বর্তমানে বঙ্গ রাজনীতির সবচেয়ে চর্চিত বিষয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পারস্পরিক সম্পর্ক। মনে করা হচ্ছে, বেশ কয়েক মাস ধরেই দুজনের মধ্যে মতপার্থক্য শুরু হয়েছে, যা তৃণমূলের অন্দরে রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।
দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অভিষেক
সম্প্রতি অস্থায়ীভাবে দলের সমস্ত আনুষ্ঠানিক পদের অবলুপ্ত ঘটিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে শুধু আনুষ্ঠানিক পদ রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে মাস্টার স্ট্রোক বলে মনে করছেন। কারণ তাতে একদিকে যেমন দলের অন্তর্কলহ বন্ধ হবে, তেমনই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ এবং ভবিষ্যৎ উভয়ই দলাদলি থেকে রক্ষা পাবে। ২০ সদস্যের জাতীয় কর্মসমিতি তৈরি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও রয়েছে। অভিষেক যে তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ, এই পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে মমতা সেই বার্তাই দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন ও পুরনোদের লড়াই নতুন নয়
তৃণমূল কংগ্রেসে এর আগেও নতুন ও পুরনো কর্মীদের মধ্যে সংঘাত দেখা দিয়েছে। এমনকি একসময় তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করেছিলেন। তবে তিনিও পরে অবস্থান পরিবর্তন করেন। তৃণমূল কংগ্রেসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে উত্তরাধিকারী হিসাবে আনা হয়েছিল এবং তার জন্য ২০১১ সালে তৃণমূল যুব তৈরি করা হয়, যা তৃণমূলের ছাত্র শাখার থেকে আলাদা ছিল। ২০২১-এ তৃণমূলের ব্যাপক বিজয়ের পর তাঁকে দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
প্রশান্ত কিশোরের আই-প্যাক নিয়ে বিতর্ক
আই প্যাকের পরামর্শ অনুযায়ী দলকে মজবুত করতে চেয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, যা আদতে নতুন এবং পুরনোদের সংঘাতে পরিণত হয়। অভিষেক যে বিষয়গুলি বদলাতে চেয়েছিলেন তারমধ্যে ২টি ক্ষেত্রে বিরোধের সৃষ্টি হয়। তিনি দলে এক ব্যক্তি এক পদ এবং একটি অবসরের বয়স লাগু করতে চেয়েছিলেন। এদিকে দলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ আঁচ করতে পেরে, তৃণমূল এবং I-PAC-এর মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই বলে ঘোষণা করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কীভাবে বাড়ল বিবাদ?
মূলত আসন্ন ১০৮ পুরসভার নির্বাচনে প্রার্থীপদ নিয়ে তৃণণূলের বড়িষ্ঠ নেতা ও অভিষেকের মধ্যে মতপার্থক্য শুরু হয়। সেখানে বহু পুরনো কর্মীদের পরিবর্তে নতুনদের নাম ছিল, যা রীতিমতো অসন্তোষের সৃষ্টি করে। যার জেরে দলকে নতুন প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেত হয়। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান করা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সি যে তালকা প্রকাশ করেছেন সেটিই চূড়ান্ত। এদিকে আবার দলের পাসওয়ার্ড অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে আই-প্যাকের বিরুদ্ধে। যদিও তা অস্বীকার করে আই-প্যাক। আর এই অভিযোগ-পালটা অভিযোগের মাঝেই জানা যায়, ওয়েবসাইটে যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়েছিল তা ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দের, যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদিত তালিকার চেয়ে অনেকটাই আলাদা।
মমতা বনাম অভিষেক
পিসি ও ভাইপোর মধ্যে মতভেদ অপ্রত্যাশিত নয়। এই বিবাদ নিরসনের দায়িত্ব উভয়েরই এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করা থেকে অভিষেককে আটকাতে পেরেছেন। এদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানেন যে তৃণমূল কংগ্রেস এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আধিপত্য রয়েছে। তিনি একজন আইকন, যাঁর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। একইসঙ্গে অভিষেক এও জানেন যে তাঁর ভবিষ্যত এবং বর্তমান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণেই। তৃণমূল কংগ্রেসের বড়িষ্ঠ নেতারাও বুঝতে পারছেন যে দলের নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত যাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরসূরি অভিষেকের হাতে। আবার এটাও ঠিক দলের সিনিয়রদের নিয়েও চলতে হবে অভিষেককে, যা তাঁকে শিখতে হবে বলেই মনে করছেন রানৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন - ইনি IPL-এর মিস্ট্রি গার্ল, কীভাবে Viral হয়েছিলেন জানেন?