Pakistan Afghanistan conflict: পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে বিবাদ চরমে। তবে এই শত্রুতা নতুন কিছু নয়। বহু দশকের পুরনো। সেই দ্বন্দ্বই ফের রক্তক্ষয়ী আকার নিয়েছে। কিন্তু দু'টি মুসলিম প্রধান প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এত অশান্তি কেন?
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মকাল থেকেই আফগানিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল জটিল। দুই দেশের মাঝে রয়েছে এক দীর্ঘ সীমান্তরেখা, ‘ডুরান্ড লাইন’। এই সীমান্ত ঘিরেই অশান্তির সূত্রপাত। দুই দেশের মধ্যে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বন্ধন থাকলেও বরাবরই দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন ছিল চরমে।
১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের পর আফগানিস্তান কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঠিক সেই সময়েই পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় সোভিয়েত বিরোধী ‘মুজাহিদিন’কে সাহায্য করতে শুরু করে। পরবর্তীকালে তালিবান গোষ্ঠীর উত্থানেও ইসলামাবাদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই আজ পরিণত হয়েছে অবিশ্বাসে।
২০০১ সালে আমেরিকার নেতৃত্বে আফগানিস্তানে ‘ওয়ার অন টেরর’ শুরু হয়। দুই দশকের যুদ্ধের শেষে ২০২১ সালে মার্কিন সেনা দেশ ছাড়ে। ক্ষমতায় ফেরে আফগান তালিবান। সেই সময় অনেকেই ভেবেছিলেন যে, পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের দারুণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কিন্তু বাস্তবে সম্পূর্ণ উল্টোটাই হল।
ইসলামাবাদ অভিযোগ তুলতে শুরু করে যে, আফগানিস্তান পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দিচ্ছে। বিশেষত ‘তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান’ বা TTP র বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে। এই টিটিপি আফগান সীমান্তের ভেতরেই ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে বলে দাবি ইসলামাবাদের। এই জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যা প্রায় ৬,০০০।
শুধু তাই নয়, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী হামলার রেট প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর দেশজুড়ে ৯০৫টি হামলায় ১,১৭৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। পাকিস্তানের দাবি, এই হামলাগুলির বেশিরভাগই টিটিপি র কাজ। আফগান সরকার অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, টিটিপি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, কাবুলের নয়।
এই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মাঝেই শুরু হয়েছে সীমান্ত সংঘর্ষ। পাকিস্তান গত বছর জুনে ‘আজম-ই-ইস্তেহকাম’ নামে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে। ডিসেম্বর মাসে তারা আফগান ভূখণ্ডে বিমান হামলাও চালায়। সেই ঘটনায় বহু টিটিপি সদস্য নিহত হয় বলে দাবি করে ইসলামাবাদ। এদিকে আফগানিস্তান তখনই পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। তারাও জানায় যে, এই হামলার পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। আর সেই হুঁশিয়ারিই বাস্তবে পরিণত হয় পাকতিকার হামলায়।
এদিকে পাকিস্তান আফগান শরণার্থীদের দেশছাড়া করতে উঠেপড়ে লেগেছে। আর তার থেকে দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। প্রায় ৮ লাখেরও বেশি আফগান নাগরিককে জোর করে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কাবুল।
বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান এখন ‘একই পরিবারের দুই ভাইয়ের লড়াই’ এর মতো অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে। একদা যে ইসলামাবাদ তালিবানকে ক্ষমতায় আনতে সহায়তা করেছিল, আজ সেই তালিবানই পাকিস্তানের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এহেন প্রেক্ষাপটে যে পাক-আফগান সীমান্তে রক্তপাত অদূর ভবিষ্যতে থামবে না, তা বলাই বাহুল্য। কারণ দুই দেশের মধ্যে এখন যে অবিশ্বাসের দেয়াল তৈরি হয়েছে, তা সীমান্তের কাঁটাতারের থেকেও অনেক বেশি উঁচু।