সামনেই পুজো। এদিকে গোটা রাজ্যে লাফিয়ে লাথি বাড়ছে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া। তা নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে রাজ্য সরকার। সব থেকে চিন্তার বিষয়, রাজ্যে ভয়ঙ্করভাবে বাড়ছে ডেঙ্গি। প্রতিদিনই নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। বর্তমানে রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। রবিবারই দক্ষিণ দমদমের এক বাসিন্দার ডেঙ্গিতে মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। সরকার ডেঙ্গি নিয়ে কোনও পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি। বেসরকারি সূত্রে খবর, ডেঙ্গিতে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ৫০-এর বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। কলকাতার পাশাপাশি জেলাতেও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। দিনে অন্তত ২৫০ থেকে ৩০০ জন করে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের থেকেও ভয়াবহ ডেঙ্গি পরিস্থিতি প্রতিবেশী বাংলাদেশের। পদ্মা পারে ইতিমধ্যে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হাজার ছাড়িয়েছে। সেপ্টেম্বরেই ডেঙ্গিতে বাংলাদেশের ৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এ বছরই ডেঙ্গিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। রবিবার বাংলাদেশের স্বাস্থ্য দফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) বাংলাদেশে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গিতে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ৬। এর আগে ডেঙ্গিতে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছিল গত বছর—২৮১ জনের।
গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে ২ হাজার ৮৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলকি বছর ২ লাখ ৬ হাজার ২৮৮ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। রাজধানী ঢাকা শহরের বাইরে রোগীর সংখ্যা ঢাকা শহরের চেয়ে বেশি। যদিও ঢাকা শহরের ডেঙ্গিতে মৃত্যু বেশি।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৯৫৯। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ৩৭৯ জন আর অন্যান্য বিভাগে ৬ হাজার ৫৮০ জন ভর্তি রয়েছেন। এ বছর পয়লা জানুয়ারি থেকে৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ লাখ ৩ হাজার ৪০৬ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৮৩ হাজার ২২২ জন আর ঢাকার বাইরে ১ লাখ ২০ হাজার ১৮৪ জন। এবারের ডেঙ্গি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বছরের শুরু থেকে জুন পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা কিছুটা কম হলেও জুলাই থেকে বাংলাদেশ যেন এডিস মশা ও ডেঙ্গুর চারণভূমি হয়ে উঠছে। নবজাতক থেকে ৮০ বছর বয়সি কেউই বাদ পড়ছে না ডেঙ্গির কবল থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের কোনো দেশেই ডেঙ্গিতে এত মৃত্যু হয়নি আগে। এমনকি বিশ্বে অধিক ডেঙ্গি সংক্রমণের শীর্ষে থাকা ব্রাজিলকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় ডেঙ্গির ধরন এবং উপসর্গ বদলেছে। ডেঙ্গিতে জটিল রোগীদের মাল্টিপল অর্গান ফেইলিউর হচ্ছে। ফলে ৯০ ভাগ রোগীর প্রাণ যাচ্ছে ডেঙ্গি শক সিনড্রোমে। দিন যত যাচ্ছে এই পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে।