বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সোমবার সেদেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি, উপাসনালয় ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নাটোর, ঢাকার ধামরাই, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, শরীয়তপুর ও ফরিদপুরে হিন্দুদের মন্দিরে এবং যশোর, নোয়াখালী, মেহেরপুর, চাঁদপুর ও খুলনায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে। দিনাজপুরে হিন্দুদের ৪০টি দোকান ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া রংপুরের তারাগঞ্জে আহমদিয়াদের উপাসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। এককথায় শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পরও বাংলাদেশের পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। সোমবার রাত থেকে পরপর মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। কোথাও আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, কোথাও চলেছে ভাঙচুর। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু তথা হিন্দুদের ওপর যে আক্রমণ চলছে, সে কথা জানিয়েছেন খোদ ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। মঙ্গলবার সংসদে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিবৃতি দেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেখানেই সংখ্যালঘুদের আক্রান্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর এই হামলার ঘটনা এবার স্বীকার করে নিল জামাতও।
Jamaat Ameer urges to establish a people’s government by holding a meaningful government under the interim government
— Bangladesh Jamaat-e-Islami (@BJI_Official) August 6, 2024
Bangladesh Jamaat-e-Islami’s Ameer Dr. Shafiqur Rahman addressed the countrymen at press conference in the presence of a large number of journalists organized on… pic.twitter.com/M8KifbNX1n
বাংলাদেশে হিন্দু মন্দিরে দুষ্কৃতী হামলার দায় স্বীকার করেছে জামাত-ই-ইসলামি। সেইসঙ্গে সকলের সম্পত্তি রক্ষার জন্য দেশবাসীর কাছে আবেদন করেছে জামাত। জামাত-ই-ইসলামির আমির ডা. শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, কিছু ব্যক্তির উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে একদল দুর্বৃত্ত শহর-বন্দর-গ্রামে ভাঙচুর শুরু করে। কোনো কোনো এলাকায় সরকারি ভবন, প্রতিপক্ষের বাড়ি ও বিভিন্ন ধর্মের উপাসনালয়ে হামলা হয়েছে। ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। একজন বিবেকবান মানুষ এসব করতে পারে না। দুর্বৃত্তদের এসব কর্মকাণ্ডের আমরা কয়েকবার নিন্দা করেছি এবং এখনো নিন্দা করছি। এমতাবস্থায় আমরা সকল ধর্মের মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় অভিভাবকের ভূমিকা পালনের জন্য দেশবাসীর পাশাপাশি আমাদের সংগঠনের জনশক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। আমাদের দেশে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যালঘু নয়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যারা এদেশে জন্মগ্রহণ করেছে তারা সবাই এদেশের নাগরিক এবং সবার সমান অধিকার রয়েছে। সুতরাং সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যালঘুর প্রশ্নটি অবৈধ।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে কার্ফু জারি থাকা সত্ত্বেও সোমবার রাজধানী ঢাকায় ভাঙচুর চলেছে। প্রসঙ্গত, অশান্ত পরিবেশের ফাঁকে বাংলাদেশে বিভিন্ন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় হামলার অভিযোগ ওঠে। যা সামাল দিতে সেনার তরফ থেকে কমান্ডারদের ফোন নম্বর প্রকাশ করা হয়। হিন্দুদের ওপর হামলা হলে সেই সব নম্বরে ফোন করতে বলা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেয় আন্দোলকারীদের একাংশ। উল্লেখ্য, সরকার বিরোধী আন্দোলনের আছিলায় বাংলাদেশে হামলা চলছে সংখ্যালঘুদের ওপরে। এমনই দাবি করল বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হল, সেদেশের ২৯টি জেলায় সংখ্যালঘুদের ওপরে হামলা চালানো হয়েছে। অরাজনৈতিক সাধারণ মানুষের বাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে অভিযোহ। ভাঙা হয়েছে মন্দির। বাংলাদেশে ৪টি জেলাতে অন্তত ৯টি মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ঐক্য পরিষদের নেতাদের বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে এক শ্রেণির বিক্ষোভকারী। বহু জায়গায় হিন্দু সংখ্যালঘুদের বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ।