বিশ্বভারতীর শুনানিতে উপস্থিত না থাকার ফলে অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১৯ এপ্রিল বেলা ১২টা নাগাদ ১৯৭১ সালের দখলদার উচ্ছেদ আইন অনুযায়ী ওই ‘পদক্ষেপ’ করা হবে— এই মর্মে অমর্ত্য সেনের আইনজীবীকে ইমেলে নোটিশ পাঠিয়েছেন বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রার। এবার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের নোটিশ দিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ১৫ দিনের মধ্যে প্রতীচী ছাড়ার কথা বলে, বুধবার রাতে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাতে সই আছে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতোর।
প্রসঙ্গত বিশ্বভারতীতে জমিজট বিতর্কে নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদ নোটিশ গত মার্চেই দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। নোটিসে ১৩ ডেসিমেল জমি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই নোটিশের আইনি যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরাসরি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে চিঠিও লিখেছিলেম অমর্ত্য সেন। আর তারই জবাবে এবার ১৫ দিনের মধ্যে প্রতীচী ছাড়তে বলে বুধবার নোটিশ দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
বুধবার রাতে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাতে সই রয়েছে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতোর। নোটিশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে প্রতীচী না ছাড়লে, প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করা হবে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে নোটিশে জানানো হয়েছে যে প্রতীচীর জমির লিজ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
প্রসঙ্গত, এর আগে ‘প্রতীচী’র গেটে উচ্ছেদের নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছিল, ১৯ এপ্রিল এই জমি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তবে তার আগে ১৭ এপ্রিল বিশ্বভারতীকে জবাবি চিঠি দিয়েছিলেন অমর্ত্য সেন। অমর্ত্য সেন চিঠিতে লিখেছিলেন, লিজের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত কেমন করে কেউ এই জমি দাবি করতে পারেন? অমর্ত্য সেন সেখানে আরও জানান, জুন মাসেই শান্তিনিকেতনে ফিরছেন তিনি। পাশাপাশি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জানান, ‘প্রতীচী’–র জমির আইনশৃঙ্খলা এবং শান্তিরক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক।
এর আগে গত মার্চে অমর্ত্য সেনকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে তাঁর শান্তিনিকেতনের প্রতীচীর বাড়িতে। নোটিশে বলা হয়েছিল, “অমর্ত্য সেন বিশ্বভারতীর মোট ১ দশমিক ৩৮ একর জমি ভোগ করছেন। এর মধ্যে আইনগতভাবে তাঁর জমির পরিমাণ ১ দশমিক ২৫ একর।” বাকি জমি তাঁকে ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নোটিশে এও বলা হয়েছে যে, শুনানিতে অমর্ত্য সেন বা তাঁর প্রতিনিধি কেউ গড় হাজির হলে একতরফা হিসাবে ঘোষণা করা হবে। পরবর্তীতে চলতি এপ্রিলে বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রারের তরফে একটি নোটিশ জারি করা হয়। যে নোটিশ পাঠানো হয় অমর্ত্য সেনের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তীকে। ওই নোটিশে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের দখলদার উচ্ছেদ আইন অনুযায়ী আগামী ১৯ এপ্রিল কঠোর সিদ্ধান্ত (অর্থাৎ উচ্ছেদ) নিতে চলেছেন কর্তৃপক্ষ। কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ গত মাসের ২৯ তারিখ অমর্ত্যকে শুনানির জন্য ডেকেছিলেন। কিন্তু তিনি উকিল মারফত সময় চেয়েছিলেন। আইন অনুযায়ী ৭ দিনের বেশি সময় দেওয়া যায় না। যতটা সম্ভব সময় দেওয়া হয়েছে। তাই আগামী ১৯ এপ্রিল ‘কড়া সিদ্ধান্ত’ নেওয়া হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। পাশাপাশি বলা হয়েছিল, ১৯ তারিখ অমর্ত্যের আইনজীবী উপস্থিত থাকতে পারবেন বা ইমেল মারফত কোনও কিছু জানানোর থাকলে তিনি তা জানাতে পারেন। এবার একেবারে প্রতীচীর জমির লিজ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।