ভারতের কৃষক আন্দোলন এখন গোটা বিশ্বের নজরে। কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ট্যুইট করছেন আন্তর্জাতিক তারকারা। গত দু'মাস ধরে চলা এই কৃষক আন্দোলন এখন ক্রমেই মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠছে মোদী সরকারের। বুধবারই কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে ট্যুইট করেছিলেন সুইডিশ পরিবেশবিদ গ্রেটা থানবার্গ। যেখানে আন্দোলনের প্রতি নিজের সহানুভূতি জানিয়ে ছিলেন গ্রেটা। কিন্তু সেই ট্যুইট করেই এবার বিপাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত গ্রেটা। তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই তরুণ পরিবেশ আন্দোলন কর্মী মঙ্গলবার রাতে নিজের টুইটার হ্যান্ডল থেকে শেয়ার করেছেন একটি খবরের লিঙ্ক। সিএনএন-এর সেই লিঙ্ক শেয়ার করে ভারতে আন্দোলনরত কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন গ্রেটা। গ্রেটার আগে ওই একই লিঙ্ক শেয়ার করে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছিলেন আমেরিকার পপস্টার রিহানাও। সেই ট্যুইটের কারণেই গ্রেটার বিরুদ্ধে ১৫৩ এ ধারা (ধর্ম, বর্ণের ভিত্তিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা প্রচার করা) এবং ১২০ বি ধারা (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) মামলা দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ।
তবে বেমক্কা একটি ট্যুইট করে বিপাকে পড়তে হল সুইডেনের পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে। কীভাবে চাষী আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সেই সম্পর্কিত টুইট করেন তিনি। একটি টুলকিট অর্থাৎ একটি গুগল ডকুমেন্ট শেয়ার করেন তিনি। সেখানে লেখা ছিল ভারতের যে ইমেজ আছে বিশ্বে চা ও যোগের জন্য়, সেটাকে বদলাতে হবে। বিভিন্ন ভারতীয় শিল্পপতিদের ব্যবসা টার্গেট করার কথা বলা হয়। এমনকী কৃষি আইন যদি প্রত্যাহার হয়, তাহলেও লড়াই থামবে না, যুদ্ধ সবে শুরু হয়েছে, সেই কথা বলা হয়। এর জেরেই বিতর্ক শুরু হয়। পরে এই টুইটটি ডিলিট করে দেন। সেই নথির অ্যাকসেসও সরিয়ে নেওয়া হয়। যদিও স্ক্রিনশট নিয়ে রেখেছিলেন অনেকে।
পরে একটি পরিবর্তিত টুলকিট টুইট করেন তিনি। সাফাই দেন যে আগের টুলকিটটি প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। কিন্তু তারমধ্যেই রীতিমত হই হট্টগোল শুরু হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। শাসক দলের অনেক সমর্থকরা দাবি করেন যে এই নথি থেকে স্পষ্ট, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে ভারতের বিরুদ্ধে। যদি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্যেই এই নথি হয়, তাহলে কেন কৃষি আইনগুলি কৃষকদের জন্য কেন খারাপ, সেই সংক্রান্ত বিস্তারিত লেখা নেই সেটা নিয়েও প্রশ্ন করেন অনেকে। এটি প্রোপাগান্ডার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ২ মাস ধরে লাগাতার চলা কৃষক আন্দোলন ঘিরে ইতিমধ্যেই বিব্রত মোদী সরকার। আন্দোলনরত কৃষকদের জন্য বিশ্বখ্যাত পপস্টার রিহানা, কিশোরী পরিবেশবিদ গ্রেটা থুনবার্গ এবং প্রাক্তন পর্নস্টার মিয়া খলিফার ট্যুইট কেন্দ্রের ওপর চাপ আরও বাড়াচ্ছে । এই অবস্থায় বুধবার পাল্টা তোপ দেগেছে বিদেশমন্ত্রক। বুধবার মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী নিজেদের অ্যাজেন্ডা চালানোর জন্য এই ধরনের আন্দোলনগুলিকে ইন্ধন দিচ্ছে। ভারতীয় সরকারের তরফ থেকে বলা হয় যে না জেনে শুনে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে বলা হয়। গ্রেটাদের বিরুদ্ধে পাল্টা ট্যুইটারে সরব হন অক্ষয় কুমার , কঙ্গনা রানাউত, অজয় দেবগণের মত তারকারা।
তবে আন্দোলনের একেবারে প্রথম লগ্ন থেকেই কৃষক বিক্ষোভ কিন্তু বিশ্ব জুড়ে বিশিষ্ট মানুষের সমর্থন পেয়ে আসছে। শুরু হয়েছিল কানাডার প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডোকে দিয়ে।মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসেরআত্মীয়া তথা লেখক মীনাও কৃষক বিক্ষোভের প্রতি তাঁর সমর্থন জানিয়েছেন। এদিকে কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানান গ্রেটাকে এবার নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্যতম মুখ ১৮ বছর বয়সী সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। বিশ্বজুড়ে তাঁর পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনে পড়ুয়াদের অনুপ্রাণিত করেছেন গ্রেটা। সুইডিশ পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে 'স্কুল স্ট্রাইক’ আন্দোলনের মুখ ছিলেন তিনি। বিশ্বের পুঁজিপতিদের তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের আসন্ন পরিণতি নিয়ে বারবার সতর্ক করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সতর্ক করেন গ্রেটা। এদিকে দিল্লি পুলিশ এফআইআর দায়েরেপ পরেও দমেনি এই মেয়ে। তিনি কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করে যাবেন তা নতুন ট্যুইটে করে স্পষ্ট করে দিয়েছেন গ্রেটা।