বাংলা জীবনমুখী গান মানেই যার কথা সবার আগে মাথায় আসে, তিনি হলেন নচিকেতা চক্রবর্তী। নয়ের দশকের তাঁর সব গান আজও হিট। বয়স নির্বিশেষে নচিকেতার গান থাকে সব সময় বাঙালি শ্রোতাদের প্রিয় প্লে-লিস্টে। নচিকেতা, একাধারে গায়ক, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে মন জয় করেছেন অসংখ্য মানুষের। সঙ্গীত জগতের পাশাপাশি অভিনয় ও ছোট পর্দায় সঞ্চালনাও করেছেন তিনি। এই মুহূর্তে আলোচনায় সঙ্গীতশিল্পী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তাঁর নাম। সম্প্রতি আরজি কর কাণ্ডের পর তাঁকে নিয়ে আরও চর্চা শুরু হয়।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পথে নেমেছেন তারকারাও। কিন্তু দেখা মেলেনি নচিকেতা চক্রবর্তীর। আর তা নিয়েই সমাজমাধ্যমে কটাক্ষের মুখে সঙ্গীতশিল্পী। যদিও কিছু দিন আগে একটি প্রতিবাদী গান শেয়ার করেন শিল্পী। তারপর থেকেই তাঁকে নিয়ে শুরু হয়েছে আরও চর্চা। এমনকী 'চটিচাটা' বলেও কটাক্ষ করা হয় তাঁকে। সে আলোচনা আরও তুঙ্গে ওঠে, নচিকেতার কিছু মন্তব্যের পর। ট্রোলিং, কটাক্ষ ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন করায়, সংবাদমাধ্যমকে শিল্পী বলেন, "৩১ বছর ধরে যে যুদ্ধ চালালাম, তার মানে মানুষ বোঝেনি। এখন দেখি আমাকেই ট্রোল করে লোকে। আমাকেই গালাগাল দেয়। কী চায় লোকে বুঝতে পারি না। আমার যা করার সবটাই আমি করেছি। পশ্চিমবঙ্গের ৭০ শতাংশ লোক আমায় ভালবাসেন বা আমার গান ভালবাসেন। কিছু লোক যদি আমায় গালাগাল দিয়ে আনন্দ পায়, পাক।"
শিল্পী আরও বলেন, "এই বয়সে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য রাস্তায় হাঁটতে হবে, এটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। বিচ্ছিন্ন কতগুলো লোক হাঁটছে, তাঁদের দল তৈরি করে। আমার সেরকম কোনও দল নেই। আমি একদম একা। আমি কেন বোকার মতো নেমে পড়ব, যেটা পরবর্তীকালে লোকে ব্যবহার করবে। আমি যেই রাস্তায় হাঁটতে যাব, বলবে ও তো রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করতে নেমেছে। রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা নয়। আমি মানবতার বিকৃতির বিরুদ্ধে হাঁটব। সেটা তো কেউ ভাবছে না। এই লোকগুলো আসলে অসুস্থ, এই লোকগুলোর ট্রিটমেন্ট দরকার। যারা এই কাজগুলো করছে। আমি মানবতার বিকৃতের বিরুদ্ধে হাঁটতে পারি, রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার, মধ্য সরকার, এদের বিরুদ্ধে হেঁটে কোনও লাভ হবে না আমার।"
প্রসঙ্গত, গত ২৪ জুলাই ছিল মহানায়ক উত্তম কুমারের প্রয়াণ দিবস। এই বিশেষ দিনে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের তরফে আয়োজন করা হয়েছিল একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের। এদিন বাংলা চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ‘মহানায়ক’ সম্মান প্রদান করা হয় শিল্পীদের। মহানায়ক সম্মানে ভূষিত হন নচিকেতা চক্রবর্তী। শিল্পী এই সম্মান পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই দারুণ খুশি অনুগামীরা। তবে প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনদের একাংশ। নিন্দুকদের প্রশ্ন, 'একজন সঙ্গীতশিল্পী হয়ে কীভাবে মহানায়ক সম্মান পেলেন নচিকেতা? আবার অনেক বলছেন, শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলেই, তাঁর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হল।
এই প্রসঙ্গে, বাংলা ডট আজতক ডট ইনের তরফে যোগাযোগ করা হয় নচিকেতা চক্রবর্তীর সঙ্গে। শিল্পী প্রথমে জানান তিনি খুবই খুশি এই সম্মান পেয়ে। নচিকেতা বলেন, "যে কোনও সম্মান পেলেই তো ভাল লাগে, আমারও খুব ভাল লাগছে। প্রাপ্ত সম্মান নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে, কিছুটা বিরক্ত হয়ে শিল্পী বলেন, "নোবেল পুরস্কার যে দেওয়া হয়, সেই নোবেল আসলে একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। তাহলে অন্যরা পুরস্কার পেলেন কেন? শুধু তো বিজ্ঞানীদের দেওয়া উচিত ছিল।"
কোনও সঙ্গীতশিল্পী প্রথম মহানায়ক পুরস্কার পেলেন, বলেই কি এত বিতর্ক? প্রশ্নের উত্তরে নচিকেতা বলেন, "বব ডিলানও তো এই পুরস্কার পান, তিনিও তো একজন গীতিকার- সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। ট্রেন্ড সব সময় ভাঙা হয়। এক্ষেত্রেও ট্রেন্ড ভাঙা হল। পরের বার হয়তো একজন আর্ট ডিরেক্টর পাবেন মহানায়ক পুরস্কার। এরকমও তো হতে পারে।" এরপরই নিন্দুকদের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন শিল্পী। তাঁর কথায়, "আমার কি বাংলা সংস্কৃতিতে কোনও অবদান নেই? কতগুলো ছাগল এখন চিৎকার করছে! আসলে নচিকেতা পেয়েছে, এটা বড় কথা না। আমার বদলে অন্য কেউ পেলেও এই জিনিসটাই হত। পুরস্কারটা দেওয়া হচ্ছে রাজ্য সরকারের থেকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিচ্ছেন বলেই, সমস্যাটা হচ্ছে অনেকের। আর কোনও সমস্যা নেই।"