আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে বিধায়ক-অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিকের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আর তার জেরেই টলি পাড়ায় বিধায়ক-অভিনেতার বন্ধুরা একে-একে সরব হচ্ছেন প্রতিবাদে। রবিবার আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনরত চিকিৎসকেদের উদ্দেশে কাঞ্চনের মন্তব্যে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই কাঞ্চনের বিরোধিতা করেছেন। এবার সেই বিতর্কের জেরে বাতিল হল কাঞ্চনের নাটকের শো। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানিয়েছেন সুজন নীল মুখোপাধ্যায়।
আন্দোলনরত চিকিৎসকদের নিয়ে কাঞ্চনের করা মন্তব্যকে অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। তৃণমূলের অন্দরে থাকা তারকা বিধায়ক-সাংসদেরা এই নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটলেও চুপ থাকেননি কাঞ্চনের টলি পাড়ার বহু পুরনো সহকর্মীরা। ইতিমধ্যেই কাঞ্চনকে ত্যাজ্য করেছেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা। চাঁচাছোলা ভাষায় কটাক্ষ করেছেন ঋত্বিকও। এবার নাটক বাতিলের কথা সামনে নিয়ে এলেন কাঞ্চনের বহু পুরনো বন্ধু নীল। ‘স্বপ্নসন্ধানী’-তে অভিনয় করার সময় থেকেই কাঞ্চনের সঙ্গে আলাপ অভিনেতা সুজন নীল মুখোপাধ্যায়ের। তিনি একের পর এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন কাঞ্চনের মন্তব্যে তিনি কতটা মর্মাহত।
প্রথমে সুজন তাঁর ফেসবুকে লেখেন, বন্ধুত্বের হয় না পদবী? হয় সরকারি শিলমোহর। এরপর সুজন আরও একটি পোস্টে জানান, মাগন রাজার পালা আমার আর কাঞ্চন অভিনীত নাটকের আমন্ত্রিত অভিনয় বাতিল হল। এক সংবাদমাধ্যমকে সুজন জানিয়েছেন যে কাঞ্চনের মন্তব্যের জেরে তাঁর দল চেতনার মাগন রাজার পালা নাটকটির শো বাতিল হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের আগামী জানুয়ারি মাসে শিলিগুড়িতে শো ছিল। কিন্তু এই ঘটনায় এখন শো বাতিল করে দিয়েছে উদ্যোক্তারা। তবে এই পোস্টের নীচে কমেন্ট করে নীল লেখেন যে তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছে। কাঞ্চনের মন্তব্যকে সমর্থন করেন না সুজন। ‘বন্ধু’র মন্তব্যে তিনি হতাশ।
এরপর সুজন আরও একটি দীর্ঘ পোস্ট লেখেন ফেসবুকে। যেখানে তাঁর ও কাঞ্চনের মাগন রাজার পালা নাটকের পোস্টার শেয়ার করেছেন সকলের সঙ্গে। আর এই পোস্টে সুজন ব্যথিত হৃদয়ে লিখেছেন, মাগন আর রাজা আর জুটি বেঁধে মঞ্চে নামবে না। বেশ কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব বা মানুষের নিদান আসল। সেটা গ্রহণ করতে হয়। তবে এই পোস্টে সুজন কাঞ্চনের অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সুজন লেখেন, উল্টোদিকে এটাও সত্যি, কাঞ্চন মল্লিকের এই নাটকে যে অবদান, তা চিরকাল মনে গেঁথে থাকবে...অভিনেতা হিসেবে ওর লড়াই,ওর নিষ্ঠা, ওর দক্ষতা কে আজীবন শ্রদ্ধা করবো। বাকিগুলো ভুলে যাবারই নামান্তর। নীলের এই পোস্ট থেকেই জানা গিয়েছে যে তাঁরা একসঙ্গে বাংলা সহ গোটা দেশে ৫৫টির মতো অভিনয় করেছেন, কাঞ্চনের থেকে শিখেছেও অনেক যা ভোলার নয়। নীলের কথায় কাঞ্চন ছাড়া মাগন হয় না, ওর অতুলনীয় অভিনয় এই নাটকের প্রাণ ছিলো।
শেষে নীল জানিয়েছেন যে এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের মুহূর্তে এই নাটক স্তব্ধ হল। আলবিদা বন্ধু মাগন। প্রসঙ্গত, রবিবার কোন্নগরের মহিলা তৃণমূলের ধর্নামঞ্চে বিধায়ক কাঞ্চন বলেন, ‘‘যাঁরা কর্মবিরতি করছেন বা শাসকদলের বিরুদ্ধে (কথা) বলছেন, তাঁরা সরকারি বেতনটা নিচ্ছেন তো? না কি নিচ্ছেন না? পুজোর বোনাসটা নেবেন তো? আমার প্রশ্ন এগুলো।’’ এই মন্তব্যের পরেই কাঞ্চন বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হচ্ছেন।