গদিচ্যুত হয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। তোড়জোড় শুরু হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের। আর এর মাঝেই নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। মঙ্গলবার (৬ অগাস্ট) ভোর সোয়া ৪টার দিকের ফেসবুকে দেওয়া ভিডিও বার্তায় এই প্রস্তাব দেন আন্দোলনের সমন্বয়করা। ভিডিও বার্তায় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের রূপরেখা দিতে আমরা ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছিলাম। কিন্তু জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনই রূপরেখা ঘোষণা করছি।
আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের রূপরেখা দিতে আমরা ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছিলাম। কিন্তু জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনই রূপরেখা ঘোষণা করছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, তিনি দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা সকালের মধ্যে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া দেখতে চাই। রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ থাকবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হোক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাকি সদস্যদের নামও আমরা সকালের মধ্যে ঘোষণা করব।
রাজনীতিতে ফিরবেন না হাসিনা: পুত্র জয়
প্রবল জনবিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশ ছাড়ার পরই প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা । এই পরিস্থিতির মধ্যেই মুখ খুললেন তাঁর ছেলে সাজিব ওয়াজিদ জয়। তিনি এক সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন, তাঁর মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। এত পরিশ্রম করার পরেও যেভাবে তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন হল, তাতে তিনি (হাসিনা) অত্যন্ত হতাশ। হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদে থাকাকালীন তাঁর উপদেষ্টা ছিলেন ছেলে জয়। সোমবার হাসিনার পদত্যাগের পর এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয় জানান, রবিবার থেকেই পদত্যাগের কথা ভাবছিলেন তাঁর মা। শেষমেশ পরিবারের চাপে নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে দেশে ছেড়েছেন তিনি। জয় বলেন, ‘উনি (হাসিনা) বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। উনি যে সময়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, তখন করুণ অবস্থা ছিল দেশের। কিন্তু আজ বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম শক্তি। উনি খুবই হতাশ।’ কড়া হাতে আন্দোলন দমনের যে অভিযোগ উঠেছিল সরকারের বিরুদ্ধে, তাও অস্বীকার করেছেন জয়। তাঁর কথায়, ‘এখানে পুলিশকে পিটিয়ে মারা হচ্ছিল। গতকাল পর্যন্ত ১৩ জন পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। জনতা যদি পুলিশকে এভাবে পিটিয়ে মারে তো পুলিশ কী করবে?’
বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশে বিক্ষোভের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার কথা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়াকে গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে আমেরিকা। সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, ‘আমরা সব পক্ষকে আরও হিংসা থেকে বিরত থাকার এবং যত দ্রুত সম্ভব শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানাই।’ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ম্যাথু মিলার বলেন, ‘ঘোষণাপত্রে আমরা দেখেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং বাংলাদেশ ছেড়েছেন। সতর্কতার সঙ্গে আমরা বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব পক্ষকে আরও হিংসা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। গত কয়েক সপ্তাহে অনেক প্রাণ ঝড়েছে এবং আগামী দিনে আমরা শান্ত ও সংযত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে মিলার বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানাই এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশের আইন অনুসারে যেকোনও পরিবর্তনের আহ্বান জানাই।’