সোমবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। আসার আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফাও দিয়ে এসেছেন। তাঁর দেশত্যাগের পর সেনার শাসনে আসে বাংলাদেশ। কিন্তু তারপরেও অব্যাহত উত্তেজনার পরিস্থিতি। মঙ্গলবারও বাংলাদেশ জুড়ে চলল লুঠতরাজ, খুন, অগ্নিসংযোগ। তারই মধ্যে বেশ কিছু কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাও ঘটল।
পোস্ট-হাসিনা বাংলাদেশ: মঙ্গলবার যা-যা ঘটল
১. মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া
শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই মুক্তি পেলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া । মঙ্গলবার (৬ অগাস্ট) বঙ্গভবন প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই বিষয়ে জানায়।
আওয়ামী লিগ জমানায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দুর্নীতি সংক্রান্ত দুইটি মামলায় সাজা পেয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জেলেই ছিলেন তিনি। এরপর দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দি ছিলেন খালেদা জিয়া।
যদিও পরে পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে সরকার এক নির্বাহী আদেশ জারি করে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাঁকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়। তখন থেকে দীর্ঘদিন ধরে তিনি হাউজ অ্যারেস্টে ছিলেন। ছয় মাস অন্তর তাঁর মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছিল।
৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে আসেন শেখ হাসিনা। আর তার ঠিক পরদিনই হাউজ অ্যারেস্ট থেকে মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া। সেনারা গোটা দেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরেই তাঁকে মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সমাজের প্রতিনিধি ও ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্য়ে বৈঠকের পরে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
২. আন্দোলনকারীদের ডেডলাইন মেনেই বাংলাদেশের সংসদ ভেঙে দিলেন রাষ্ট্রপতি
আন্দোলনকারীদের ডেডলাইনের মধ্যেই সংসদ ভেঙে দিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহবুদ্দিন। সোমবার রাতেই অবশ্য সংসদ ভেঙে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। এদিকে ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৩টের মধ্যে সংসদ ভেঙে দেওয়া না হলে তাঁরা কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। এরপরেই দেখা গেল মঙ্গলবার বিকেল ৩টের আগেই সংসদ ভেঙে দিলেন রাষ্ট্রপতি।
৩. হাসিনা দেশ ছাড়ার পরেও মৃত্যুমিছিল, লুটপাট
শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরে অশান্তি যেন নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, লুঠ, খুনোখুনির খবর মিলেছে। বাংলাদেশে সংঘর্ষে মৃত্যুর সংখ্যা সব মিলিয়া প্রায় ৩০০ পার করে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
৪. সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ
ছাত্র আন্দোলন হলেও বাংলাদেশে বারবার উঠে আসছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর আক্রমণের অভিযোগ। বাংলাদেশের সংবাদপত্র দ্য ডেইলি স্টার সূত্রে খবর, ২৭টি জেলায় হিন্দুদের বাড়ি, দোকানে হামলা চালানো হয়েছে। আওয়ামী লিগের সদস্য-নেতাদের বাড়ি-দোকানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামে ৪ হিন্দু পরিবারে হামলা, লুঠ চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। হাতিবাঁধা উপজেলার পূর্ব সরডুবি গ্রামে ১২টি হিন্দু ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। মেহেরপুরে ইস্কনের মন্দিরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে।
৫. শেখ হাসিনা কি ভারতেই থাকবেন?
সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেওয়ার পর বোন রেহানাকে নিয়ে ভারতে আসেন হাসিনা। তারপর থেকে ভারতেই রয়েছেন তাঁরা। মঙ্গলবার সকালে খালি বিমানটি বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছে।
৬. ব্রিটেন, ইউরোপ নিয়ে জল্পনা
শেখ হাসিনা আরও কিছু দিন ভারতেই গোপন স্থানে থাকবেন। তবে পরে ইউরোপ বা ব্রিটেনে যেতে পারেন বলে জল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু সেই খবর এখনও নিশ্চিত নয়।
৭. ভাইরাল লুঠপাটের ছবি
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি বাসভবন, মন্ত্রীদের দফতর, আওয়ামী লিগের নেতাদের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সেই ছবি। বিভিন্ন ছবিতে আন্দোলনকারীদের গণভবন থেকে খাবারদাবার, টিভি, আসবাব এমনকি খরগোশ, হাঁস, ছাগল, মাছ, রঙিন মাছ নিয়ে বের হতে দেখা গিয়েছে।
৮. অন্তর্বতী সরকার গঠনে নেতৃত্ব দেবেন মহম্মদ ইউনুস
আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের জনক ও নোবেল জয়ী মহম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারে নেতৃত্ব দেবেন। মহম্মদ ইউনুস শেখ হাসিনার ঘোর বিরোধী ছিলেন।
৯. বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের দাবি
বাংলাদেশের আগের সরকারের আধিকারিকদের একাংশ চাঞ্চল্যকর দাবি তুলছেন। তাঁরা এই গোটা আন্দোলনের পিছনে পাকিস্তান সেনা ও ISI-এর ইন্ধন আছে বলে দাবি করছেন। তাঁদের মতে, পরিকল্পিকভাবেই ছাত্র আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনের রূপ দেওয়া হয়েছে।
১০. রাজ্যসভায় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কররের বক্তব্য
রাজ্যসভায় এদিন বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, 'বাংলাদেশে প্রায় ১৯ হাজার ভারতীয় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৯ হাজার পড়ুয়া। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। সীমান্তে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।' তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ আমাদের খুব কাছের। জানুয়ারি থেকে সেখানে উত্তেজনা রয়েছে। জুন-জুলাইয়ে হিংসা শুরু হয়। সেখানকার রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আমরা নিয়মিত যোগায়োগ রেখেছিলাম। কোটা ব্যবস্থা নিয়ে কোর্টের রায়ের পরও বাংলাদেশে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। শেখ হাসিনাকে ইস্তফা দিতে হল। ৪ অগাস্ট পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। অধিকাংশ হামলা চালানো হয়েছে সংখ্যালঘুদের উপর, যা উদ্বেগের।'