ইসকনের সন্ন্যাসী অমোঘ লীলার মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। স্বামী বিবেকানন্দ ও শ্রী রামকৃষ্ণের ভাবধারা সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করায় আপাতত চর্চার শীর্ষে ইসকনের এই সন্ন্যাসী। যদিও তাঁর আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য ইসকনের তরফ থেকে ক্ষমা চাওয়া হয়। একমাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাঁকে।। তবে তাতেও কমেনি তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ। অনেকেই অমোঘ লীলাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। এবার ইসকনের সন্ন্যাসীকে নিয়ে কলম ধরলেন শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়।
শ্রীজাত তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পেজে লম্বা পোস্ট শেয়ার করেন। সেখানে তিনি অমোঘ লীলা দাসের বক্তব্য নিয়ে তাঁর ভাবনা-উপলব্ধি তুলে ধরেছেন। এমনকী শ্রীজাত অমোঘ লীলার হাতে থাকা বহুমূল্য ঘড়িটি নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। শ্রীজাত তাঁর পোস্টে লেখেন, 'বিষয়টা ইয়ার্কিরও নয়, তাচ্ছিল্যেরও নয়। বরং ভেবে দেখবার। এই অমোঘ লীলা দাস যা বলেছেন এবং যে-অঙ্গভঙ্গি সহকারে ও যে-ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলেছেন, তার উৎপত্তি হঠাৎ হয়নি। তিলে তিলে হয়েছে। নয়তো কোনও ‘প্রাতিষ্ঠানিক সন্ন্যাসী’ (যতই হাস্যকর শোনাক, এটাই সত্যি) হুট করে এ-ধরনের কথা বলবার সাহস পান না।' এখানেই শেষ নয়, লাইনে লাইনে তিনি অমোঘ লীলাকে বিঁধেছেন শ্লেষে, তাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছেন ভারতের সংস্কৃতি, শিক্ষার কথা।
রামকৃষ্ণ পরমহংস এবং স্বামীজির অপমান করেছেন অমোঘ লীলা। তাঁদের চিন্তা ভাবনা, ধ্যান ধারণা এমনকি সাধু হয়ে আমিষ ভোজন করতেন স্বামীজি, এই নিয়েও কটাক্ষ করেন। অজানা নয়, ঠাকুর নিজেও দক্ষিণেশ্বরে পুজো করাকালীন আত্মতুষ্টির কথা বলতেন। ঈশ্বরকে সেবা করতে গেলে নিজের সেবার কথা বলতেন। উল্লেখ আছে এমনও ঠাকুর নিজে হাতে মা ভবতারিণীকে খাইয়ে দিতেন। শ্রীজাত সেই নিয়েও একহাত নেন অমোঘ লীলার। কবি লেখেন, অমোঘ লীলার মন্তব্যেক উল্লেখ করে শ্রীজাত লিখেছেন, 'আমিষ ভোজন নিয়ে নিদান দিচ্ছেন যখন অমোঘবাবু, তখন নিশ্চয়ই তাঁর এ-খেয়াল হয়নি যে, স্বামী বিবেকানন্দ কেবলমাত্র আরেকজন সন্ন্যাসী নন। তাঁর স্বল্পায়ু জীবনরেখায় যে-ত্যাগ, যে-লড়াই, যে-কৃচ্ছসাধন, যে-তিতিক্ষা, যে-আত্মবিশ্বাস আর যে-দুঃসাহস তিনি দেখিয়ে গেছেন, তা কোনও সাধারণ মানুষের পক্ষে কখনও সম্ভব হত না। একটা গোটা সমাজের পথপ্রদর্শক ও প্রতিনিধি হয়ে ওঠার জন্য কেবল সন্ন্যাসীর বসন যথেষ্ট নয়, অন্তরটুকুও তেমন হওয়া জরুরি।'
প্রসঙ্গত, শ্রীজাত তাঁর দীর্ঘ পোস্টে নিজের ভাবনা, বিরক্তি ও তিনি যে কতটা মর্মাহত তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। ইসকনের সন্ন্যাসীর হাতে থাকা বহুমূল্য টমি হিলফিগারের ঘড়িটিকেও বিঁধতে ছাড়েননি শ্রীজাত। তাঁর প্রশ্ন, ‘সামান্য দৈনন্দিন সময় দেখার জন্য যাঁর এত বহুমূল্য ঘড়ি প্রয়োজন হয়, তিনি দ্রষ্টা হবেন কোন মুখে?’ এখানে উল্লেখ্য, রামকৃষ্ণের ‘যত মত তত পথ’ বাণীকে উদ্ধৃত করে এমন ব্যাখ্যা দিয়েছেন অমোঘ লীলা, যা নিয়ে বেজায় চটেছেন রামকৃষ্ণ ভক্তরা। শ্রীরামকৃষ্ণ যেভাবে মানুষকে ঈশ্বরলাভের বহু পথ সম্পর্কে জ্ঞাত করার চেষ্টা করেছিলেন, তার সমালোচনা করেন অমোঘ লীলা। বলে রাখা ভালো, ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা কর্পোরেট দুনিয়াতেই কাজ করেছেন আশিস আরোরা থুরি অমোঘ লীলা। পেশায় ছিলেন ইঞ্জিনিয়র। পরে তিনি সন্ন্যাসকে কেরিয়ার অপশন হিসাবে গ্রহণ করেন। শ্রীজাত সেই প্রসঙ্গ টেনেও খোঁচা দিয়েছেন অমোঘ লীলাকে।