স্যাজিটরিয়াস (Sagittarius A) আমাদের আকাশগঙ্গার ঠিক মাঝখানে মজুত রয়েছে। চিলির ইউরোপিয়ান সাধারণ অবজারভেটরি (ESO) টেলিস্কোপ ইন্টারফেরেমিটার (VLTI) থেকে আকাশগঙ্গার কেন্দ্রের ছবি নিয়েছিল। তখনই সেখানে আচমকা তার মাঝখানে রহস্যময় ব্ল্যাক হোল (Black Whole) স্টোরি দেখা গিয়েছে।এর আগে যেখানে সেটা কিছু সেকেন্ডের জন্য দেখা যেত এবং আবার গায়েব হয়ে যেত।
ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ ইন্টারফেরেমেটর, পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত অপটিক্যাল অবজারভেটরির মধ্যে একটি। এর মধ্যে চারটি টেলিস্কোপ রয়েছে। প্রত্যেকটির ব্যাস ২৭ ফিট। সেই সঙ্গে ৪ টি অক্সিলারি টেলিস্কোপ আছে। যার লেন্সের ব্যাস ৬ ফিট। এগুলি এতটাই শক্তিশালী, যে অন্তরীক্ষে আমাদের চোখে দেখা বস্তুর তুলনায় ৪০০ কোটি গুণ বেশি অস্পষ্ট থাকে। যা তারা খুব সহজেই দেখতে পায়।
এমন ভাবে নেওয়া হয়েছে ব্ল্যাক হোলের ছবি যাতে ইন্টারফেরোমেট্রি (Interferometry), এমন একটি টেকনিক যার সাহায্যে চারটি টেলিস্কোপ মিলিয়ে আলোর তথ্য জুড়ে দিয়ে একটা সম্পূর্ণ ছবি অথবা ভিডিও বানানো হয়। আকাশগঙ্গায় মজুত স্যাজিটোরিয়াস এ-এর যে ছবি এই যন্ত্র নিয়েছে, ব্ল্যাক হোলের ছবির মধ্যে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে পরিষ্কার ইমেজ এটি।
জার্মানি স্থিত ম্যাক্স ব্ল্যাক ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের post-doctoral বৈজ্ঞানিক জুলিয়াস স্টেপলার জানিয়েছেন যে ভিএলটিআই আমাদের দুর্দান্ত ছবি পাঠিয়েছে। এটি এখনও পর্যন্ত অন্তরীক্ষের গভীরে নেওয়া সবচেয়ে ভালো ছবি। আমরা তো এই ছবিগুলি ডিটেইলিং দেখে অবাক। এখানে আমাদের ব্ল্যাকহোলের চারটি দিকে চক্কর লাগাতে থাকা তাদের ছবিও পাওয়া গিয়েছে।
তারার মুভমেন্ট থেকে ব্ল্যাকহোলের ট্রেস পাওয়া গিয়েছে। টেলিস্কোপ এর শক্তির আন্দাজে এই বিষয়টি দেখে আন্দাজ করা যাচ্ছে যে আকাশগঙ্গার মধ্যে মজুত স্যাজিটোরিয়াস-এ ব্ল্যাকহোলের মধ্যে কোনওভাবে আলো বের করে না। এটি সোজাভাবে দেখা মুশকিল। বৈজ্ঞানিকরা এর আশপাশের চক্কর লাগাতে থাকা তারাদের আলো এবং তার মুভমেন্ট এর কারণে এই ব্ল্যাকহোলের পরিচিতি করেছে এবং তার ছবি নিয়েছে।
ম্যাক্স ব্ল্যাক ইনস্টিটিউট ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ফিজিক্স এর নির্দেশক এবং ২০২০ সালে ফিজিক্সে নোবেল পাওয়া বিজ্ঞানী রিনহার্ড গেঞ্জেল জানিয়েছেন যে আমরা চাই স্যাজিটোরিয়াস-এ এর চারদিকে ঘুরতে থাকা তারাদের দেখেছি। এর মাধ্যমে আমরা ব্ল্যাকহোলের গুরত্বকার্ষণ শক্তি এবং অনুমান করতে পারি। অন্তরীক্ষ থেকে ব্ল্যাক হোল আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে রয়েছে।
আমরা এই স্টাডি প্রতিবছর মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে করি। যার মধ্যে জানা গিয়েছে, সাজিয়াটোরিয়াস ব্ল্যাকহোলের মতো বড়। যার মধ্যে ৪৩ লক্ষ সূর্য ঢুকে যেতে পারে। এই পৃথিবী থেকে প্রায় ২৭ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। এই হিসেব এখনও পর্যন্ত করা গণনার তুলনায় সবচেয়ে সঠিক বলে মনে করা হচ্ছে।