গত বছর পর্যন্ত তাঁর বাড়িতে পুজোর ঢাক বাজত। গোটা বাড়ি সেজে উঠত আলোতে। নিজে একা হাতে পুজোর যাবতীয় দায়িত্ব পালন করতেন আরজি করের সেই বছর ৩১-এর নির্যাতিতা তরুণী। কিন্তু এই বছরের অক্টোবরে চিত্রটা যে চিরতরে আলাদা হয়ে যাবে তা ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পায়নি। গত ৯ অগাস্ট আরজি করে খুন হন তরুণী চিকিৎসক। বাড়ির পুজো বন্ধ চিরতরে। কিন্তু মেয়েকে মনে করে পরিচিতদের বাড়িতে আমন্ত্রণ পাঠাতে ভোলেনি মৃতার মা-বাবা। সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করতেই নবমীর সন্ধ্যায় তরুণী চিকিৎসকের নাটাগড়ের বাড়িতে এলেন টলিউড তারকারা।
তারকাদের মধ্যে ছিলেন দেবলীনা দত্ত, চৈতি ঘোষাল, ঊষসী চক্রবর্তী ও সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়। ঊষসী সোশ্যাল মিডিয়া পেজে কিছু ছবি পোস্ট করেছেন, যেখানে তাঁরা মৃতার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলছেন। ঊষসী যে ছবি পোস্ট করেছেন সেখানে দেখা যাচ্ছে, যেখানে পুজো হত সেখানে সাদা কাপড় দিয়ে প্যান্ডেল করা। ব্যানারে লেখা, স্মৃতি ভারে মোরা পড়ে আছি, ভারমুক্ত, সে এখানে নাই। শোকসন্তপ পরিবারবর্গ। ঊষসী এই ছবি শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, আমাদের অষ্টমী। ঊষসী এক সংবাদমাধ্যমকে জানান যে তাঁরা ঠিক করেছিলেন পুজোর একটা দিন মৃতার পরিবারের সঙ্গে কাটাবেন তাই গিয়েছিলেন।
বাড়িতে পুজো হঠাৎ করেই শুরু করেছিলেন নির্যাতিতা তরুণী। তিনি পুজোর জোগাড় একা হাতে সামলাতেন। তাঁর মায়ের দায়িত্বে ভোগ রান্না। এ ভাবেই প্রতি বছর পুজো পরিবারের সকলকে নিয়ে আনন্দ করে কাটিয়ে দিতেন তিনি। তার ফাঁকে রোগীদের ফোন আসত। তিনি সাড়া দিতেন। তবে এখন মেয়ে শুধুই স্মৃতি তাঁদের কাছে। মেয়ের সেই স্মৃতি আঁকড়ে মা-বাবা ধর্না মঞ্চে যাচ্ছেন। যাঁরাই তাঁদের সমর্থন জানাচ্ছেন তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলছেন না। অপরদিকে কলকাতার ধর্মতলায় আমরণ অনশনে বসেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
পুজোর মধ্যেই সেই ধর্নামঞ্চে সাধারণ মানুষের ভিড় অবাক করার মতো। তাঁরা আসছে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছেন, হাত মেলাচ্ছেন। প্রায় রোজই সেই ধর্নামঞ্চে দেখা যাচ্ছে চৈকি, দেবলীনা, ঊষসী, সৌম্য, সুদীপ্তাদের। তাঁদের কাছে পুজো-উৎসব সবই ম্লান। এই তারকারা প্রথম দিন থেকেই প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন, ছিলেন ডাক্তারদের পাশেও। সেই অনুভূতি থেকেই অষ্টমী-নবমীর সন্ধ্যায় এই চার টলিউডের তারকা পৌঁছে গিয়েছিলেন মৃতা তরুণীর বাড়িতে, এক অন্যরকম পুজো কাটাতে।