গত বছরের ৫ আগস্ট ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত করেছিল, তখন থেকেই পাকিস্তান মুসলিম দেশগুলির সংগঠন ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের দাবি করে আসছিল। যদিও ওআইসি পাকিস্তানের কথায় কান দেয়নি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ কুরেশি চলতি বছরের আগস্টে বলেছিলেন যে সৌদি আরব যদি তাদের কথায় কান না দেয় তবে তারা ওআইসি বাদে কাশ্মীরের বিষয়টি উত্থাপন করবে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলিকে। যদিও পাকিস্তান পরে বুঝতে পারে যে সৌদির বিরুদ্ধে এই কথা বলে ভুল করেছে তাঁরা। পরে কথা ফিরিয়ে নিতে চাইলেও ততক্ষণে বিষয়টি হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল।
ওআইসি হল- অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশন। ৪৭ তম ওআইসির বৈঠক হয় নিয়ামে। যার নাম মহাত্মা গান্ধী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র এবং এটি ভারত নিজেই তৈরি করেছিল। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত হওয়ার পরে এটিই প্রথম সভা ছিল এবং পাকিস্তান মনে করেছিল যে কাশ্মীরের বিষয়টি নিয়ে ভারতকে এখানে তাঁরা দেখবে, তবে তা হয়নি। ওআইসি জানায় ইউএনএসসি রেজোলিউশন অনুসারে কাশ্মীর বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় তাঁরা।
এই বৈঠকে পাকিস্তান চেয়েছিল কাশ্মীরকে আলাদা এজেন্ডা হিসেবে তুলে ধরতে কিন্তু তা হয়নি। পাকিস্তান অবশ্য ঘোষণাপত্রে কাশ্মীর নাম থাকাতেই খুশি। যদিও এই বিষয়টি নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে ভারত। আরও বলা হয়েছে যে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করার কোনও অধিকার নেই ওআইইসির।
গত বছরের মার্চ মাসে আবুধাবিতে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই বৈঠকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে তৎকালীন ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকেও ডেকেছিলেন। যদিও পাকিস্তান সুষমা স্বরাজকে তলব করার বিরোধিতা করেছিল এবং উদ্বোধন অনুষ্ঠান বয়কট করেছিল।
সেই বছরের বৈঠকের রেজিলিউশনে কাশ্মীরের কোনও উল্লেখ ছিল না। তবে এবার সেটি উল্লেখ করা হয়েছে। এবারে পাকিস্তান সেটিকেই তাঁদের বিজয় হিসেবে দেখছে। পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক টুইট করেছে, "নিয়ামে ঘোষণাপত্রে জম্মু ও কাশ্মীর বিরোধের অন্তর্ভুক্তি ইঙ্গিত দেয় যে ওআইসি সর্বদা কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে।"
বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকের পর যে প্রস্তাব আসে সেখানে কাশ্মীরের উল্লেখ কোনও নতুন বিষয় নয়। এর আগেও উল্লেখ করা হয়েছে। এবার সেই প্রস্তাবকে বলা হচ্ছে নিয়াম ঘোষণা। এর চারটি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে ওআইসি চায় যে জম্মু ও কাশ্মীরের বিরোধ সমাধানের জন্য রাষ্ট্রসংঘের সুরক্ষা কাউন্সিলের প্রস্তাব অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ হোক এবং এটি সবসময় তা মেনে চলা হোক।
ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আব্দুল বাসিত টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে নিয়ামে ঘোষণা সম্পর্কে অনেক কিছুই বলেছেন। তিনি বলেন, "৫ আগস্টের পরে ওআইসির বিদেশমন্ত্রীদের প্রথম বৈঠক ছিল এবং আমরা আশা করেছি যে ভারত সম্পর্কে কিছু দৃঢ় বক্তব্য জারি করা হবে। আমরা ভেবেছিলাম যে ভারতের সিদ্ধান্তের নিন্দা করা হবে তবে তা হয়নি।"
ভারতে অবস্থিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত এও বলেন, "নাইজারের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই এই সম্মেলনটিতে কেবল ভারতের সহায়তা করা হল। ভারতের ৩৭০ ধারা রদের বিষয়টি নিয়ে কোনও উল্লেখ করা হল না।"
প্রসঙ্গত, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এই কমিটিতে আধিপত্য বিস্তার করে। ভয় দেশের সাথেই পাকিস্তানের খারাপ সম্পর্ক রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহী সাময়িকভাবে পাকিস্তানীদের নতুন ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সৌদি ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর সম্পর্ক ক্রমাগতই শক্ত হচ্ছে। তাই এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পক্ষে কাশ্মীরকে সমর্থন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।