সকাল থেকেই বোঝা গিয়েছিল যে বাংলা তৃণমূলের দখলেই যাবে। আর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এক এক করে জয়ের খবর আসা শুরু হতেই গোটা রাজ্যজুড়ে শুরু হয়ে যায় সবুজ আবিরের খেলা। অন্যান্য প্রার্থীদের সঙ্গে বিনোদন জগতের তারকা প্রার্থীরাও জয়ী হয়েছেন এই লোকসভা নির্বাচনে। রচনা বন্দ্য়োপাধ্যায়, জুন মালিয়া, সায়নী ঘোষ, দেব, শতাব্দী রায় সহ অন্যান্যরা। আর এঁদের জয়ে স্বাভাবিকভাবেই খুশি জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাই ফলাফল ঘোষণা হতেই অভিনেতা তাঁর ফেসবুক পেজে বিরোধীদের খোঁচা দিয়ে পোস্ট দিতে বিপাকে পড়লেন। ছড়া আকারের এই পোস্টের এক জায়গায় তিনি যে বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীকে খোঁচা দিয়েছেন তা একেবারে স্পষ্ট।
ফেসবুকে ঠিক কী লিখেছিলেন জয়জিৎ? জয়জিৎ তাঁর পোস্টে লেখেন, আজ বাংলায় হনুমানদের হুপ হাপ কমেছে। কলার দাম কমেছে। যাকে তাঁকে এনকাউন্টার করে দেব কেউ বলছে না। অধিকারী পালিয়েছে ধাই কিরি কিরি। পুনশ্চ: বাংলায় সাম্প্রদায়িকতার তাস চলবে না কোনওদিন। এবার কিছু হনুমান দলদাস হাইড্রেনের ঢাকনা খোলার মতন দুর্গন্ধ যুক্ত মন আর মুখ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর এই পোস্ট করেই বিপাকে পড়তে হল অভিনেতাকে। জয়জিৎ এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে এই পোস্টের পরই তাঁকে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে হুমকি পাঠানো হচ্ছে। কমেন্টেও তাঁকে কুকথা শোনানো হচ্ছে। জয়জিৎ-এর কথায় তিনি এইসব কমেন্টে তাঁর বন্ধু রুদ্রনীলকেও ট্যাগ করেছিলেন কিন্তু কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে জয়জিৎকে ফোনে ধরা হলে তিনি bangla.aajtak.in-কে পুরো ঘটনাটি নিয়ে বলেন, আমাদের বাড়িতে লোকনাথ বাবার পুজো ছিল। আমার মাকে যিনি কাজে-কর্মে সাহায্য করেন তিনি মুসলিম, তাঁর মেয়ে অসুস্থ হওয়ার কারণে দুটো অমৃতি কিনে এনে পুজোয় দিয়েছিল। সেটা দেখেই বলেছিলাম এটাই আমাদের ভারতবর্ষ। তারপর প্রচুর হনুমান এসে আমার প্রোফাইলে লাফিয়ে পড়েন। এবং তারা এমন ভাব করেন যে পরের দিন জিতব, ওদের আশা ছিল যে এখানে প্রচুর সিটে জিতবে। এরপর আমার পোস্টে এসে সেই সব মানুষেরা প্রচুর গালিগালাজ দেয়, প্রাণে মারার হুমকি দেয়। কোনও একটা পোস্টে আমি রুদ্রনীলকে ট্যাগও করে বলেছিলাম যে কিগো আমায় তো মারবে ফারবে বলছে। কিন্তু কোনও উত্তর পাই না। তাঁর হয়তো কোনও বাধ্যবাধকতা থাকবে হয়ত। আমি কোনও পার্টিও করি না তাই আমার কোনও বাধ্য বাধকতাও নেই। আমাকে সব পার্টিকেই গালাগাল করি।
জয়জিৎ এরপর আরও বলেন, এখন তো ভারতবর্ষেই দেখছি হনুমানদের হুপহাপ কমে গেছে দেখছি। যেখানে রামমন্দির হয়েছে সেখানে তো হনুমানদের হুপহাপ কমিয়ে দিয়েছে, খেদিয়ে দিয়েছে একেবারে। অঞ্চলের বাইরে কলা ছুঁড়ছে আর হনুমানরা গিয়ে খাচ্ছে। তারা ভদ্রতা শিখবেই বা কী করে, এখানে যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারাই তো ভোটের আগের দিন গিয়ে চমকাচ্ছেন। নেতাদের থেকেই তো কর্মীরা শিখবে। রচনাদি ভোটে জেতায় যারপরনাই খুশি জয়জিৎ। তিনি জানান যে তিনি আগে থেকেই জানতেন রচনা জিতবেন কারণ রচনার ক্যারিশমাই তাঁকে এই জয় এনে দিয়েছে। অভিনেতার কথায় তিনি যতটা চেনেন রচনাকে তাতে রচনা মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোবাসেন।
তবে জুন, রচনা, দেব জয়ী হওয়ায় ভীষণ খুশি জয়জিৎ। তিনি সংবাদমাধ্যমদের জানিয়েছেন, জুন ও রচনা যাতে রাজ্য সরকারকে সঙ্গে নিয়ে আরও বেশি করে সিনেমার উন্নতির বিষয়টা দেখে। ওরা সবাই যেন চেষ্টা করে, সিঙ্গল স্ক্রিনের অবস্থা ফেরানো যায়। আর দেব তৃতীয় বার সাংসদ হল। দেব যে ভাল কাজ করে, তাঁর তৃতীয়বার জয়ই প্রমাণ করল।
বরাবরই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরব হতে দেখা যায় জয়জিৎকে। আর এই নিয়ে নেটিজেনদের কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয়। তবে দমার পাত্র নন জয়জিৎ, তা তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট দেখলেই বোঝা যাবে।