গায়ক অরিজিৎ সিংকে যতই চিনবেন, যতই জানবেন ততই যেন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি আপনার বেড়ে যাবে। অগাস্টে অসুস্থ থাকার কারণে তিনি সব শো বাতিল করেছিলেন। তবে সুস্থ হতেই সেপ্টেম্বরে প্রথম শো করলেন লন্ডনে। আর সেখান থেকে এড শিরানের সঙ্গে যুগলবন্দি রীতিমতো ঝড় তুলেছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। এবার সেই লন্ডনের কনসার্ট থেকেই অরিজিৎ জানিয়ে দিলেন মঞ্চ তাঁর কাছে মন্দিরের মতো।
অরিজিতের ফ্যানপেজ থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে সম্প্রতি। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, সামনের সারিতে থাকা এক শ্রোতা, তাঁর অর্ধেক খাওয়া খাবারের প্যাকেট ও পানীয় রাখে স্টেজের উপরে। অরিজিৎ গান গাইতে গাইতেই সেটা তুলে নেন এবং সেখানে থাকা কালো পোশাকের নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে তুলে দেন। সেই সময় অরিজিৎ গাইছিলেন অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল। গান সামান্য সময়ের জন্য থামিয়ে নিজের এই কাজের জন্য ক্ষমা চান। তারপর মঞ্চে হাত দিয়ে ছুঁয়ে প্রণাম করেন। আর বলে ওঠেন, ‘এই মঞ্চ আমার কাছে মন্দির। আপনারা এর উপর খাবার রাখতে পারেন না।’
অরিজিতের এই ভিডিও সকলের মন ছুঁয়ে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত অবস্থায় এক তরুণী ডাক্তারকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় আর কবে নামে একটা গান রচনা করেছেন অরিজিৎ। যা এই মুহূর্তে সকলের কাছে প্রতিবাদের ভাষা। তবে এর কারণে, অনেকেরই চক্ষুশূল হতে হয়েছে তাঁকে। এমনকী, বাংলার শাসক দলের লোকজনের মধ্যে অনেকেই অরিজিৎকে কটাক্ষ করার সুযোগ ছাড়েননি।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে অরিজিৎ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে না পারলেও লিখেছেন গান 'আর কবে'। যা শহরের প্রতিবাদের প্রধান গান হয়ে উঠেছে। অরিজিতের এই গান এখন সকলের কন্ঠে কন্ঠে ছড়িয়ে পড়েছে। লন্ডনের কনসার্ট থেকেই অরিজিৎ জানিয়ে দিয়েছেন যে এটা শুধু তাঁর কাছে গান নয়। তাঁর কাছে অনুরোধ আসে 'আর কবে' গানটি গাওয়ার। এরপরে যেন একদম অন্য অরিজিৎকে সকলে চোখের সামনে দেখেন। গিটার হাতে শান্ত মাথায় তিনি যা বললেন, তা একেবারেই অস্বীকার করা যায় না। অরিজিৎ বলেন, 'এটা কোন গান নয়। আমি আবারও বলছি এটা কোন গান নয়। একটা খুব ভয়ংকর কিছু শেষ হতে চলেছে। হতে দেওয়াই উচিত। প্রতিবাদটা হতে দেওয়াই উচিত। সব সময় সব জায়গায় সবকিছু সম্ভব নয়। নির্দিষ্ট পরিসরে সেটা হওয়াটাই কাম্য। সঠিক জায়গায় এবং সঠিক সময় সবটা হওয়া ভালো। এই জায়গাটা সেই জায়গা নয়। কারণ মানুষ আমাকে এখানে শুনতে এসেছেন আন্দোলন করতে বা প্রোটেস্ট করতে নয়।' তিনি আরও বলেন, 'মানুষ আমাকে এখানে শুনতে এসেছে এবং তাদেরকে গান শোনানোটা আমার পেশা। এবং তুমি যার কথা বলছ, সেটা আমার হৃদয়, সেটা আমার কোন গান নয়। এইটা সঠিক সময় বা সঠিক জায়গা নয়। যদি মনে হয়ে থাকে তাহলে এখানে অনেক বাঙালি আছেন তাদেরকে বলছি, আপনারা কলকাতায় যান এবং সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ করুন, আন্দোলন করুন। সেখানে রাস্তায় নেমে মানুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলুন।'