হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিনই বাকি পুজোর। আগামী সপ্তাহেই শেষ হবে পিতৃপক্ষের। সূচনা হবে মাতৃপক্ষের। তবে পুজোর দুমাস আগেই শহর কলকাতায় ঘটে গিয়েছে অমানবিক এক ঘটনা। আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পর গোটা রাজ্য মুখরিত প্রতিবাদ-আন্দোলনে। এই আবহেই পুজো এসেছে এই বছর। প্যান্ডেল, হোর্ডিং সব থাকা সত্ত্বেও এই বছর পুজোর সেই চেনা জৌলুস নেই। সবটাই ভীষণভাবে ম্লান। প্রতিবছর চট্টোপাধ্যায় পরিবারে মা দুর্গা আসেন। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে পুজো নিয়ে সুদীপা চট্টোপাধ্যায় নিয়েছেন বড় সিদ্ধান্ত। bangla.aajtak.in-কে সেই কথাই জানালেন সুদীপা।
সুদীপা জানান এই বছর তাঁদের চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজো প্রায় ১৪৫ বছরে পা দিল। তবে বাড়ির পুজো তো পুজোর মতো করেই হচ্ছে, মায়ের পুজো আলাদা করে তো কিছু বলা নেই কারণ এটা পাড়ার পুজো তো নয়। এখানে কিছু পাল্টানো যায় না, জানান তিনি। সুদীপা বলেন,' আমরা যে স্ত্রী আচার মেনে পুজো করি সেটাই করব, শুধু অতিথি অ্যাপায়ন এই বছর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর এই বছর কলাবউ স্নানটাও ব্যক্তিগতভাবে রাখব। বাকি পুরো পুজোটাই একটু ব্যক্তিগতই থাকবে। যে সব দর্শনার্থীরা আসতে চান তাঁরা আসবেন, কারণ মা যাঁকে দর্শন দিতে চান আমরা তো আর বাঁধা দিতে পারি না। যারা আসবেন মায়ের দর্শন করবেন, প্রসাদ নিয়ে চলে যাবেন। যে রকম কোভিডের সময় হয়েছিল, এই বছর প্যান্ডেলের সাজসজ্জাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক তো এই বছর আমার মা মারা গিয়েছেন সেই শোকটা রয়েছে আর একটা বিষয় হল যে ডাক্তারটি মারা গিয়েছেন শুনেছি তিনিও নাকি বাড়িতে দুর্গাপুজো করতেন। তাঁকে তিলোত্তমাই বলি বা অভয়াই বলি দুটো নামই দুর্গার। সেই মেয়েটি আনন্দ করতে পারল না, আর আমরা সবাই মিলে হইহই করব, এটা তো হয় না। সুদীপা বলেন, আমি এই বছর নতুন জামা-কাপড়ও কিনি নি। শুধু মায়ের পুজোর সময় নতুন একটা শাড়ি পরতে হয় নয়তো ভোগ রান্না করা যায় না, তাই একেবারে সাদামাটা সুতির শাড়ি রাখা রয়েছে। এমনকী বরণের সময় গয়নাগাঁটি পরে যে বরণ করতাম প্রত্যেক বছর, এ বছর লকার থেকে গয়নাগাঁটিও আনিনি। যেটুকু না পরলেই নয় সেটা পরেই মাকে বরণ করব। তবে মায়ের সাজে কোনও পরিবর্তন হবে না।'
সুদীপার বাড়ির পুজোতে এবার আর নেমন্তন্ন করে ই্ডাস্ট্রির কাউকেই ডাকা হবে না। তবে তাঁর ও অগ্নিদেবের বাড়ির পুজোতে বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়), ঋতুদি (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) কলকাতায় থাকলেই আসেন। এই বছরও তাঁরা শহরে থাকলে সুদীপার বাড়ির পুজোতে ঢুঁ মেরে যাবেন। সুদীপা বলেন, 'অষ্টমীর রাতে গান বাজনারও আয়োজন করা হয়। সেটা আমার মা বড্ড ভালবাসতেন। তাই এই বছর আর সেটাও করছি না। আসলে মন ভাল নেই তাই উদযাপনে ঠিক মন নেই।'
সুদীপার ছেলে আদি কিন্তু পুরোটাই বুঝতে পারছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে বাচ্চা তো, ওর আনন্দটাকে তো বাধা দিতে পারছেন না মা সুদীপা। তবে এই পরিস্থিতিতে এ বছর আদিকে কিছুই কিনে দেননি তিনি। সুদীপার কথায়, 'ও যেরকম পাবে আর আমি কাপড় কেটে জামা বানিয়ে দিচ্ছি। আসলে মনটা চাইছে না, ভালো লাগছে না। এই বছর আদি, আদির দাদা ও বাবা তিনজনকেই আমি কাপড় কেটে জামা বানিয়ে দিচ্ছি।' সুদীপা জানিয়েছন, চতুর্থীর দিন আদিকে আশেপাশের একটু ঠাকুর দেখিয়ে আনবেন। কবে আসছে সুদীপার বাড়িতে মা? এ প্রসঙ্গে সুদীপা বলেন, 'ঠাকুরের কাজ মোটামুটি শেষ হয়ে এসেছে। এখন লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে রয়েছেন, মহালয়ার দিন বেনারসী দিতে যাব। রংটা হয়েছে এখনও গর্জন তেল মারা হয়নি। মহালয়ার দিনই মনে হয় গর্জন তেলের প্রলেপ মারা হবে চোখটা আঁকার পর।' পঞ্চমীর দিন চট্টোপাধ্যায় পরিবারে আসবেন মা। অতএব সুদীপার বাড়িতে পুজো হবে তবে হইহুল্লোড়, বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া আনন্দ এই অংশটুকু এ বছর বাদই রাখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, সুদীপা নিজের ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন। সেখানে নিজের রান্নার শো সঞ্চালনা করছেন। সেই সঙ্গে ব্যবসাও চালিয়ে যাচ্ছেন জোরকদমে।