গত তিন বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার। তবে শেষরক্ষা আর হল না। শনিবার দুপুর ২টো ১৫ নাগাদ টালিগঞ্জে নিজের বাড়িতেই মারা যান বাংলা ইন্ডাস্ট্রির স্বর্ণযুগের অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার। তাঁর এই আকস্মিক প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা টলিউড। শ্রীলার অভিনয়ে মুগ্ধ ছিলেন জনপ্রিয় পরিচালকরা। মৃত্যুকালে কিংবদন্তী অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদারের বয়স হয়েছিল ৬৫।
পরিচালক মৃণাল সেনের হাত ধরেই সিনেমা জগতে পা রেখেছিলেন শ্রীলা। বাস্তব জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের ছবি বিভিন্ন সময়ে ফুটে উঠেছে তঁর অভিনয়ের মাধ্যমে। শ্রীলা মজুমদারের স্বতস্ফূর্ত অভিনয় তাঁকে টলিউডের ব্যতিক্রমী অভিনেত্রী হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। তাঁর প্রয়াণে সিনে দুনিয়া হারাল অভিভাবককে। ২০০৩ সালে মুক্তি পায় ঋতুপর্ণা ঘোষের চোখের বালি। যেখানে ঐশ্বর্য রাই বচ্চন অভিনয় করেছিলেন বিনোদিনীর চরিত্রে। তাঁর লিপে বাংলা কণ্ঠ দিয়েছিলেন প্রয়াত অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার। আসলে অভিনয় ছাড়াও শ্রীলা মজুমদার বাচিক শিল্পী হিসাবেও অসাধারণ ছিলেন। বেশ শান্ত স্বরে তিনি বাংলা উচ্চারণ করতে পারতেন। আর যে কারণেই ঐশ্বর্যর গলার জন্য ঋতুপর্ণর পছন্দ ছিল শ্রীলাকে।
প্রাথমিকভাবে শ্রীলা এই ডাবিং করতে রাজি ছিলেন না। তবে পরে অভিনেত্রী রাজি হন। শ্রীলা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমি যে ধরনের ছবিতে অভিনয় করি সেখান থেকে ডাবিং-এর বিষয়টা ঠিক আসে না। কিন্তু ঋতুদা (ঋতুপর্ণ ঘোষ) যখন আমাকে বলেন, বেশ অবাক হই। প্রথমে 'না' বলে দিয়েছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না, কী করা উচিত। পরে ঋতুদা বলেন, আমি যে কোনও নায়িকাকে বললে তাঁরা খুশি হয়ে করে দেবেন। আমিও বলি, তা হলে তাঁদেরই বলো। অবশেষে ডাবিং হয়। পরে অবশ্য সেই ডাবিং-এর জন্য প্রচুর প্রশংসা পেয়েছি'। চোখের বালি সিনেমায় ঐশ্বর্যর ডাবিং করে বেশ প্রশংসা পেয়েছিলেন শ্রীলা।
বাংলা সিনেমা সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে শ্রীলা মজুমদারের অভিনয়ে। শুধু টলিউড নয়, বলিউডেও কাজ করেছিলেন শ্রীলা। শাবানা আজমি, নাসিরুদ্দিন শাহ, স্মিতা পাটিলের সঙ্গেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘পালান’ সিনেমায় শেষ বার শ্রীলাকে পর্দায় দেখা গিয়েছিল। মৃণাল সেনের হাত ধরেই ছবির জগতে এসেছিলেন শ্রীলা। প্রথম ছবি ‘পরশুরাম’। তবে প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবি ‘একদিন প্রতিদিন’। ওই ছবিতেই নজর কেড়েছিলেন তিনি। বেশ কিছু মূলধারার ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন শ্রীলা। সেই ছবি মনেও ধরেছিল দর্শকদের। অঞ্জন চৌধুরির ‘পূজা’, হরনাথ চক্রবর্তীর ‘প্রতিবাদ’ তাঁকে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিল।