ফেডারেশনকে না জানিয়েই বাংলাদেশে গিয়ে শ্যুটিং করেছেন। আর তার জেরেই শাস্তির মুখে দিলখুশ-কিশমিশের পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়। আগামী তিনমাস পরিচালক ফ্লোরেই ঢুকতে পারবেন না। আর তার জন্যই তাঁর পুজোর ছবির পরিচালকের দায়িত্ব থেকেও রাহুলকে সরে যেতে হল। ফেডারেশনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সরব গোটা টলিউড। আর কী বলছে স্বয়ং ফেডারেশন। আর এই নিয়েই এবার bangla.aajtak.in-এর কাছে মুখ খুললেন ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস।
স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, 'দেড়-দুমাস আগে রাহুল মুখোপাধ্যায় যখন বাংলাদেশে গিয়েছিলেন সেই সময় ডিরেক্টরস গিল্ডের প্রেসিডেন্ড ও সেক্রেটারি ওঁনার থেকে জানতে চান যে উনি বাংলাদেশে কি কোন শ্যুটিংয়ের কাজে গিয়েছেন। তখন রাহুল মুখোপাধ্যায় বলেন যে তিনি কোনও শ্যুটিংয়ের কাজে যাননি, নিছকই ঘুরতে এসেছেন। এর কিছুদিন পর আবার যখন তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় যে ডিরেক্টরস গিল্ড জানতে পেরেছে আপনি কোনও শ্যুটিং করছেন, তখন রাহুল মুখোপাধ্যায় বলেন যে তিনি কোনও শ্যুটিং করছেন না কিন্তু একটা প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলতে এসেছেন। এরপর তিনি যখন ভারতে ফিরে আসেন তখন ডিরেক্টরস গিল্ডের প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি তাঁকে বলেন যে আপনি শ্যুটিং করে এসছেন যার প্রমাণ তাঁদের কাছে রয়েছে। কিন্তু পরিচালক গোটা বিষয়টি অস্বীকার করেন। এরপর ওনাকে নিয়ে ফেডারেশনের ইসি কমিটি মিটিংয়ে বসেন এবং সেখানে পরিচালককে প্রমাণ দেখানো হয়, যে যে আর্টিস্ট নিয়ে সেখানে শ্যুটিং করেছে তার সব প্রমাণই দেখানো হয়। এরপরই পরিচালক স্বীকার করেন তাঁর দোষ।'
ফেডারেশন সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, মাসখানেক আগে ও পার বাংলায় ‘গুপি শুট’ করেন ‘দিলখুশ’ ছবির পরিচালক। যা ফেডারেশনের নিয়মবিরুদ্ধ। কারণ, এতে গিল্ডের হাতেগোনা সদস্য থাকে। বাকিরা বাইরের। খবর জানাজানি হতেই ডিরেক্টর অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (ডিএইআই)-এর সভাপতি সুব্রত সেন এবং সম্পাদক সুদেষ্ণা রায় মেল করেন পরিচালককে। বারংবার পরিচালক রাহুলের মিথ্যে কথা বলাটাই নাকি কাল হল বলে মনে করছে ফেডারেশন।
জানা গিয়েছে, এই প্রজেক্টটা কলকাতায় শুরু হয়েছিল। অর্ধেক শ্যুটিং হওয়া একটি সিনেমা, যার বাকিটা বাংলাদেশে গিয়ে সম্পূর্ণ করেছেন পরিচালক। 'সমস্যাটা এখানেই', বলেন ফেডারেশন সভাপতি। তিনি বলেন, 'কোনও পরিচালক বাংলাদেশে শ্যুটিং করুক, লন্ডনে শ্যুটিং করুক, তিনি স্বাধীনচেতা মানুষ, তিনি বাইরে গিয়ে শ্যুটিং করতেই পারেন। কিন্তু শ্যুটিং যদি কলকাতায় হতে হতে সাময়িকভাবে বন্ধ হয় এবং সেই শ্যুটিংয়ে যে সব টেকনিশিয়ানরা কাজ করেছিলেন সেটা শুরু হওয়ার পর তাদের আবার কাজ পাওয়া উচিত, রাহুল মুখোপাধ্যায় কাউকে না নিয়ে সবাইকে বঞ্চিত করে উনি চলে গেছেন বাংলাদেশ সেখানে গিয়ে ছবি কমপ্লিট করেছেন। সবটাই হয়েছে ওখানকার স্থানীয়দের নিয়ে ও এখানকার কিছু কেয়ারটেকারদের নিয়ে। প্রথমে পরিচালক কিছুই স্বীকার করেননি, পরে তিনি ফেঁসে গিয়ে স্বীকার করেন। কারণ সব প্রমাণই তাঁর বিরুদ্ধে ছিল। এরপরই রাহুল নিজের ভুলটা স্বীকার করেন। এটাই মূল সমস্যা।'
ডায়রেক্টর গিল তাঁকে সাসপেনশন করার সিদ্ধান্ত নেয়, যেটাতে অনুমোদন দেয় ফেডারেশন। গিল পরিচালককে ২০ জুলাই থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাসপেন্ড করেছে। ফেডারেশন সভাপতির কথায়, রাহুল তাঁরও খুব কাছের। কিন্তু পেশাজীবনে এই ঘনিষ্ঠতা কোনও কাজের নয়। রাহুলের ক্ষেত্রেও একই শাস্তি যা অন্যদের জন্য। ফেডারেশনের নিয়ম জানা সত্ত্বেও কেন পরিচালক এই ধরনের কাজ করলেন? আর এই নিয়ম তৈরি হয়েছে অভিনেত্রীদের শ্লীলতাহানি রুখতে। কোনও পরিচালক যদি কম খরচে ছবি বানাবেন বলে সেই নিয়মে ফাঁকি দেন, তা হলে ফেডারেশনের কিছু বলার নেই। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই বিকেলে ডিরেক্টার্স গিল্ডের একটি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সরব হবেন পরিচালকেরা।