ঠোঁটকাটা অভিনেতা বলেই টলিউডে পরিচিত রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পোস্ট ঘিরে রোজই বিতর্কের সৃষ্টি হয়। যদিও এইসব নিয়ে ভাবতে নারাজ রাহুল। বরং তাঁর জীবনের মন্ত্র হল যার প্রতি ক্ষোভ তাঁকেই সেটা দেখানো উচিত। রাহুলের অভিনয় প্রশংসিত। এখন অভিনেতা ব্যস্ত সৃজিতের ব্যোমকেশের অজিতকে নিয়ে ও হরগৌরী পাইস হোটেল-এর শ্য়ুটিং নিয়ে। নিজের কেরিয়ার থেকে আবার প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে নতুনভাবে সফর শুরু, সবকিছু নিয়ে bangla.aajtak.in-এর সঙ্গে খোলাখুলি আড্ডা দিলেন রাহুল।
আবার প্রলয় টিজার মুক্তির পরই তোমার সোশ্যাল মিডিয়ায় কাউকে কটাক্ষ করে পোস্ট, কার উদ্দেশ্যে?
রাহুল: রাজ চক্রবর্তীকে উদ্দেশ্য করে লিখেছি। দেখো আমার মনে হয়েছে এত বড় বাজেটের এত বড় একটা কাজ, সেখানে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র, তার পিছনে একটু সময় ও ভাবনা ইনভেস্ট করব না আমি। একটা এত জনপ্রিয় এক চরিত্রর মিরর ইমেজ করে ফেলব। সেটা আমার আইডিয়ালি খারাপ লেগেছে। তবে এটা আমি হয়ত অন্য কারোর ক্ষেত্রে বলতাম না, যেটা রাজের জন্য বলেছি। আমার পুরনো ক্ষোভ-রাগ আছে রাজের প্রতি। সেখান থেকেও বলেছি। আর তাছাড়া আমার মনে হয়েছে যে একটা চরিত্রের পিছনে একটু নিজস্ব ভাবনা দেওয়া উচিত ছিল। এটা আমরা রাজ, সৃজিতের মতো বড় পরিচালকদের থেকে এটা আশা করি। দেখো অন্যদের হলে আমি অতটা মাথা গলাতাম না, কিন্তু রাজের বলে আমি এটা এড়িয়ে যেতে পারিনি।
রাজ চক্রবর্তীর 'চিরদিনই তুমি যে আমার' ছবি দিয়ে তোমার কেরিয়ার শুরু, অথচ তুমি রাজের বিপক্ষে, কেন?
রাহুল: তোমরা এটা মনে রেখেছো যে রাজের সিনেমা দিয়ে আমার শুরু, চিরদিনই তুমি যে আমার ২০০৮ সালের ১৫ অগাস্ট ছবি মুক্তি পায়। ২০০৯-এর জানুয়ারিতে বাংলার এক জনপ্রিয় সংবাদপত্রে রাজ চক্রবর্তী ইন্টারভিউ দিয়েছিল যে রাহুলের মতো খারাপ ছেলেকে ব্রেক দেওয়া আমার অন্যায় হয়েছে, ওর মতো খারাপ ছেলে হয় না, ওর সঙ্গে আর কাজ করতে চাই না। এবার কাজ করতে গিয়ে সম্পর্কের অবনতি অনেকেরই হয়। কিন্তু আমিও তখন নিউ কামার, যে পায়ের তলায় জমি খুঁজছে। তখন রাজের ওই ওপেন ইন্টারভিউটা আমার পরিবার, বন্ধু ও চারপাশের লোকেদের ওপর কী প্রভাব ফেলেছিল সেটা রাজ জানে না। আর ওইভাবে বলাটা কতটা প্রভাব ফেলে একজনের কেরিয়ারে, সেটা ওর বোঝা উচিত ছিল। আমার খুব ভাগ্য ভাল যে আমি কলকাতা শহরে একা ছিলাম না। আমার পাশে পরিবার ছিল, মা ছিল, প্রিয়াঙ্কা ছিল, বাবা তখনও বেঁচে, তিনি অত্যন্ত আঘাত পেয়েছিল। তাঁরা সবাই আমায় ঘিরে রেখেছিল বলে আমি সেই অবসাদ থেকে বেরোই নয়তো আমিও সুশান্ত সিং রাজপুত হতে পারতাম সেই সময়টায়।
এ ধরনের কথা বলার পিছনে কী কারণ থাকতে পারে?
