Iran nuclear bomb: ৪০০ কেজিরও বেশি ইউরেনিয়াম লুকিয়ে রেখেছে ইরান। দাবি আন্তর্জাতিক মহলের একাংশের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইজরায়েলের হামলাই সার, এখনও নাকি দেশের নানা প্রান্তে এই বিপুল ইউরেনিয়ামের ভান্ডার লুকিয়ে রেখেছে ইরান। অতি তেজস্ক্রিয় এই ধাতু যে পরমাণু অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান, তা কারও অজানা নয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এই বিপুল পরিমাণ ইউরেনিয়াম থেকে ঠিক কতগুলি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব? তার প্রভাবই বা কী হতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৪০০ কেজি ৯০% ইউ-২৩৫ ‘হথিয়ার-গ্রেড’ ইউরেনিয়াম থেকে ৭ থেকে ১৪টি পরমাণু বোমা বানানো সম্ভব। তবে বোমার ডিজাইনের উপর বিষয়টি নির্ভর করছে। পুরনো প্রযুক্তির তুলনায় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে, আরও বেশি বোমা বানানো সম্ভব।
আধুনিক ডিজাইনে প্রতিটি বোমার জন্য মাত্র ২৫ কেজি ইউরেনিয়াম হলেই যথেষ্ট। ফলে আরামসে ১৪টি বোমা তৈরি সম্ভব। কিন্তু পুরনো ডিজাইন (যেমন হিরোশিমার ‘লিটল বয়’) হলে ৫০-৬০ কেজি ইউরেনিয়াম লাগে। সে ক্ষেত্রেও ৭টি বোমা তৈরি হবে।
ছোট বোমা (০.১–১০ কিলোটন):
এগুলি ওজনে হালকা। যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য। ০.৫–২ কিমি রেডিয়াসে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে। তাপপ্রভাব ১–৩ কিমি পর্যন্ত।
মাঝারি বোমা (১০–১০০ কিলোটন):
একটা গোটা শহর ধ্বংসের ক্ষমতা এই বোমার। হিরোশিমায় যে বোমা ফেলা হয়েছিল, সেটিও ১৫ কিলোটনের ছিল। এই বোমা যেখানে পড়বে, তার আশেপাশের ২–৫ কিমি সবকিছু স্রেফ ছাই হয়ে যাবে। তাপ ও বিকিরণের প্রভাবে হাজার-হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
বড় বোমা (১০০ কিলোটন–৫০ মেগাটন):
এই ধরনের বোমাকে 'থার্মোনিউক্লিয়ার' বলা হয়। ফিশন ও ফিউশনের প্রভাবে এই বোমা তীব্র উত্তাপ সৃষ্টি করে। কোথাও এক মেগাটনের বোমা পড়লে তা আশেপাশের ১০–১৫ কিমি অঞ্চল ধুলিসাৎ করে দিতে পারে। ৩০ কিমি দূরেও তার তাপ ছড়িয়ে পড়ে। বহু দূর পর্যন্ত তার বিকিরণের প্রভাব থাকে। অর্থাৎ, প্রায় একটি জেলা বিপর্যস্ত করে দিতে পারে একটি বোমা।
পরমাণু বোমা বানাতে কী কী লাগে?
শুধু ইউরেনিয়াম থাকলেই হবে না। নিউট্রন ইনিশিয়েটর, বিশেষ ধরনের বিস্ফোরক, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও নিখুঁত ইঞ্জিনিয়ারিং প্রয়োজন। পরমাণু বোমা তৈরির প্রযুক্তি ভীষণই জটিল।
ইউরেনিয়াম বনাম প্লুটোনিয়াম
অনেক ক্ষেত্রে পরমাণু বোমা বানাতে প্লুটোনিয়াম-২৩৯ ব্যবহার করা হয়। পরিমাণে অনেক কম লাগে (৪–১০ কেজি)। ৪০০ কেজি প্লুটোনিয়াম থাকলে তাই দিয়ে ৪০–৮০টি বোমা তৈরি হয়ে যাবে। তবে প্লুটোনিয়াম জোগাড় ও প্রসেস করা অনেক বেশি কঠিন।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা
‘নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি’ অনুযায়ী, এভাবে পরমাণু অস্ত্র মজুত ও তৈরি করা নিষিদ্ধ। তবে ইরান বরাবরই এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক নজরদারিকে এড়িয়েই গিয়েছে। এমতাবস্থায় যদি ইরানে সত্যিই ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম থাকে, তবে সেটা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে এবং বিশ্বের নিরাপত্তাকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে।