বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের একদিকে যেমন ন্যায়ের দাবি রয়েছে, তেমনই তারই আড়ালে নানা হিংসা, নৈরাজ্যের ঘটনা ঘটেছে। সেই ধারা এখনও অব্যাহত। এর আগে একাধিকবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনা সামনে এসেছে। এবার সেখানে সরকারি চাকরি থেকে হিন্দুদের পদত্যাগ করানোর খবর মিলল।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের দুর্ভোগ
অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘু হিন্দুদের সুরক্ষার কথা বললেও বাস্তবে যে তা কার্যকর হচ্ছে না, সেটা বলাই যায়। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ অগাস্ট থেকে বাংলাদেশে প্রায় ৫০ জন হিন্দু শিক্ষাবিদকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি চাকরির গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকেও হিন্দুদের সরানোর প্রবল চেষ্টার খবর মিলছে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ছাত্র সংগঠন 'বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদ' শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই পরিসংখ্যান ও দাবি জানিয়েছে।
শুধু তাই নয়, ইন্ডিয়া টুডে-র কাছে পদত্যাগ করা(করতে বাধ্য হওয়া) শিক্ষকদের একটি তালিকা এসে পৌঁছেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, একের পর এক হিন্দু শিক্ষক-শিক্ষিকা বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।
হেনস্থা, চাপের মুখে পদত্যাগ করা শিক্ষিকাদের মধ্যেই একজন শুক্লা রায়। বরিশালের সরকারি বাকিরগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি। তাঁকেও বলপূর্বক, চাপ দিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তিনি জানিয়েছেন, 'পরিস্থিতি এমনই ছিল যে, শুধুমাত্র পদত্যাগ করলাম-টুকুই লিখতে পেরেছি।' তারপরেই নিচে সই করে কোনওমতে ইস্তফা দেন শিক্ষিকা।
বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ইন্ডিয়া টুডে-র সঙ্গে কথাও বলেন। আর সেই কথোপকথনে তাঁরা বাংলাদেশের হিন্দু শিক্ষকদের পদত্যাগের বিষয়টি যে সত্যি, সেই বিষয়টি সুনিশ্চিত করেছেন।
ইন্ডিয়া টুডেকে বাংলাদেশের এক অধ্যাপক জানিয়েছেন, 'দাদা, আমার নাম সঞ্জয় কুমার মুখার্জী, সহকারী অধ্যাপক, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড গভর্ন্যান্স স্টাডিজ বিভাগ, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ। আমাকে বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। আমরা খুব দুর্বল হয়ে পড়েছি।'
অভিযোগ, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে একের পর এক হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি হিন্দুদের দোকান, বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের মতো ঘটনারও খবর মিলেছে।
এই বিষয়ে লেখিকা তসলিমা নাসরিন বলেন, 'বাংলাদেশে, শিক্ষকদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। সাংবাদিক, মন্ত্রী, আগের সরকারের আধিকারিকদের হত্যা, হয়রানি, কারারুদ্ধ করা হচ্ছে। জেন জি আহমদী মুসলমানদের শিল্প-কারখানা পুড়িয়ে দিয়েছে। সুফি মুসলমানদের মাজার ও দরগা ধ্বংস করা হয়েছে। ইউনূস এর বিরুদ্ধে কিছু বলেন না।'