৌশল। কেন্দ্র পাল্টা যুক্তি সাজিয়েছে, ২০১৯ সালে ওই আইন পাশ হলেও তার নিয়মকানুন এখনও তৈরি হয়নি। কেন্দ্রের  নির্দেশিকায় ১৯৫৫ এবং ২০০৯ সালের আইন অনুযায়ী নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ২০১১, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে এ ভাবেই দীর্ঘ সময় ধরে এ দেশে ভিসায় থাকা অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্দেশ জারি হয়েছিল। এর মধ্যে নতুন কিছু নেই।

Advertisement

দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেই সংসদে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ করায় মোদী সরকার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মতুয়াদের যে স্বপ্ন দেখিয়ে ভোট পেয়েছিল বিজেপি তা কী আদৌ পূরণ করতে পারবে মোদী সরকার। এই নিয়ে সম্প্রতি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এই বাংলায় সিএএ কার্যকর করব। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইলে আমরা তাড়াতাড়ি বা দ্রুত সিএএ এই রাজ্যে কার্যকর করতে পারব। আর তা না হলে আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারের সুবিধামতো সময়ে এটি কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ অর্থাৎ বিজেপি রাজ্য সভাপতি বোঝাতে চাইছেন মতুয়াদের দীর্ঘদিনের দাবি মতো রাজ্যে সিএএ অবিলম্বে চালু করতে চায় কেন্দ্র। কিন্তু 'মুখ্যমন্ত্রী চাইলেই রাজ্যে সিএএ লাগু হবে'  সুকৌশলে  এটা বলে তৃণমূলনেত্রীর কোর্টেই বল ঠেলেছেন দিলীপ। 

এদিকে সিএএ নিয়ে  তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী আগেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। মমতা বলেছেন, এই রাজ্যে তিনি সিএএ কার্যকর করতে দেবেন না। তাঁর কথায়, "সবারই তো রয়েছে ভোটার পরিচয়পত্র, রেশন কার্ড, আধার কার্ড ইত্যাদি, তাই আবার কিসের প্রয়োজন নাগরিকত্বের পরিচয়পত্রের?"  বোঝাই যাচ্ছে  সিএএ নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির অবস্থান ভিন্ন মেরুতে। তাই রাজ্যে সহজেই সিএএ লাগু করা কেন্দ্রের গেরুয়া শিবিরের পক্ষে সম্ভব নয়। এদিকে  উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পাস করেছিল সিএএ।  রাজনৈতিক মহলের মতে, সিএএ কার্যকর করা হচ্ছে না দেখে মতুয়াদের মধ্যে এখনও ক্ষোভ রয়েছে। আর এই ক্ষোভ প্রশমিত করতেই বঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ সিএএ কেন কার্যকর করা যাচ্ছে না তার কারণ তুলে ধরেছেন। সিএএ কার্যকর না হওয়ার জন্য পরোক্ষভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের উপরই দায় চাপিয়েছেন তিনি। মতুয়া ভোট ধরে রাখতে ২০২৪ আগে বিজেপি এরাজ্যে সিএএ কার্যকর করতে পারে কিনা সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। নিজের সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করতে পারছেন না, এই অভিযোগে অতীতে কিন্তু রাজ্যের মন্ত্রিত্ব ছাড়তে দেখা গিয়েছিল শান্তনুর ঠাকুরদা ও বাবাকে। কেন্দ্রের থেকে  মতুয়াদের দীর্ঘদিনের দাবি তিনি আদায় করতে পারেন কিনা সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ শান্তনুর কাছেও। 

 

Read more!
Advertisement
Advertisement