সঙ্কটে বাংলাদেশ। সেদেশের কাছে ভারতের আদানি গোষ্ঠী বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ ৮৫০ মিলিয়ন ডলার পাবে। কিন্তু সেই টাকা এখনও সবটা পরিশোধ করতে পারেনি বাংলাদেশ। সেজন্য গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে আদানি প্ল্যান্ট অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বর্তমানে একটি ইউনিট থেকে প্রায় ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, যা জাতীয় উৎপাদনকে প্রভাবিত করেছে। আদানিকে টাকা পরিশোধ করতে না পারলে বাংলাদেশ বিপদে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কী বিপদে পড়তে পারে বাংলাদেশ, টাকা পরিশোধ করতে না পারলে কি বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দেওয়া বন্ধ করে দেবে আদানি গ্রুপ? এমন নানা প্রশ্ন উঠছে। এই প্রতিবেদনে সেগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব।
প্রথমেই জানাব বাংলাদেশ কেন বকেয়া মেটাতে পারছে না?
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ মুদ্রাস্ফিতির সমস্যায় ভুগছে। বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কটের কারণে চাপে রয়েছে মহম্মদ ইউনুসের দেশ। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আদানির পাওনা পরিশোধ এবং ভবিষ্যতে যাতে বিদ্যুৎ পরিষেবা সচল থাকে সেজন্য ১৭০ মিলিয়ন ডলারের একটি লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) জমা দেওয়ার শর্ত দেয় বাংলাদেশ। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) কৃষি ব্যাঙ্কে মাধ্যমে এলসি খোলার উদ্যোগ নেয়। কিন্ত তা চুক্তিমতো হয়নি বলে দাবি করা হয়। এদিকে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, পিডিবি প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১৮ মিলিয়ন ডলার শোধ করছে। চার্জ ২২ মিলিয়ন ডলারের বেশি হয়ে যাচ্ছে এবং এই কারণেই পেন্ডিং পেমেন্ট ফের বেড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে কী কী প্রভাব পড়তে পারে?
বিদ্যুতের সঙ্কটের কারণে স্বল্পমেয়াদি এবং সুদূরপ্রসারী দুই রকমই প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশে। বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে। এক্সপোর্ট বিজনিসে অনেকটা এগিয়ে বাংলাদেশ। রপ্তানিতেও সেই দেশ এগোচ্ছে। এই দুই ক্ষেত্র প্রভাবিত হতে পারে। জুতো, জামা কাপড়, মাছ ইত্যাদি বিদেশে যায় বাংলাদেশ থেকে। বিদ্যুতের ঘাটতি হলে সেই ব্যবসা কমে যাবে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশ যে বৈদেশিক মুদ্রা আমদানি করত তার পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। হাসিনার আমলে বাংলাদেশে ছোটো, বড় ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠেছিল। সেই শিল্পগুলোতে প্রভাব ফেলতে পারে বিদ্যুৎ। যদি তা হয় তাহলে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আদায় কমে যাবে। বিদ্যুতের ঘাটতি হলে তার প্রভাব কিন্তু বাংলাদেশ হারে হারে টের পাবে।
আরও একটি সঙ্কটে পড়তে পারে বাংলাদেশ। আদানি গোষ্ঠী একা নয়। আরও অনেকে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দেয়। আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে যে অবস্থা বাংলাদেশ সরকারের এই মূহূর্তে চলছে তা দেখে অন্য বিদ্যুৎ সরবরাহকারীরাও মহম্মদ ইউনুসের দেশের উপর আস্থা হারাতে পারে। তারাও বকেয়া চেয়ে বসতে পারে। এতে কিন্তু সঙ্কটে পড়বে সেই দেশ।