ইরানের বৃহত্তম ইউরেনিয়াম কেন্দ্রে বড়সড় এয়ার স্ট্রাইক করে গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে ইজরায়েল। ‘আত্মরক্ষার স্বার্থে’ শুক্রবার সকাল থেকে ইরানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন রাইসিং লায়ন’ শুরু করেছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দেশ। দক্ষিণ-পূর্ব তেহরান থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নাতানজ ইউরেনিয়াম কেন্দ্রই ছিল তাদের টার্গেট। ইজরায়েলের হামলার পরেই প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। দেশের সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা আলি খামেনেই একটি বিবৃতি দিয়ে ইজরায়েলকে ‘কঠোর শাস্তি’-র জন্য প্রস্তুত থাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে শুক্রবার সকাল থেকে নতুন করে এই সংঘর্ষ ফের উস্কে দিচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা।
ইজরায়েলের পক্ষ থেকে শয়ে শয়ে ড্রোন ছোড়া হয়েছে। হামলায় মৃত্যু হয়েছে ইরানের দুই পরমাণু বিজ্ঞানী এবং সে দেশের সেনাবাহিনী (রেভলিউশনারি গার্ড)-এর কমান্ডার হোসেন সালামির। ইরানের আর্মি চিফল অফ স্টাফ মহম্মদ হোসেন বাঘেরিও নিহত হয়েছেন এই হামলায়। যদিও দেশের সরকারি সংবাদমাধ্যম এখনও পর্যন্ত বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
আমেরিকার সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হওয়ার ইঙ্গিত মিলছিল। সেই আশঙ্কা সত্যি করেই ইজরায়েল শুরু করেছে 'অপারেশন রাইসিং লায়ন'। পাল্টা ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনেইয়ের এক্স পোস্টেও সিঁদূরে মেঘ দেখছে আন্তর্জাতিক মহল। খামেনেই লিখেছেন, ‘দয়ালু ঈশ্বর মহান ইরানি জাতির প্রতি ক্ষমাশীল। আমাদের প্রিয় দেশে জ়িওনিস্ট শাসনব্যবস্থা আজ তার শয়তানের রক্তাক্ত হাত দিয়ে অপরাধ করেছে। জনবসতি এলাকাগুলিকে লক্ষ্য করে তার বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ আগের চেয়ে আরও বেশি ভয়ঙ্কর হয়েছে। জিওনিস্ট শাসনব্যবস্থাকে এর ভয়াবহ শাস্তি পেতে হবে। আল্লাহর দিব্যি, ইসলামিক রিপাবলিকের শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী শাস্তি না দিয়ে ছাড়বে না।’
সামনে দুই দেশের নাম চলে এলেও, মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তির প্রেক্ষাপটে জড়িয়ে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি দেশের নাম। ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ, হিজবুল্লার প্রধানের হত্যা, গাজায় হত্যালীলা সহ একটার পর একটা মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ঘটনা ক্রমশন উত্তপ্ত করে তুলেছে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি। তৈরি করেছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরির রসদ। এখন পশ্চিম এশিয়ায় যা ঘটছে বা ঘটে চলেছে তার সঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিল পাচ্ছেন অনেকেই। একইরকম প্লট। শুক্রবারের ইজরায়েল-ইরান সংঘাতে প্রশ্ন উঠছে, আরও এক ওয়ারফ্রন্ট কি খুলে গেল?
আবারও তেহরানে হামলা চালিয়ে ইজরায়েল দেখিয়ে দিয়েছে, শত্রুপক্ষের ডেরায় ঢুকে সফল অভিযান চালানোর ক্ষমতা রয়েছে তাদের। একই সঙ্গে তারা উন্মুক্ত করে দিয়েছে ইরানের নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা বিভাগের দুর্বলতাকেও। ইরানের হামলা পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতিকে আরও খাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দু-দেশই রণংদেহী। একে-অপরকে সবক শেখাতে চায়। এমন একটা সময়ে আশঙ্কা বাড়ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে।