আরজি কর-কাণ্ডের ক্ষোভের আগুনের মধ্যেই শ্রীলেখা মিত্র অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁর সঙ্গে ঘটা যৌন হেনস্থার। অন্ধকার ঘরে অশালীনভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিলেন মালয়ালম সিনেমার পরিচালক রঞ্জিত। কেরল রাজ্য চলচ্চিত্র অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান রঞ্জিতের বিরুদ্ধে এই ধরনের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ রীতিমতো সকলকে হতবাক করে দেয়। শ্রীলেখার এই অভিযোগের জেরেই নাকি মালয়ালম পরিচালক রঞ্জিত কেরল চলচ্চিত্র অ্যাকাডেমি থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে এই পদত্যাগের পরেই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন পরিচালক। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে এক ছবির প্রি-প্রোডাকশনের সময় শ্রীলেখা মিত্রের সঙ্গে পরিচালক রঞ্জিত এই অশালীন ব্যবহার করেছিলেন বলে শোনা গিয়েছে।
রঞ্জিতের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাঙালি অভিনেত্রী, শ্রীলেখা মিত্র খুব গুরুতর ব্যক্তিগত অভিযোগ এনেছেন আমার বিরুদ্ধে। বেশ কিছুদিন ধরেই এমন হচ্ছে। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, আমি যখন কেরল চলচ্চিত্র অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, তখন থেকে একদল লোক দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে আসছে (শ্রীলেখার) এই অভিযোগকে সকলের সামনে নিয়ে আসার, এটা তারই ফল। পরিচালক আরও জানান যে এই অভিযোগের ফলে তাঁর ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে। এটা হয়ত সহজ নয়, কিন্তু পরিচালক প্রমাণ করবেন এই সব অভিযোগ মিথ্যে। পরিচালক শ্রীলেখাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি যেটা বলছেন সেটা মিথ্যে আর নয়তো এটা কোনও মিথ্যে অভিযোগের অংশ। রঞ্জিত বলেন, এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। আমি এর বিশদ বিবরণে যাচ্ছি না। যাই হোক, এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর পেছনের সত্যটা আমাকে জানতে হবে।
তবে এই ঘটনার পরই রঞ্জিতের কেরালা চলচ্চিত্র অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া নিয়ে নতুন করে জলঘোলা হচ্ছে। এমনিতেই জাস্টিস হেমা কমিটির রিপোর্টকে (Justice Hema Committee report) কেন্দ্র করে তোলপাড় মালয়ালম চলচিত্র জগৎ। শোনা যায়, এই রিপোর্টে সেখানকার বিনোদন জগতের একাধিক কাস্টিং কাউচ, যৌন হেনস্তা ও পারিশ্রমিকের বৈষম্যের কথা লেখা রয়েছে। প্রসঙ্গত, শ্রীলেখা মিত্রের এই অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছে ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, সিপিআই। তারা গোটা বিষয়টির তদন্ত চেয়েছে, যার ফলে জাস্টিস হেমা কমিটি এই নিয়ে তদন্ত করে।
পিটিআইয়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শ্রীলেখা তাঁর সঙ্গে ঘটা ঘটনা নিয়ে বলেন, মালায়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে শীর্ষ পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম রঞ্জিত, যিনি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালকও বটে। আমি তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলাম একটি প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলতে আর সেই সময় রঞ্জিতের ব্যবহার আমার ভাল লাগেনি। তিনি স্ক্রিপ্টসের কিছু কথা এতটাই বিশদে আলোচনা করেন যে আমি অস্বস্তি বোধ করি। শুধু তাই নয়, তিনি আমায় স্পর্শ করারও চেষ্টা করেন। আমি তৎক্ষণাত পরিচালককে জানিয়ে দিই যে আমি এই প্রজেক্টে কাজ করব না, সেখান থেকে বেড়িয়ে চলে আসি এবং তার পরের দিনই কলকাতা ফিরি। শ্রীলেখা এও জানিয়েছেন যে পরিচালক অন্য কোনও মহিলা অভিনেত্রীর সঙ্গেও যদি এরকম কিছু করে থাকেন তাহলে তাঁদেরও এবার মুখ খোলার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁকে এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। যদিও শেষপর্যন্ত চরিত্রটি আর শ্রীলেখা পাননি। পরিচালকের পালটা অভিযোগ, চরিত্র না পেয়েই অভিনেত্রীর এমন অভিযোগ। আর এমন পরিস্থিতিতে শুধু শ্রীলেখা নন, জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালক ডক্টর বিজুও রঞ্জিতের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বলে খবর।
প্রসঙ্গত, বরাবর 'ঠোঁটকাটা' বলে ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত শ্রীলেখা মিত্র। বিভিন্ন সময় নানা ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হন টলিউড অভিনেত্রী। সোশ্যাল মিডিয়ায় খুবই সক্রিয় থাকেন তিনি। একদিকে যেমন অনুগামীরা ভালোবাসা- শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দেয় নায়িকাকে, অন্যদিকে শ্রীলেখাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েন না নেটিজেনদের একাংশ। আবার ট্রোলারদের যোগ্য জবাব দিতেও ছাড়েন না অভিনেত্রী।