বালিগঞ্জ চ্য়াটার্জি বাড়ির পুজো বলে পরিচিত হলেও এই পুজোর আসল উদ্যোক্তা হলেন পরিচালক অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়, সুদীপা চট্টোপাধ্যায়। বালিগঞ্জের বাড়িতে মহা সমারোহে দুর্গাপুজো হয়। বাংলাদেশ থেকে এই পুজো এখন চলে এসেছে এপার বাংলায়। গত ১৩ বছর ধরে এই বাড়িতেই মা পূজিত হন একেবারে নিয়ম-নিষ্ঠা মেনে। ষষ্ঠী টু সপ্তমী সেখানে তারকাদের ভিড় লেগে থাকে। এই বছরও সুদীপার বাড়ির পুজোতে দেখা গেল তারকাদের ভিড়। যদিও সুদীপা আগেই জানিয়ে ছিলেন যে তিনি আমন্ত্রণপত্র দিয়ে কাউকে ডাকবেন না এই বছর তবে কেউ যদি মাকে দেখতে চান তাহলে তাঁরা আসতেই পারেন। প্রসঙ্গত, ুদীপা-অগ্নিদেবের এই পুজো আগে হত ঢাকা বিক্রমপুরের আদিবাড়িতে। এখন অবশ্য খাস কলকাতাতেই হয়ে আসছে।
এই বছর সুদীপা-অগ্নিদেবের বাড়ির পুজো পা দিল ১৪৫ বছরে। পঞ্চমীর দিন বাড়িতে এসেছেন মা। এবার বিদায়ের পালা। সুদীপা-অগ্নিদেবের বাড়ির পুজোয় বিসর্জনের রীতি একেবারেই অন্যধরনের। সুদীপা এ প্রসঙ্গে বলেন যে তাঁদের বাড়িতে মা পূজিত হন একেবারে বাড়ির কন্যা হিসাবে। মাকে নতুন শাড়ি পরিয়ে বিদায় জানানো হয়। কিন্তু অতীতের প্রচলিত কথা অনুযায়ী, শিব যেহেতু বিলাসিতাময় জীবন পছন্দ করেন না তাই মাকে বেনারসীর ওপরই পরিয়ে দেওয়া হয় বাংলার লাল পাড় তাঁতের শাড়ি। সুদীপা জানান, এখানে তো মা থাকেন একেবারে রানির মতো। কিন্তু স্বামীর ঘরে পাঠানোর সময় তাঁর দামি শাড়ি ঢেকে দেওয়া হয় একেবারে সাধারণ শাড়ি দিয়ে, মায়ের সোনার গয়না খুলিয়ে পরিয়ে দেওয়া হয় ফুলের গয়না।
আর কী খাইয়ে পাঠানো হয় মাকে? এ বিষয়ে সুদীপা বলেন, 'শিব বিলাসিতা করা পছন্দ করেন না, তাই যদি শোনেন উমা বাপের বাড়িতে এসে রানির মতো থেকেছেন, মাছ-মাংস খেয়েছেন, তিনি রাগ করতে পারেন, তাই মাকে বিসর্জনের আগে পান্তাভাত, ইলিশ মাছ ভাজা ও শাপলার টক খাইয়ে পাঠানো হয়। তবে দশমীর পর বাড়ির আর কোনও সদস্য ইলিশ মাছ খান না। আবার সরস্বতী পুজোর পরের দিন থেকে চ্যাটার্জি পরিবারে ইলিশ ঢোকে।' দশমীর দিন মায়ের বিসর্জনের আগে আরও এক মজার খেলা হয়। সুদীপা জানান, সপ্তমীর দিন মাকে আপেলের মালা পরানো হয়। দশমীতে সেই মালা থেকে আপেল খুলে নেন বাড়ির কোনও পুরুষ সদস্য। এরপর সেগুলি ছোঁড়া হয়, যার হাতে সেই আপেল আসবে এবং যে খেতে পারবে ওটা তাঁর কর্মফল লাভ হয়।
পঞ্চমীর দিনই সুদীপা-অগ্নিদেবের বাড়িতে উমা এসেছেন। লাল পাড় সাদা শাড়ি ও সোনার গয়না পরে পরে মাকে বরন করতে দেখা গেল অভিনেত্রীকে। গতকালই নিয়ম মেনে হয়েছে সন্ধিপুজো। এই বছর পুজোর আবহ একেবারেই অন্যধরনের তাই আড়ম্বর কিছুটা হলেও কম চ্যাটার্জি বাড়ির পুজোতে। পুজোর কটা দিন নিজের হাতেই ভোগ রান্না করেন সুদীপা। ভোগে থাকে মাছ-মাংস। এই বছরই মাকে হারিয়েছেন সুদীপা তার পাশাপাশি আরজি কর-কাণ্ডের প্রভাবও পড়েছে। সব মিলিয়ে ছিমছাম পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল এই বছর।