রাহুল: এটা কেন রাজ বলেছে এটা আমি বলতে পারব না। এটার পিছনে কি লজিক কাজ করেছে এটা আমি জানি না। ওর সঙ্গে আমার মতানৈক্য হয়েছে, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে, সেটা ব্যক্তিগত পর্যায়েও, আজকে সেটা বলে লাভ নেই, তিক্ত কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি হবে, ব্যক্তি মানুষ অনেকে জড়িয়ে যাবে, যাদের কোনও দোষই নেই। সেই আলোচনায় আমি যাব না। কিন্তু একজন নিউ কামার, যে তোমারই হাতে তৈরি হয়েছে, তার সম্পর্কে সর্বাধিক প্রচলিত সংবাদপত্রে তুমি এটা বলে দিলে। তাঁর কেরিয়ারের প্রভাবটা? সেটা কেউ ভাবল না। একটা কথা আছে না কুড়ুল যখন একটা গাছকে কাটে কুড়ুল ভুলে যায়, গাছ মনে রাখে, আমি সেই গাছটা।
এর আগেও দেখেছি দেবের ব্যোমকেশ হওয়া নিয়েও তুমি সরব হয়েছিলে, এছাড়াও একাধিক বিষয় নিয়ে তোমাকে সোশ্যালে পোস্ট করতে দেখা যায়, টলিউডের ওপর কোনও রাগ রয়েছে?
রাহুল: নিজের ঘরের প্রতি কারোর রাগ থাকতে পারে। তবে আমার মনে হয় আমারই যখন ঘর তখন আমারই ঘরে আমি পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকতে পারব না। আর আমি দেখেছি যে কোনও কিছু আমার ভুল লাগলে সেটা মেনে নেওয়ার পর আমার মিসডায়রেক্টেড অ্যাঙ্গার আমার পরিবারের ক্ষতি করে। তাই আমার যেটা ভুল মনে হয় সেটা আমি তখনই মিটিয়ে দিই, তাকে বলে দিই, এতে হয়ত আমি তিনটে কাজ কম পাব। কিন্তু আমি মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করব না। আমি মিসডায়রেক্টেড অ্যাঙ্গার-এর জন্য অনেক ক্ষতি করেছি নিজের। যেখানে যেটা প্রতিবাদ করার উচিত ছিল সেটা না করে বাড়িতে চলে এসেছি, তার প্রভাব বাড়িতে পড়েছে, এটা হয় আমার। তাই ঠিক করেছি যার ওপর রাগ তাকেই দেখাবো, অন্য কাউকে দেখাবো না। তাই টলিউডকে আমি আমার ঘর বলে মনে করি আর যেটা ঠিক লাগে না সেটা বলে দিই। দেবের ফ্যানেরা এর জন্য আায় তুলোধনাও করেছে, খারাপ খারাপ কথাও বলেছে। কিন্তু আমি তাতে কিছু মনে করিনি কারণ আমি জানি ফ্যান-এর অর্থ কী।
দেবের ব্যোমকেশ অম্বরীশ ভট্টাচার্য অজিত আর তোমাকে সৃজিতের ব্যোমকেশে অজিতের চরিত্রে দেখা যাবে, চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে?
