২০২২ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানকে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF) এর ধূসর তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। কারণ হিসেবে জানানো হয়েছিল যে, পাকিস্তান জঙ্গিদের টাকা দেওয়ার বন্ধ করছে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই সময়েই পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে জইশ-ই-মোহাম্মদের (জেইএম) সবচেয়ে বড় আস্তানা দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছিল।
স্যাটেলাইট চিত্রে জইশের বাড়বাড়ন্ত
স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাহাওয়ালপুরে অবস্থিত 'জামিয়া মসজিদ সুবহানআল্লাহ'-এর আয়তন দ্বিগুণ হয়ে ১৮ একরেরও বেশি হয়েছে। ২০১১-১২ সালে নির্মিত এই মসজিদটি ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে দ্রুত সম্প্রসারিত হয়। এই তথ্য সরবরাহ করেছেন 'দ্য ইন্টেল ল্যাব'-এর ভূ-গোয়েন্দা গবেষক ড্যামিয়েন সাইমন।
সরকারি নিষেধাজ্ঞার পরও জৈশের কর্মকাণ্ড জারি
যদিও পাকিস্তান সরকার জইশকে নিষিদ্ধ করেছে, তবুও বাহাওয়ালপুরের উসমান-ও-আলি ক্যাম্পাস সংগঠনটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে রয়ে গেছে। ইন্ডিয়া টুডের ওপেন-সোর্স ইন্টেলিজেন্স (OSINT) টিমের গবেষণায় দেখা গেছে, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ তারিখে এখানে 'ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ' নামক একটি তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে জৈশের শীর্ষ নেতা তালহা আল-সাইফ উপস্থিত ছিলেন, যিনি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ আজহারের ভাই।
নতুন অবকাঠামো এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা
স্যাটেলাইট চিত্র অনুসারে, সুবহানআল্লাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে নতুন ভবন নির্মাণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং নতুন গার্ড পোস্ট তৈরি করা হয়েছে। ১০ জানুয়ারী, ২০২৫ তারিখের সর্বশেষ স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, সেখানে নির্মাণ কাজ এখনো চলছে।
আবারও প্রকাশ্যে মাসুদ আজহার
জৈশ-ই-মোহাম্মদ তাদের কর্মকাণ্ডের ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করে না, তবে প্রচারণার জন্য অডিও ও নিবন্ধ ব্যবহার করে। মাসুদ আজহার ২০১৯ সালের এপ্রিলের পর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। কিন্তু ২০২৪ সালের ২৭ জুন, তিনি বাহাওয়ালপুরে একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন এবং সেখানে ভাষণ দেন। ইন্ডিয়া টুডের গবেষণায় তার কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করা হয়েছে যে এটি মাসুদ আজহার নিজেই।
জৈশের প্রভাব বাহাওয়ালপুরের বাইরেও
জৈশ-ই-মোহাম্মদের সদর দপ্তর আল-রহমত ট্রাস্ট নামে একটি সম্মুখ সংগঠনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, বাহাওয়ালপুর মূলত নিয়োগ ও অর্থায়নের কেন্দ্র, তবে জৈশের প্রশিক্ষণ শিবিরগুলি খাইবার পাখতুনখোয়া (KPK) এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (POK) অবস্থিত।
পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটির কাছাকাছি 'নতুন অ্যাবোটাবাদ'
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যানুসারে, বাহাওয়ালপুরের এই ঘাঁটিটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মাত্র ৬ কিমি দূরে এবং বাহাওয়ালপুর বিমান বাহিনী স্টেশন থেকে ১০ কিমি দূরে অবস্থিত। তাছাড়া, এটি জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত, যা করাচি থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত এবং গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর সংযোগ স্থাপন করে।
প্রশ্নের মুখে পাকিস্তানের ভূমিকা
যখন পাকিস্তান আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার দাবি করছে, তখন কীভাবে জইশের আস্তানাগুলো প্রকাশ্যে দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে? এই প্রশ্নই এখন আন্তর্জাতিক মহলে আলোচিত হচ্ছে।