দাবানল বা জঙ্গলের আগুন যে কী ক্ষতি করতে পারে, তা বোধ হয় কারও জানা নেই। শুধু কিছু জিনিস জ্বলে যাওয়া নয়, শুধু কয়েকটি গাছ-প্রাণী মারা যাওয়া নয়। আরও বেশি ক্ষতি করে তা। অনেক সময় আমাদের ধারণাও থাকে না কী মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়।
এই ক্ষতি যে অপূরণীয়। যা জানা যাচ্ছে, তাতে শিউরে উঠছেন বিজ্ঞানীরা। বলা যেতে পারে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে।
জঙ্গলের আগুন নতুন কোনও ব্যাপার নয়। তবে এটা প্রাকৃতিক ঘটনা। তবে অনেক সময় অভিযোগ ওঠে দুষ্কৃতীরা বনে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকে। আর এমনই ঘটনা মানে দাবানল বা বনের আগুন-ধোঁয়ার ফলে লালমুখো বাঁদরের গর্ভধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। বেড়ে গিয়েছে গর্ভপাতের সংখ্যাও। এমনই ভয়াবহ ছবি ধরা পড়েছে।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ায় রয়েছে প্রাইমেট রিসার্চ সেন্টার। সেখানকার বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, জঙ্গলে আগুন লেগে যাওয়ার ফলে বাঁদরের শরীরে বদল এসেছে। এমনই লক্ষ্য করা গিয়েছে। আর তার ফরে তাদের প্রজনন ক্ষতমা কমে গিয়েছে। গর্ভপাতও বেড়ে যাচ্ছে। ওই গবেষণা রিপ্রোডাক্টিভ ট্যাক্সিকোলজি নামে প্রকাশিত হয়েছে।
সেটা ২০১৮ সালের নভেম্বরের ঘটনা। ক্যালিফোর্নিয়ার বনে আগুন লেগেছিল। আর সে কারণে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা ঢেকে গিয়েছিল ধোঁয়ায়। প্রবল দূষণ ছড়িয়েছিলে সেখানে। এয়ার কোয়ালিটি খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
সেখানে শ্বাস-প্রশ্বাস চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছিল। আর সে সময় তাদের তাদের প্রজনননের সময় ছিল। ফলে হয়েছে মারাত্মক।
ওই সময়ের ১৬৬ দিন পর শাবকের জন্ম দেয়। বিজ্ঞানীরা ৬৬টি বাঁদর বেছে নিয়েছিল। তাদের গর্ভধারণ ক্ষমতা নিয়ে গত ৯ বছরের তুলনামূলক কাজ করা হচ্ছিল। ৬৬টির মধ্যে ৪৫টি বাঁদর ওই সময় গর্ভবতী হয়েছিল। মানে যখন দূষণের হারল খুব বেশি ছিল। ২০টি বাঁদর বায়ু দূষণ কিছুটা কম হওয়ার পর গর্ভবতী হয়েছিল। একটি বাঁদর গর্ভধারণ করতে পারেনি।
৪৫টির মধ্য়ে ৩৭টি বাঁদর আগুন এবং ধোঁয়ার মোকাবিলা করেছিল। তাদের প্রসবের হার ৮২ শতাংশ। আর যখন দূষণ কম হয়েছিল তখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৮৬ থেকে ৯৩ শতাংশ। ২০টি বাঁদর স্বাভাবিক পরিবেশে গর্ভধারণ করেছিল। তাদের প্রসব নির্দিষ্ট সময়ে হয়েছিল।
বিজ্ঞানী ব্রিন উইলসন জানান, ২০১৮-১৯ সালে ওই বাঁদরের গর্ভপাতের সংখ্যা বেড়েছে। এর আগের ৯ বছরে সেই সংখ্যা অনেক কম ছিল।