যৌন হেনস্থার অভিযোগে প্রথমে ডিরেক্টর্স গিল্ড থেকে সাসপেন্ড আর তারপরে বিষ্ণুপুর থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে পরিচালক অরিন্দম শীলের বিরুদ্ধে। টলিপাড়ার এক অভিনেত্রী পরিচালকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন। যার জেরে পরিচালককে রাজ্য মহিলা কমিশনের পক্ষ থেকে ডেকে পাঠানো হয় এবং পরে কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতেই তাঁকে ডিরেক্টর্স গিল্ড থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। সেদিনের শ্যুটিং সেটে অভিনেত্রীর সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল তা নিয়েই মুখ খুললেন bangla.aajtak.in-এর কাছে।
অভিনেত্রী বলেন, 'এই ঘটনা ঘটেছিল আমাদের একটা শ্যুটিংয়ের ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের সিন চলার সময়। স্ক্রিপ্টে চুমু খাওয়ার সিন থাকলেও আমরা যারা প্রথমদিকে সিনটায় অভিনয় করছিলাম তাঁরা জানিয়ে দিই যে আমরা চুমু খাব না। তো সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে এই দৃশ্যটার শ্যুট একটু অন্যভাবে নেওয়া হবে। সেখানে পরিচালক হঠাৎ করে আবেগতাড়িত হয়ে অভিনয় দেখানোর ছলে কোলে বসিয়ে আমার গালে একটি চুমু খেয়ে নেয়। কীভাবে পজিশন হবে, কে কোথায় বসবে এইসব দেখানোর সময়ই এটা হয়। সেখানে আমি খুবই অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়ি। এরপর যখন আমি এই বিষয় নিয়ে পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে যাই, সেখানে কোনও চিৎকার-চেঁচামেচি কিছুই না করে আমি পরিচালককে বলি যে আমার আরও কিছু দৃশ্য আছে কিন্তু আমি খুব অস্বচ্ছন্দ বোধ করছি। কিন্তু পরিচালক বিষয়টাকে খুব ক্যাজুয়ালভাবে নিয়ে একটু হালকাভাবে বলে কেন তোর ভাল লাগেনি?'
এরপর অভিনেত্রী বলেন, 'আমি এরপর মেকআপ রুমে এসে সঙ্গে সঙ্গে প্রযোজনা সংস্থার যিনি প্রতিনিধি ছিলেন তাঁকে মৌখিকভাবে গোটা ঘটনাটি জানাই, সামনাসামনি কথা বলি এবং আমার নিয়োগকর্তার সঙ্গে ঘটনাটি নিয়ে হোয়াটস অ্যাপে কথা হয়। এই হাউসে আমার চতুর্থ কাজ আর এই ধরনের ঘটনা আমি আশা করিনি বলেও জানাই তাঁকে। যেদিন এই সিনেমায় আমার শ্যুটিংয়ের শেষদিন ছিল সেইদিন আইনতভাবে (জুলাই মাসে) অভিযোগটা জানাই মহিলা কমিশনের কাছে। আমি আগেও অভিযোগটা করতে পারতাম, কিন্তু করিনি, কারণ আমার মনে এই সন্দেহ ছিল যে আইনতভাবে যদি কোনওভাবে শ্যুটিংয়ে প্রভাব পড়ে অথবা প্রযোজনা সংস্থার ক্ষতি হতে পারে। তাই আমার যেদিন শেষদিন ছিল শ্যুটিংয়ের সেদিনই পদক্ষেপ করি। সোমবার রাতেই অভিনেত্রী বিষ্ণুপুর থানাতেও অভিযোগ দায়ের করেছেন।'
অভিনেত্রী জানিয়েছেন যে মহিলা কমিশনে যখন এটা নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় যে তিনি কী চাইছেন? অভিনেত্রী তখন জানান যে তাঁর সঙ্গে প্রকাশ্যে যেহেতু ঘটনাটি ঘটেছে তাই প্রকাশ্যেই পরিচালককে ক্ষমা চাইতে হবে এবং বলতে হবে যে তিনি যেটা করেছেন তার জন্য উনি লজ্জিত। সেইমতো উনি অনেকবার জিজ্ঞেস করেন যে কী লিখব...