অর্থনৈতিক সঙ্কট তো ছিলই। এবার বিক্ষোভে রীতিমতো অগ্নিগর্ভ শ্রীলঙ্কা। বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রাজাপক্ষে। সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। জনরোষে মৃত্যু হয়েছে শাসক দলের সাংসদেরও। কয়েকজন বিক্ষোভকারীর প্রাণ গিয়েছে। জখম হয়েছেন ১৫০-র কাছাকাছি মানুষ।
মাস কয়েক ধরে শ্রীলঙ্কায় সঙ্কট শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা। বিভিন্ন দেশের কাছে ঋণে জর্জরিত দ্বীপরাষ্ট্র 'অর্থনৈতিক ভাবে দেউলিয়া' ঘোষণা করে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের ইস্তফার দাবি উঠেছিল। সোমবার পদত্যাগ করেন মাহিন্দা। সাধারণ মানুষের কাছে সংযমের আবেদনও করেন।
কিন্তু রাজাপক্ষের আবেদনের সাড়া দেননি তাঁর সমর্থকরাই। সোমবার বিকেলে মাহিন্দা রাজাপক্ষের ইস্তফার পর তাঁর সমর্থকরা রাস্তায় নেমে পড়েন। কলম্বোয় বিক্ষোভরত জনতার উপর তাঁরা চড়াও হন। শুরু হয় দু'পক্ষের হাতাহাতি।
গণরোষে আত্মহত্যা শাসক দলের সাংসদ আত্মহত্যা করেছেন। সোমবার নিতাম্বুওয়ায় অমরকীর্তি আতুকোহালা গাড়ি ঘিরে ধরেন বিক্ষোভকারীরা। জনতাকে ভয় দেখাতে ব্যক্তিগত বন্দুক থেকে গুলি চালান আতুকোহালা। তাতে ভিড় আরও নিয়ন্ত্রণ হারায়। ভয়ে কাছের একটি বহুতলে লুকিয়ে পড়েন সাংসদ। সেখানে তিনি নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর। মৃতদের পাওয়া গিয়েছে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরও। সাংসদের গুলিতে ২৭ বছরের এক যুবকেরও মৃত্যু হয়েছে।
জনরোষের শিকার হন শাসকদলের আর এক সাংসদ সনৎ নিশান্ত। মাউন্ট লাফিনিয়ায় দেশের প্রাক্তন মন্ত্রী জনসন ফার্নান্ডোর বাড়ি জ্বালিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর মাহিন্দা রাজাপক্ষের পৈতৃক বাড়িতেও আগুন লাগানো হয়।
শুধু তাই নয় মাহিন্দা রাজাপক্ষের সরকারি আবাসনেও হামলা চালান বিক্ষোভারীরা। মূল দরজা ভেঙে দেওয়া হয়। তার পর একটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সরকারি আবাসন থেকে বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানো হয়েছে বলেও দাবি। পরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস।
মাহিন্দা রাজাপক্ষে এবং তাঁর সহকারীদের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয় সেনা।
শ্রীলঙ্কাবাসীদের হিংসা ছেড়ে সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজার পরামর্শ দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শাসক-বিরোধী মিলে সরকার গঠনের ডাক দিয়ে বিবৃতি জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট। অহিংসাই একমাত্র পথ বলে টুইট করেছেন বিরোধী দলনেতা সাজিথ প্রেমদাসা।
স্বাধীনতার পর থেকে এমন দুর্দিন দেখেনি দ্বীপরাষ্ট্র। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া। পেট্রোল-ডিজেলের হাহাকার। সবমিলিয়ে শ্রীলঙ্কায় চলছে চরম আর্থিক দুর্গতি। কোভিড লকডাউনের জেরে মার খেয়েছে দেশের আয়ের পথও। বিদেশ পর্যটকরা না আসায় টানা ধাক্কা খেয়েছে পর্যটন ব্যবসা। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে শাসক-বিরোধী সংঘর্ষ।