পাকিস্তানের অবস্থার উন্নতির কোনও সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি মানুষের থালা থেকে রুটি উধাও করে দিয়েছে। বিদ্যুতের সংকটে দেশের প্রায় ৩০টি শহরের বাতি নিভে গেছে। মুদ্রাস্ফীতির তাপে পুড়তে থাকা পাকিস্তানের অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। দেশের কোষাগার খালি হয়ে যাচ্ছে এবং ঋণের বোঝা বাড়ছে। শ্রীলঙ্কায় যে অবস্থা হয়েছিল, ঠিক সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে দেশটি। প্রশ্ন উঠেছে, আর কী দেখবেন সে দেশের নাগরিকরা?
প্রথমেই বলা যাক সাধারণ জনগণের রুটির প্রতি আকুলতা সম্পর্কে। কোটিপতি নেতা, খেলোয়াড় ও শিল্পীদের ওই দেশের অর্থনীতি আজ সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে যাচ্ছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এতটাই কমে গেছে যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিও সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিত্যদিনের জিনিসের পাশাপাশি আটা, গ্যাস, পেট্রোল থেকে শুরু করে ওষুধের সংকটও গভীর হয়েছে পাকিস্তানে।
এদিকে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে। সোমবার থেকে দেশের একটি বড় অংশ অন্ধকারে ডুবে আছে। পাকিস্তানি সংবাদ ওয়েবসাইট 'দুনিয়া নিউজ' অনুযায়ী, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের ২২টি জেলায়, কোয়েটা, ইসলামাবাদ, লাহোর, মুলতান অঞ্চলের শহর এবং করাচির মতো অনেক জেলায় ব্যাপক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। সিন্ধু, খাইবার পাখতুনখাওয়া, পাঞ্জাব ও রাজধানীতে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে গেছে।
নিত্যদিনের জিনিসের পাশাপাশি আটা, গ্যাস, পেট্রোল থেকে শুরু করে ওষুধের সংকটও গভীর হয়েছে পাকিস্তানে।
এদিকে গমের সংকটে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। অতীতে গমের ঘাটতির কথা বলে আসা একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ইসলামাবাদে দৈনিক ২০ কেজির ৩৮ হাজার ব্যাগ গম ব্যবহার হত। এখন হচ্ছে ২১ হাজার ব্যাগ।
শহরের বাজার রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে, শপিংমল ও বিয়েবাড়ি রাত ১০টার মধ্যে বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ব্যবস্থার আওতায় দিনের আলোতে সব সরকারি দফতরের গুরুত্বপূর্ণ সভা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাকিস্তানে বিদ্যুতের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় প্রায় ৭০০০ মেগাওয়াট কম।
পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২৪-এর পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিছু মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানের মাত্র তিন সপ্তাহের মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাকি আছে। একই সময়ে মুদ্রাস্ফীতির হার (পাকিস্তান মুদ্রাস্ফীতি) ২৫ শতাংশের কাছাকাছি।
পাকিস্তানি সংবাদপত্র 'দ্য ডন'-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ন্যাশনাল ইলেকট্রিক পাওয়ার রেগুলেটরি অথরিটি করাচি শহরে বিদ্যুতের হার প্রতি ইউনিট ৩.৩০ টাকা বাড়িয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ভোক্তা শ্রেণির জন্য বিদ্যুতের হার ইউনিট প্রতি ১.৪৯ টাকা বাড়িয়ে ৩.৩০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ভোক্তা শ্রেণির জন্য বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ১.৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪.৪৬ টাকা করা হয়েছে। নতুন দর কার্যকর হওয়ার পর প্রতি ইউনিট ৪৩ টাকা দরে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন গ্রাহকরা।
দেশে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে জ্বালানি সংকট আরও গভীর হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারও বেশ কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।
এই ঘাটতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত বৈদ্যুতিক পাখা ও বাল্ব উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। সরকার বিশ্বাস করে যে এই পদক্ষেপগুলি শক্তি আমদানিতে প্রায় ২৭৩ মিলিয়ন ডলার বা ৬২ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি সাশ্রয় করবে। ঘাটতির পাশাপাশি বিদ্যুতের দামও বেড়েছে।