এবার আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের (ISS) অভিযানের অংশ হতে চলেছে ISRO। ভারতের তরফে এই অভিযানে যাচ্ছেন মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা। মিশনের নাম Axiom-4 (AX-4)। এটি Axiom Space-এর একটি বেসরকারি স্পেস মিশন।
শুভাংশু শুক্লা মোট ১৪ দিন মহাকাশে থাকবেন। শূন্য মাধ্যাকর্ষণে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। এর মধ্যে অন্যতম Voyager Tardigrades Experiment।
ভারতের তরফে এই অভিযানে যাচ্ছেন মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা। (ছবি: Axiom Space)
শুভাংশু শুক্লাই প্রথম ভারতীয় যিনি ইন্টারন্যাশানাল স্পেস স্টেশনে যাচ্ছেন। সেখানেই থাকবেন। SpaceX Dragon মহাকাশযানে তাঁরা ISS-এ পৌঁছবেন। তিনিই এই অভিযানের মিশন পাইলট। ইতিমধ্যেই AX-4 ক্রু মেম্বাররা মহাকাশে কাজের জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
নোংরা, দূষিত জলে, প্রচণ্ড শীত বা গরমেও এই অতিক্ষুদ্র প্রাণীগুলি বেঁচে থাকে। (Photo: Getty)
টার্ডিগ্রেড এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র প্রাণী। এদের 'ওয়াটার বিয়ার' বা 'মস পিগলেট' নামেও ডাকা হয়। জলাশয়ে এই আণুবীক্ষণিক প্রাণী খুবই কমন। যে কোনও একস্ট্রিম পরিস্থিতিতে, খুব নোংরা, দূষিত জলে, প্রচণ্ড শীত বা গরমেও এই অতিক্ষুদ্র প্রাণীগুলি বেঁচে থাকে।
১৭৭৩ সালে প্রথম জার্মান বিজ্ঞানী জোহান অগাস্ট এফ্রাইম গোয়েজ এই প্রাণীর আবিষ্কার করেন। 'Tardigrada' শব্দটি লাতিন। বাংলায় অর্থ ‘ধীরে চলা’। খুব ধীরে মুভমেন্টের কারণে এই নাম। বিজ্ঞানীরা মজা করে এর পোশাকি নাম দিয়েছেন 'ওয়াটার বিয়ার'। কারণ খুব সহজ, এগুলি জলে থাকে এবং ভাল্লুকের মতোই গোলগাল।
টার্ডিগ্রেডের দৈর্ঘ্য সাধারণত ০.৩ মিমি থেকে ০.৫ মিমি হয়। তাই দেখতে মাইক্রোস্কোপ লাগে। এদের শরীর আটটি ছোট পায়ে বিভক্ত। প্রতিটি পায়ের শেষে থাকে ছোট ছোট নখর। এদের শরীর অনেক সময় শক্ত আবরণে ঢাকা থাকে।
পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই এদের পাওয়া যায়— শ্যাওলা, মাটি, পাতা, মিষ্টি জল, সমুদ্রের নোনতা জল, পাহাড়, বরফ, উষ্ণ প্রস্রবণ থেকে শুরু করে গভীর সমুদ্রেও।
স্পেস স্টেশনে মূলত বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার উদ্দেশ্যেই মহাকাশচারীরা যান। ভারতের মহাকাশে পাঠানো সাতটি গবেষণা প্রকল্পের মধ্যে এটি অন্যতম। Axiom Space জানিয়েছে, এই গবেষণায় মহাকাশে টার্ডিগ্রেডদের জীবন চক্র ও জিনগত আচরণে কোনও পরিবর্তন আসে কিনা, তার পর্যবেক্ষণ করা হবে।
গবেষণার লক্ষ্য:
মহাকাশে ঘুমন্ত টার্ডিগ্রেডদের নতুন করে জাগিয়ে তোলা যায় কিনা সেটা দেখা।
এরা মহাকাশে ক'টি ডিম পাড়ে ও তার মধ্যে ক'টা ফুটে ছানা বের হয়, তা দেখা।
মহাকাশে টার্ডিগ্রেড ও পৃথিবীতে থাকা টার্ডিগ্রেডদের জিনগত তুলনা করা।
এই গবেষণার ফল থেকে ভবিষ্যতে দীর্ঘ মহাকাশ অভিযানে প্রাণীদের শরীরে কী কী প্রভাব পড়তে পারে, তার একটা আন্দাজ পাওয়া যাবে।এর পাশাপাশি জীবপ্রযুক্তি বা বায়োটেকনোলজির বিভিন্ন গবেষণাতেও এটি সাহায্য করবে।
কিন্তু মহাকাশেই কেন?
এই টার্ডিগ্রেডরা এমন সব পরিবেশে বেঁচে থাকে, যেখানে অন্য কোনও প্রাণীর পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব। যেমন:
মহাকাশের সম্পূর্ণ শূন্যতা (ভ্যাকুয়াম)
অতিমাত্রায় তেজস্ক্রিয়তা (রেডিয়েশন)
চরম গরম ও ঠান্ডা
এমন পরিস্থিতিতে এই প্রাণীগুলি কীভাবে নিজেদের DNA রক্ষা ও মেরামত করে, তার পর্যবেক্ষণ করা হবে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
টার্ডিগ্রেড এক ধরনের ‘সাসপেন্ডেড অ্যানিমেশন’ অবস্থায় থাকতে পারে। অর্থাৎ প্রাণ থাকা অবস্থাতেই এই জল ভাল্লুকগুলি বহু বছর ঘুমিয়ে থাকতে পারে। মানুষকেও কি এভাবে দীর্ঘ কয়েক বছর ঘুম পাড়িয়ে রেখে দীর্ঘ মহাকাশযাত্রায় পাঠানো যায়? এই গবেষণায় মিলতে পারে ইঙ্গিত।
সবশেষে এটাই বলা যায়, এই গবেষণার ফলাফল ISRO-র গগনযান মিশন-এর প্ল্যানিং ও ডেভেলপমেন্টে সাহায্য করতে পারে।