২৮৬ দিন মহাকাশে কাটিয়ে অবশেষে পৃথিবীতে ফিরলেন NASA-র মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়মস ও বুচ উইলমোর।
ভারতীয় সময় আজ অর্থাত্ বুধবার ভোর ৩টে ২৭ মিনিটে ফ্লোরিডা উপকূলে সুনীতাদের নিয়ে সমুদ্রে নামে স্পেস এক্স-এর ক্রু ড্রাগন।
২৮৬ দিন মহাকাশে কাটিয়ে, ৪৫৭৭ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে এবং ১৯৫.২ মিলিয়ন কিলোমিটার পথ পেরিয়ে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরেছেন নাসার মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস।
তিনি ও তার সহকর্মী বুচ উইলমোর মূলত আট দিনের জন্য মহাকাশে গিয়েছিলেন, কিন্তু বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে তাঁদের পুরো ৯ মাস মহাশূন্যে কাটাতে হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে সুনীতা উইলিয়ামস ও তাঁর ক্রু স্পেস এক্স ড্রাগন মহাকাশযানে করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS) থেকে যাত্রা শুরু করেন।
১৭ ঘণ্টার দীর্ঘ এই যাত্রা অত্যন্ত কঠিন ছিল, বিশেষ করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময়, যখন প্রচণ্ড ঘর্ষণের ফলে মহাকাশযানের বাইরের অংশ আগুনের গোলার মতো হয়ে ওঠে।
নাসা ও স্পেসএক্সের নিয়ন্ত্রণকক্ষের নজরদারিতে ড্রাগন সফলভাবে পুনঃপ্রবেশ সম্পন্ন করে এবং আটলান্টিক মহাসাগরে মসৃণভাবে অবতরণ করে।
উদ্ধারকারী জাহাজ তাঁদের উদ্ধার করে, যা এই দীর্ঘ যাত্রার এক স্মরণীয় সমাপ্তি ঘটায়।
দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার ফলে শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। মহাকাশে অভিকর্ষবল ছাড়াই থাকায় শরীরের তরল ওপরে উঠে যায়, ফলে মুখ ফোলা দেখায় এবং পায়ের পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে।
পৃথিবীতে ফিরে এলে এই পরিবর্তনগুলির কারণে শারীরিক দুর্বলতা, মাথা ঘোরা ও হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরের এখন দীর্ঘ পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
সুনীতার প্রত্যাবর্তনের আগে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর প্রতি একটি ব্যক্তিগত বার্তা পাঠান।
তিনি লেখেন, 'যদিও তুমি হাজারো মাইল দূরে, তবু তুমি আমাদের হৃদয়ের কাছাকাছি।'
প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং তাঁর সুস্বাস্থ্যের জন্য শুভকামনা জানান।
এই মিশন আবারও দেখিয়ে দিল যে বোয়িংয়ের স্টারলাইনার প্রকল্প এখনও প্রযুক্তিগত সমস্যায় জর্জরিত, যেখানে স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্যাপসুল ১০০% সফলতা বজায় রেখেছে।
বোয়িংয়ের স্টারলাইনার এখনও পর্যন্ত একমাত্র মহাকাশযান যা মানুষ নিয়ে গিয়েও শূন্য হাতে ফিরে এসেছে, যা কোম্পানির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
এই মিশনের পর স্পেসএক্স এখন Axiom-4 মিশনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, যেখানে ভারতীয় বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা প্রথম ভারতীয় হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাচ্ছেন।
১৪ দিনের এই মিশন ভারতের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে, প্রায় ৫০ বছর পর রাকেশ শর্মার ঐতিহাসিক মহাকাশ যাত্রার পর ভারত আবার মহাকাশে পদচিহ্ন রাখতে চলেছে।
এই মিশন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে, যা ভবিষ্যতে ভারতকে মহাকাশ গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়ার পথে আরও একধাপ এগিয়ে দেবে।
কবে ভারতে আসবেন সুনীতা? এব্যাপারে সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে তাঁর ভ্রাতৃবধূ ফাল্গুনী পাণ্ডিয়া বলছেন, 'একদম সঠিক কোনও তারিখ বলতে পারছি না। তবে এটা নিশ্চিত, অতি শিগগিরিই ও ভারতে আসবে। এই বছরের মধ্যেই।' ফাল্গুনী বলছেন, 'আমরা একসঙ্গে ছুটি কাটাতে যাওয়ারও পরিকল্পনা করে রেখেছি। সবাই মিলে একসঙ্গে সময় কাটাতে মুখিয়ে রয়েছি সকলে।'