সামনেই বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন। এদিকে বেশ কয়েক বছর ধরেই ভুগছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বর্তমানে তাঁর পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর বলেই জানা যাচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে চাইছে তাঁর পরিবার। কিন্তু চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সেন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো যাবে না বলে গত ১ অক্টোবর জানিয়ে দিয়েছে সেই দেশের আইন মন্ত্রক। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের থেকে পাঠানো প্রস্তাবের বিষয়ে আইন মন্ত্রক এই মতামত দিয়েছে। আর এই নিয়েই সরগরম বাংলাদেশের রাজনীতি।
বাংলাদেশ সরকার আইনের দোহাই দিয়ে চিকিৎসা থেকে খালেদা জিয়াকে বঞ্চিত রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভীষণ অসুস্থ এবং দেশে চিকিৎসা অসম্ভব হওয়া সত্ত্বেও সিনিয়র সিটিজেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়া শুধু অমানবিক নয়, সংবিধান লঙ্ঘন এবং
বেআইনিও বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অন্যায়ভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার পরিণতি কখনো ভালো হয় না। যত দ্রুত সম্ভব দেশনেত্রীকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে একজন নাগরিক হিসাবে তাকে সুচিকিৎসা পাওয়ার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া হোক। অন্যথায় একজন গুরুত্বপূর্ণ, জনপ্রিয় প্রবীণ নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার না দিয়ে তার প্রতি বেআইনি, অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ করার জন্য সরকারকেই দায়ি থাকতে হবে।
মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য ‘অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লন্ডনে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। এত অশালীন, কুরুচিপূর্ণ, দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর মতো দায়িত্বশীল জায়গা থেকে দিতে পারেন না। সেটা আমরা ভাবতে পারি না। তার বক্তব্যে প্রমাণ হয়েছে এ দেশের মালিক একজন। এ দেশে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ নেই। বিচার বিভাগ তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি আইন-আদালতের তোয়াক্কা করেন না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে যে কথা তিনি বলেছেন তাতে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ফুটে উঠেছে।’
খালেদা জিয়ার ৮০ বছর বয়স হয়েছে, অসুস্থ তো হবেনই, সময় হয়ে গেছে ,এত কান্নাকাটি করে লাভ নেই। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, কতটা অমানবিক হলে এ ধরনের কথা তিনি বলতে পারেন। এদিকে পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামি লিগও। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বলেন, তাকে বিদেশে পাঠানোর পুরো বিষয়টি আইনি, এখানে রাজনীতির কোন বিষয় নেই।
বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেন, বেগম খালেদা জিয়া বাড়ি থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না- এই শর্তেই তার দণ্ড স্থগিত করে তাকে বাড়ি থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপর থেকে তিনি বাড়ি থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। শেখ হাসিনা তার মহানুভবতা দেখিয়ে মুক্তি দিয়েছেন। আর কত মহানুভবতা দেখাতে হবে? বিদেশে যেয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সুযোগ নেই জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, শর্ত অনুসারে বেগম খালেদা জিয়া কোনভাবেই বিদেশে যেতে পারবেন না। আইনে সেই সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতা সেই ক্ষমতাও আর ব্যবহারের সুযোগ নেই। এখন তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। এজন্য যে কারণে বেগম জিয়া দণ্ডিত, সেই দোষ স্বীকার করেই ক্ষমা চাইতে হবে। আর যে কেউ তার সাজা মকুবের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারেন- যোগ করেন আইনমন্ত্রী। পাশাপাশি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান তিনি। বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আবেদনের ইস্যুতে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনে আইনের কোন উল্লেখ ছিল না।