বড়সড় প্রলয়ের মুখে বিশ্বের একাধিক দেশ। রাশিয়ার দূর প্রাচ্যে আজ অর্থাত্ বুধবার যে ভূমিকম্পটি হল, তাকে বলা হচ্ছে মনস্টার।
রিখটার স্কেলে ৮.৮ মাত্রা অতিশক্তিশালী কম্পন। যার জেরে জাপান, আমেরিকা সহ একাধিক দেশে সুনামির সতর্কতা। ইতিমধ্যেই জাপানের ১৬টি উপকূলে সুনামির ঢেউ আছড়ে পড়তে শুরু করেছে।
এদিন ভূমিকম্পে রাশিয়ার কামচাটকা পেনিনসুলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুত্ নেই। বহু বাড়ি ভেঙে পড়েছে। মস্কোর তরফে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছিল পেট্রোপাভলোভস্ক-কামচাটস্কি শহর থেকে ১২৫ কিমি দূরে, সমুদ্রতলে ১৯.৩ কিমি গভীরে। এই শহরের জনসংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৬৫ হাজার।
ভূমিকম্পের পরপরই রাশিয়ার উপকূলীয় এলাকায় ৩ থেকে ৪ মিটার উচ্চতার ঢেউ দেখা যায়। জাপানের হোক্কাইডো উপকূলেও আছড়ে পড়ে ছোট ছোট সুনামি। জাপানের ইশিনোমাকি বন্দরে ৫০ সেমি ঢেউ রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও আরও ১৬টি স্থানে ঢেউ রেকর্ড হয়েছে ৪০ সেমি পর্যন্ত।
US Tsunami Warning System জানায়, রাশিয়া ও হাওয়াইয়ের উপকূলে ১০ ফুট পর্যন্ত ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। ফিলিপিন্স, পালাউ, মার্শাল আইল্যান্ডস, কোরিয়া, তাইওয়ান-সহ বহু অঞ্চলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
ভূমিকম্পের এক ঘণ্টা পরেই ৬.৯ মাত্রার একটি আফটারশক আঘাত হানে, আরও ১৪৭ কিমি দূরে। এতে বাড়ে আশঙ্কা। রাশিয়ার গভর্নর ভ্লাদিমির সোলোদভ জানিয়েছেন, একটি কিণ্ডারগার্টেন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও বড় হতাহতের খবর নেই।
সেভেরো-কুরিলস্ক শহরে দ্রুত বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা একটি জরুরি বৈঠক করে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেছেন।
টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (টিইপিসিও) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফুকুশিমা দাইচি এবং ফুকুশিমা দাইনি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে উঁচু এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। টিইপিসিও জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র দু'টিতে কোনও ধরনের আঘাত বা অস্বাভাবিকতার ঘটনা ঘটেনি। তবে তারা সুনামি সতর্কতা পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখবে।
রাশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর ইতোমধ্যে তিনটি সুনামি ঢেউ আঘাত করেছে সেভেরো-কুরিলস্ক বন্দর এলাকায়। সুনামির শেষ ঢেউটি বন্দরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং নোঙর করা কয়েকটি জাহাজকে প্রণালীর দিকে টেনে নিয়ে যায়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা টিএএসএস জানিয়েছে, সুনামির তৃতীয় ঢেউটি ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। সুনামির ঢেউয়ে শহরের কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে এবং স্থানীয় বাসিন্দারা আত্মরক্ষার্থে একটি পাহাড়ের ওপর জড়ো হয়েছেন । সেভেরো-কুরিলস্ক অঞ্চলে প্রায় দুই হাজার মানুষ বসবাস করে। সুনামির প্রভাব না কাটা পর্যন্ত তাঁরা সেখানেই অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছে টিএএসএস।