আমেরিকার (USA) আকাশসীমায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে চিনের সন্দেহভাজন স্পাই বেলুন (Chinese Spy Balloon)। এই স্পাই বেলুনটিকে আমেরিকার মন্টানা (Montana)-সহ অনেক স্পর্শকাতর স্থানের উপর দিয়ে উড়তে দেখা গিয়েছে। চিনের এই পদক্ষেপ সামনে আসার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে, যার জেরে মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন (US Secretary of State Antony Blinken) তাঁর চিন সফর বাতিল করেছেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রক পেন্টাগনের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার বলেছেন যে এই গুপ্তচর বেলুনটি মধ্য আমেরিকার উপরে দেখা যায়। তবে তিনি এই বেলুনের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দিতে অস্বীকার করেন। পেন্টাগন বলেছে যে মার্কিন আকাশে দেখা এই গুপ্তচর বেলুন তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে এবং এখন মধ্য আমেরিকার পূর্ব দিকে এটিকে দেখা যাবে।
তিনটি বাসের মতো বড় স্পাই বেলুন
তিনি বলেন, নর্থ আমেরিকান অ্যারোস্পেস ডিফেন্স কমান্ড (NORAD) প্রতিনিয়ত এই স্পাই বেলুনটির উপর নজরদারি করছে। এই বেলুনটি মন্টানার উপরে দেখা গিয়েছে এবং এর আকার তিনটি বাসের মতো। রাইডার অবশ্য বলেছেন, এই স্পাই বেলুন থেকে মানুষের কোনও বিপদ নেই।
আমেরিকা গত কয়েকদিন ধরে তাদের আকাশসীমায় ভেসে বেড়ানো এই বেলুনটির উপর নজর রাখছে। আমেরিকান সামরিক বিমানের মাধ্যমেও এটি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কিছু ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এই বেলুনটি শুট ডাউন এড়াতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কারণ এটি ধ্বংস হয়ে গেলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিপন্ন হতে পারে। একজন মার্কিন সিনিয়র প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, এটা পরিষ্কার যে এই বেলুন গুপ্তচরবৃত্তির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত বছর থেকে তাইওয়ান ইস্যুতে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি চীন এবং আমেরিকার মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। প্রকৃতপক্ষে, তাইওয়ানে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিংয়ের সামরিক তৎপরতার নিন্দা করে আসছে আমেরিকা।
আমেরিকার মন্টানা আসলে একটি কম জনবহুল এলাকা। আমেরিকান বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ ঘাঁটিও রয়েছে, যেখান থেকে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, আমেরিকায় মাত্র তিনটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষেত্র রয়েছে, যার মধ্যে একটি মন্টানা। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, চিনের এই গুপ্তচর বেলুনটি এসব স্পর্শকাতর স্থানের তথ্য সংগ্রহে ব্যস্ত।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আমেরিকাতে গুপ্তচর বেলুন বহুবার দেখা গেছে। তবে এবার এই সন্দেহভাজন চিনা গুপ্তচর বেলুনটি দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার আকাশসীমায় দৃশ্যমান হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে। আমেরিকার অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়ে চিন জোরালোভাবে আমেরিকার গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন যে আমরা বর্তমানে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করছি। অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব ও আকাশসীমা লঙ্ঘন করার কোনও ইচ্ছা চিনের নেই। আমরা আশা করি যে উভয় পক্ষই শান্তভাবে এবং সাবধানতার সঙ্গে এই সমস্যাটি মেটাবে। তিনি আরও বলেন, চিন একটি দায়িত্বশীল দেশ এবং এটি সর্বদা আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে। কোনও সার্বভৌম দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করার কোনো ইচ্ছা চিনের নেই।
পরে চিনের বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি জারি করে বলেছে যে এই বেলুনটি আসলে একটি বেসামরিক এয়ারশিপ, যার কারণে কারও ক্ষতি হবে না। এই বেলুনের কাজ আবহাওয়া সংক্রান্ত গবেষণার সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রবল বাতাসের কারণে এটি তার নির্ধারিত পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে দূরে চলে যায়।
লাতিন আমেরিকায় দেখা গেল দ্বিতীয় চিনা গুপ্তচর বেলুন
আমেরিকার পর এবার লাতিন আমেরিকায় দেখা গেল স্পাই বেলুন। পেন্টাগন জানিয়েছে যে তারা একটি বেলুন লাতিন আমেরিকায় উড়তে দেখেছে। পেন্টাগন প্রেস সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'আমরা আরেকটি চিনা বেলুলের উপস্থিতি খতিয়ে দেখছি।' সিএনএন জানিয়েছে, নতুন আবিষ্কৃত বেলুনটি কোন অঞ্চলে ঘুরছে তা স্পষ্ট নয়। তবে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।