নাট্যশিল্পী গৌতম হালদারকে চেনেন না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। মঞ্চে তাঁর অভিনয়ের গুণমুগ্ধের সংখ্যা প্রচুর। সম্প্রতি গৌতম হালদার এসেছিলেন জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো সারেগামাপা-এর মঞ্চে। আর সেখানে তিনি জয় গোস্বামীর লেখা বেণীমাধব কবিতাটি একেবারে নিজের ছন্দে পাঠ করে শোনান সকলকে। আর তাঁর সেই পারফরমেন্সের ভিডিও ভাইরাল হতেই রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করেছেন নেটিজেনের একাংশ।
জয় গোস্বামীর লেখা বেণীমাধব কবিতাটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক নারীর অসম্পূর্ণ ভালোবাসার কাহিনী। কবির সেই কবিতাকে আম জনতার কাছে আরও ভালভাবে পৌঁছে দিয়েছিলেন গায়িকা লোপামুদ্রা। এতদিন তাঁর কন্ঠেই বেণীমাধব গানটি শুনে এসেছেন সকলে। জয় গোস্বামীর লেখা বেণীমাধব সারেগামাপা-এর মঞ্চে গেয়ে শোনান নাট্য ব্যক্তিত্ব গৌতম হালদার। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ক্লিপ ভাইরাল হতেই ট্রোল শুরু হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করা হয়েছে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের তরফে। কিন্তু তাতেই কটাক্ষের বন্যা। সম্প্রতি চ্যানেল কর্তৃপক্ষের তরফে তাদের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয় গৌতম হালদারের কন্ঠে বেণীমাধব। ক্যাপশনে লেখা হয়, 'সঙ্গীতের সেরা মঞ্চে গৌতম হালদারের অনবদ্য উপস্থাপনা'। আর পোস্টটি রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
সোমবার থেকেই ভাইরাল ভিডিওতে একের পর এক কটাক্ষ শুরু হয়ে যায়। সকলেই গৌতম হালদারের কন্ঠে ও তিনি যে ভঙ্গিমায় বেণীমাধব কবিতাটি পরিবেশন করেছেন তা পছন্দ করছেন না। খুবই খারাপ ও কঠিন ভাষাতে গৌতরম হালদারের এই কবিতা পরিবেশনের নিন্দা হয়েছে। কেউ কেউ লিখছেন, বিশ্বাস করুন, আপনি দায়িত্ব নিয়ে বেণীমাধবকে বাড়ি ছাড়া করেছেন। বেণীমাধবের মানসিক শান্তির প্রয়োজন। এই মুহূর্তে। আপনি ভীষণ গুণী মানুষ তবে পরবর্তীতে আর এমন সাহস না দেখালে খুব খুশি হব। এটা অনুরোধ। কারোর মতে, বেণীমাধব এর চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে দিয়েছে , এত নিকৃষ্টতম একটা পরিবেশনা, এটাকে কি করে সবাই ভালো নাট্যকার বলে কে জানে ... জঘন্য। অপর একজন লেখেন, 'কার কেমন লাগল জানি না। আমার জঘন্য লাগল। সঙ্গে শরীরী ভাষা আরও কুৎসিত।'চ্যানেলের পোস্টে কেউ লিখলেন, 'মোটেই ভাল লাগেনি। এর থেকে লোপামুদ্রা মিত্রের গানটি চোখ বন্ধ করে শোনা অনেক ভাল। আপনি বড় মাপের শিল্পী কিন্তু দয়া করে এভাবে আর আবৃত্তি বা গান করবেন না। অসুস্থ বোধ হয় আমাদের। যদিও এই ট্রোল বা কটাক্ষ নিয়ে গৌতম হালদার কোনও মন্তব্য করেননি।
তবে চ্যানেলের পোস্ট করা ভিডিও ক্লিপিংসে দেখা গিয়েছে যে গৌতম হালদারের এই পারফরমেন্স মুগ্ধ হয়ে শুনছেন ইমন চক্রবর্তী, অন্তরা মিত্র ও শান্তনু মৈত্র। তাঁদের চোখে-মুখে কোনও বিরক্তির প্রকাশ দেখা যায়নি। যদিও গৌতম হালদারের পক্ষ নিয়ে কমেন্ট বক্সে নিজের মত প্রকাশ করেছেন অপর নাট্যকর্মী পলাশ অধিকারী। তিনি লেখেন, 'টিভির মঞ্চে উনি নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেন না ঠিকই। ওঁর ম্যানারিজমের সঙ্গে যাঁরা পরিচিত নন তাঁরা জানেন না, উনি বাংলা থিয়েটারের মঞ্চে বটবৃক্ষ, প্রবাদপ্রতিম, কিংবদন্তি হয়ে থেকে যাবেন। জানলে অবাক হবেন আপনাদের বহু পছন্দের অভিনেতা, যাঁরা মঞ্চ থেকে এসেছেন, তাঁদের উনি শিক্ষক, অনুপ্রেরণা। যাঁরা এখানে ওঁকে দেখে হাসাহাসি করছেন ওঁকে নিয়ে কটুকথা বলছেন অথচ, মঞ্চে ওঁর 'মেঘনাদবধ কাব্য', 'সোজন বাদিয়া'র ঘাট', 'মেফিস্টো', 'গোত্রহীন', 'ফেরিওয়ালার মৃত্যু' ইত্যাদি থিয়েটার এবং 'কাব্যে গানে' (এই পারফরম্যান্স সেটারই অংশ) দেখেননি, এটুকু জানাতেই পারি যে, ওঁকে মঞ্চে এইসব প্রযোজনায় না দেখাটা, এই প্রজন্মের সত্যিকারের সংস্কৃতি রসিক বাঙালি হলে আপনাদের চরম দুর্ভাগ্য বলে জানবেন। আশা করি, যাঁরা প্রকৃতই চেনেন ওঁকে তারাও আমার সঙ্গে একমত হবেন। যাই হোক উনি সারা পৃথিবীর অনেকের কাছে এক বাঙালি হিসেবে বিরাট সম্মানীয়, বাংলা থিয়েটারের ইতিহাসে ওঁর নাম সোনা দিয়ে লেখা থাকবে। সুতরাং এমন একজন কিংবদন্তির, সব বাঙালির কাছ থেকে অনেকটা শ্রদ্ধা প্রাপ্য। একটু সহানুভূতি রাখবেন আশা করি। দুমদাম কাউকে অপমান করার আগে ওঁর উচ্চতাটা একবার যাচাই করবেন।'