বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম সারির প্রযোজনা সংস্থা বলতে প্রথমেই যাদের কথা মাথায় আসে, তারা হল এসভিএফ। আর এই এসভিএফের বিরুদ্ধেই উঠল অভিযোগ। কিছুদিন আগেই মৌমিতা পণ্ডিত নামে এক অভিনেত্রী তিনি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পেজে এসভিএফ ও তার কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতার নাম করে আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন। তবে এটার সঙ্গে এসভিএফ যে কোনওভাবেই যুক্ত নন তা তারা সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিবৃতি জারি করে জানিয়ে দিয়েছে।
টলিপাড়ায় কাস্টিংয়ের নাম করে আর্থিক জালিয়াতি যে চলে সেটা কারোর অজানাই নয়। অনেক মানুষই ইন্ডাস্ট্রির নামি প্রযোজনা সংস্থার নাম ভাঙিয়ে এই কাজ করে চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। এবার এসভিএফ ও শ্রীকান্ত মোহতার নাম করে আর্থিক জালিয়াতি। যদিও সেই ফাঁদে পা দেননি অভিনেত্রী মৌমিতা পণ্ডিত। থিয়েটার জগতের মানুষ হলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মৌমিতার অভিনয় সকলকে মুগ্ধ করেছে। ‘রক্তপলাশ’ সিরিজ থেকে শুরু করে ‘সূর্য’, ‘কণ্ঠ’র মতো একাধিক ছবির সুবাদে মৌমিতা পণ্ডিত বেশ পরিচিত মুখ। একসময়ে বলিউডেও কাজ করেছেন কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে। তাও আবার বিশাল ভরদ্বাজের সঙ্গে। নিজের কাস্টিং সংস্থাও খুলেছিলেন মৌমিতা। সেই মৌমিতাকে শ্রীকান্ত মোহতার ভুয়ো প্রোফাইল থেকে যোগাযোগ করা হয়।
প্রথমে অভিনেত্রী সেটা আসল প্রোফাইল ভেবেছিলেন। কারণ ভুয়ো প্রোফাইলে অনেক চেনা-পরিচিত বন্ধুরাই ছিলেন। তাই প্রথমে সন্দেহ হয়নি। এক সংবাদমাধ্যমকে অভিনেত্রী জানিয়েছেন, ওই প্রোফাইল থেকে সরাসরি তাঁকে কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ইন্ডাস্ট্রিতে সকলের ফোন নম্বর থাকে না, তাই সোশাল মিডিয়াতেই যোগাযোগ করার চল রয়েছে। তাই সন্দেহ হয়নি। তবে পরে ভুল ভাঙে! মৌমিতা জানিয়েছেন, গত ৫ অক্টোবর সিড নামে এক কাস্টিং ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা হয় মৌমিতার। আবির চট্টোপাধ্যায়ের একটি ছবির জন্য তাঁকে অডিশন দিতে বলা হয়। প্রযোজনা সংস্থার নাম লেখা চুক্তিপত্রে অভিনেত্রীকে স্বাক্ষরও করান। সরকারি পরিচয়পত্রের জেরক্সও নেন। কিন্তু তারপরই অডিশনের জন্য মৌমিতাকে কাছের একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিনেত্রী ততক্ষণে টের পান যে কিছু একটা গোলমাল হচ্ছে। তাই হোটেল থেকে বেরিয়ে অডিশনের ভিডিও রেকর্ড করে কাস্টিং ডিরেক্টরকে পাঠিয়ে দেবেন বলে জানিয়ে দেন। এরপরই ঘটে গণ্ডগোল।
মৌমিতাকে বলা হয় আর্টিস্ট ফোরামের কার্ড না থাকায় অভিনয় করা যাবে না, টাকার বিনিময়ে করতে হবে। এরপর শ্রীকান্ত মোহতার ভুয়ো প্রোফাইল থেকে অভিনেত্রীর কাছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা চাওয়া হয় কিউআর কোড পাঠিয়ে। মৌমিতা টাকা দিতে অস্বীকার করায় কেরিয়ার ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় তাঁকে। এরপরই পুরো ঘটনাটা জানিয়ে সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। কলকাতা পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন শাখাতেও বিষয়টি জানিয়েছেন। এই বিষয়ে অভিনেত্রীকে বেণী বসু, তনিকা বসু, সুদীপ্তা চক্রবর্তীরা সাহায্য করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়াতেও গোটা ঘটনাটি জানান মৌমিতা।
এরপরই তৎপর হয়ে ওঠে এসভিএফ প্রযোজনা সংস্থা। তারা সোশ্যাল মিডিয়া পেজে এক বিবৃতি জারি করে বলে যে তাদের নজরে এসেছে যে কিছু অজানা ব্যক্তি এসভিএফ-এর প্রতিনিধি দাবি করে অসৎ কাজ করছে। এসভিএফ বা এসভিএফের কোনও প্রতিনিধি অডিশন বা কাস্টিংয়ের নামে অর্থ বা অন্য কোনও ধরনের অনুগ্রহ দাবি করে না। এমন কোনও মেসেজ, কল বা ইমেলে যারা অর্থ চাইছে, তা প্রতারণামূলক। এই অসৎ কাজের সঙ্গে এসভিএফ কোনওভাবে যুক্ত নয়। এর সঙ্গে এসভিএফ এও জানায় যে কেউ এই ফাঁদে পড়ার আগে এসভিএফের সঙ্গে যেন যোগাযোগ করে নেয়। যোগাযোগ ও ইমেল অ্যাড্রেসও দিয়ে দেওয়া হয় এই বিবৃতির সঙ্গে।