তখন মহিলা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয় যে আপনি নিজে লিখুন, নিজে ক্ষমা চান। উনি তখন ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখে অভিনেত্রীর হাতে দেন। অভিনেত্রী বলেন, 'আমি বলেছিলাম চিঠিতে লিখতে যে উনি আমায় যৌন হেনস্থা করেছেন। সেটা উনি লেখেননি। উনি লেখেন যে অভিযোগকারিনী যে আমার সম্পর্কে অভিযোগ করেছে এরকম কিছু একটা লেখেন, যৌন হেনস্থা শব্দটা ব্যবহার করেননি। তাও যে পরিচালক এটা লিখেছেন তাতেও আমি ভেবেছিলাম যে ঠিক আছে উনি স্বীকার করেছেন এটাই অনেক। কিন্তু পরের দিন আমি অনেক জায়গায় পরিচালকের ইন্টারভিউতে দেখলাম যে উনি বলেছেন এই চিঠি নাকি তাঁকে দিয়ে জোর করে লেখানো হয় এবং তিনি এর বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেবেন। তখন ভাবলাম যে উনি যদি এটা করেন তাহলে তো এটা আরও বড় অশ্রদ্ধা করা, আমায় তো অপমান করছেন উনি। পরিচালক যদি আইনত ব্যবস্থা নেবেন বলে ঠিকই করে নেন তাহলে আমি কী দোষ করলাম, আমিও তখন বিষ্ণুপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করি। পুলিশ এবার নিজের মতো কাজ করবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি হবে।'
ডিরেক্টর্স গিল্ডের সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিনেত্রী বলেন, 'আমি না সত্যি প্রথম দিকে ঠিক কনফিডেন্স পাচ্ছিলাম না কারণ এইসব ঘটনা যাঁদের সঙ্গে ঘটে তাঁরা সাধারণত এড়িয়ে যেতে চায় বিষয়টি। ডিরেক্টর্স গিল্ড যখন দেখে যে পরিচালক প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন তার মানে উনি দোষ স্বীকার করেছেন, তারওপর ভিত্তি করে সাসপেন্ড করে তাঁকে। এটা শোনার পর মনে একটু শান্তি পাই যে অন্তত দোষটা স্বীকার করেছে। তারপরই ওঁনার ইন্টারভিউগুলো দেখে মনে হচ্ছে আমি অন্যায় করেছি এবং আমার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবেন। প্রসঙ্গত, অরিন্দম শীল দাবী করেছেন যে ঘটনাটি অ্যাক্সিডেন্টাল। অভিনেত্রী বলেন, হ্যাঁ, এটা খুবই অদ্ভুত একটা বিষয়, অ্যাক্সিডেন্টালি কাউকে চুমু খাওয়া যায় কিনা আমার জানা নেই। এটা মনে হয় না এই দাবীর সঙ্গে কেউ সহমত পোষণ করবে। আমি এটা যুক্তি দিয়েও ভাবতে পারছি না যে আমি কাউকে কী করে অ্যাক্সিডেন্টালি চুমু খেতে পারি।'
অভিযোগকারিনী বলেন, 'কাকতালীয়ভাবে যে ঘটনা নিয়ে এখন গোটা দেশ উত্তাল তার অনেক আগেই আমি মহিলা কমিশনে অভিযোগ করি আর যখন রায় বের হচ্ছে তখন আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ-আন্দোলন আমায় যেন আরও বেশি করে অনুপ্রাণিত করছে।' এই ঘটনার পর একেবারেই ভাল নেই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, 'একদম ভাল নেই এই ঘটনাটার পর থেকে। কারণ এখানে আমাকেও অনেক ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। যেগুলোতে আমি একদমই স্বাচ্ছন্দ বোধ করছি না। আমি খুব ট্রমাট্রাইজড ফিল করছি। আমাকে বলা হচ্ছে যে ঘটনা ঘটার পরও কেন আমি ভোর ৪টে পর্যন্ত শ্যুটিং করেছি। মনে হচ্ছে শ্যুটিং করে বোধ হয় আমি কোনও অন্যায় করে ফেলেছি। যারা প্রশ্ন করছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ জানেন না যে পশ বলে একটা আইন আছে, পশ-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রথমে নিয়োগকর্তা ও প্রযোজনা সংস্থাকে ঘটনাটি জানাতে হয়। তাই ঘটনার পরে সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগকর্তাকে মৌখিক ভাবে ও ফোনে মেসেজ করে পুরো বিষয়টি জানাই। প্রযোজনা সংস্থার পক্ষ থেকে কেন পরিচালককে জানানো হয়নি সেটা আমি কী করে বলব। তারা ভেতরে ভেতরে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা তো আমি বলতে পারব না। আমার যেখানে অভিযোগ জানানোর আইনতভাবে আমি জানিয়েছি।'