তিনি মহানায়িকা। তাঁর জীবন তিনি নিজের মতো করে সাজিয়েছিলেন। পর্দা এবং তাঁর বাইরের জগৎ তিনি দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন। অসামান্য ব্যক্তিত্ব, ফিরিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়ের দেবী চৌধুরানীর অফার। নিজের নীতিতে কোনও আপস না করে কাজ করে গিয়েছেন। পর্য়ায় তাঁর ও উত্তম জুটি আজও চিরস্মরণীয়। নিজের ইচ্ছেতেই এক সময়ে আড়ালে চলে গিয়েছেন । আমৃত্যু সকলের থেকে আড়ালেই ছিলেন তিনি। তিনি আর কেউ নন, মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। ৬ এপ্রিল তাঁর জন্মদিন। আর এই জন্মদিনে জেনে নিন মহানায়িকার গান গাওয়ার প্রতিভা। অভিনয়ের পাশাপাশি সুচিত্রা গানও করতে পারতেন। তবে জীবনে একবারই রেকর্ডিং করেছিলেন। এরপরই হারিয়ে যান গায়িকা সুচিত্রা।
শোনা য়ায়, মেকআপ রুমে প্রায়ই সুচিত্রা সেন গুনগুন করে গান করতেন। কিন্তু কোনওদিন রেকর্ড করবেন তা ভাবেননি সুচিত্রা। সেই অসাধ্য সাধন করলেন গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। একটা গানেই কিস্তমাত। সুচিত্রা সেন বুঝিয়ে দিল কেবল নায়িকা নয়, গায়িকা হিসেবেও যথেষ্ট যোগ্য ছিলেন তিনি। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় গান বাঁধলেন সুচিত্রা। বনে নয় আজ মনে হয় গানটিও সমান জনপ্রিয় হয় সেই সময়। ১৯৫৯ সালে বাজারে আসে সেই রেকর্ড। এ প্রসঙ্গে গবেষক দেবদত্ত গুপ্ত বলেন, 'সঙ্গীতচর্চা ওঁর মধ্যে অবশ্যই ছিল। এমনকী তাঁর সঙ্গে শান্তিনিকেতনেরও যোগ ছিল। সুচিত্রা সেনের বোন স্বয়ং কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সঙ্গীত ভবনে গান শিখেছেন। কাজেই, একটা রেওয়াজ তো ছিল পরিবারে। অভিনেত্রী হওয়ার পর রেকর্ডিংয়ের যোগাযোগটা তাঁর কাছে আসে।'
তাই গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার কথায় যখন সুর দিলেন রবীন চট্টোপাধ্যায়, তখন কন্ঠে সুচিত্রা সেন যেন আদপেই যথার্থ রূপে আত্মপ্রকাশ করলেন। তা যেন আস্ত ম্যাজিক। নতুন করে রূপকথা রচনা করলেন নায়িকা। তবে সেটাই ছিল সুচিত্রার প্রথম ও শেষবারের মতো গান রেকর্ডিং। এরপর আর মহানায়িকাকে গান গাইতে দেখা যায়নি। শোনা যায়, সুচিত্রা নিজেই চাননি তাঁর মহানায়িকার তকমার সঙ্গে কোনও আপোষ করতে। তাই আর কোনওদিন গান গাইতে দেখা যায়নি সুচিত্রাকে।
একের পর এক খ্যাতির সিঁড়ি চড়তে চড়তে আত্মপরিচয়কে সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন ব্যক্তিত্বময়ী নারী। তাঁর আপোষ করা ধাঁতে ছিল না। স্টারডম, আভিজাত্য, কাজের প্রতি নিষ্ঠা এই সবের সঙ্গে ছিল ব্যক্তিগত জীবনের দোলাচল। তাই তো আচমকাই স্বেচ্ছায় আড়ালে চলে গেলেন নায়িকা। সকলের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যান মহানায়িকা সুচিত্রা সেন।