রাহুল: আমার যখন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ছিল, সেটা নিয়ে টেনশন ছিল পাশ করব কী করব না। জয়েন্ট এন্ট্রান্স নিয়ে কোনও টেনশন ছিল না, কারণ আমি জানতাম যে আমি যে লেবেলে সায়েন্সটা বুঝি তাতে কোনওভাবেই পাশ করতে পারব না। অম্বরীশ দা-কে নিয়ে আমার জয়েন্টের মতো অবস্থা, অম্বরীশ দা আমার এত প্রিয় শিল্পী যে আমি ভাবছি না যে আমি তাঁর চেয়ে ভাল আমি করতে পারব। আর আমার অজিত চরিত্রটি একান্তই যদি কারোর ভাল লেগে যায় তাহলে সেটা নির্মাতাদের অবদান। অম্বরীশ দা খুব মিষ্টি একটি মানুষ, তাঁর সঙ্গে দাদাগিরি খেলতে গিয়েছি,আমি দাদাগিরি নিয়ে খুব প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব রাখি। তো শুরু হবে, তার আগে অম্বরীশ দাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে তুমি তো অনেক বার জিতেছো, তখন অম্বরীশ দা বলে যে জেতার চেয়ে অনেক বেশি হেরেছি। যে মানুষ এত সহজে এই কথা বলতে পারে তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা যায় না তা সেদিনই নতজানু হয়ে ঠিক করে নিয়েছিলাম। নির্দিধায় বড় একজন শিল্পী, তাঁর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার কথা ভাবি না।
প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে আলাদা হওয়ার পর তোমার সঙ্গে নাম জড়িয়েছে সুদীপ্তা-রুকমার, টলিউডের এই গসিপ তোমার ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছে?
রাহুল: খুব একটা প্রভাব পড়েনি। রুকমার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা বেস্ট ফ্রেন্ডের, আমরা এখনও বেস্ট ফ্রেন্ড। সিরিয়াল শেষ হওয়ার পর আমাদের সাকুল্যে দেখা হয়েছে একবার। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি জানি যে আমার বিপদে রুকমা আছে আর রুকমাও জানে যে ওর বিপদে আমরা আছি। সবকিছু যৌনতা দিয়ে বিচার করান যায় না। আসলে যৌনতা যখন কোনও সম্পর্কে ঢুকে যায় সেটা অনেক জটিল হয়ে পড়ে। আমাদের সম্পর্কটা জটিল নয় তার কারণ আমাদের সম্পর্কে যৌনতা ঢোকেনি। আর যতক্ষণ না প্রিয়াঙ্কা আমাকে ভুল না বুঝছে ততক্ষণ আমায় গোটা পৃথিবী কী ভাবল আমার আসে যায় না।
ব্যস্ততার মাঝে সহজকে সময় দাও কীভাবে?
রাহুল: ওই সময়টা বেরিয়ে যায়। নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় যখন সময়টা বেরিয়ে যায়, নিঃশ্বাস নিতে তো আলাদা কোনও সময় লাগে না, সন্তানের জন্য আলাদা কোনও সময় লাগে না, সেই সময়টা ঠিক বেরিয়ে যায়।
বাবার কাছে কী কী আবদার করে সহজ?
রাহুল: বাবার কাছে আবদারের প্রথমদিকের তালিকা হল কেএফসি ও পিৎজ্জা, এটা তো থাকেই। আসলে সহজ খুব বুঝদার ছেলে, এমনও হয়েছে সহজ কোনও খেলনার ডিমান্ড করেছে, কিন্তু কিনতে গিয়ে সেটার দাম অনেক বেশি দেখে বলেছে বাবা এটা নেব না। প্রিয়াঙ্কা সহজকে খুব সুন্দরভাবে আশা করছি মানুষ করছে। সেটায় আমি সহযোগী হয়ে রয়েছি। ভাল মানুষই হবে বলে বিশ্বাস, এটুকু তো পৃথিবীকে দিতে পারি। একজন ভাল মানুষ দিয়ে যেতে পারলে সেটাই অনেক। এরপর সহজ অভিনয় করবে নাকি ডাক্তার-উকিল হবে সেটা পরের ব্যাপার, ওর সিদ্ধান্ত।
আবার প্রিয়াঙ্কা-রাহুল একসঙ্গে, অনুভূতিটা কেমন?
রাহুল: মাঝে মাঝে মনে হয় স্বপ্ন দেখছি, এই আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এটা কোনওদিন হবে ভাবি নি। কারণ এরকম সচারাচর হয় না। এটা হওয়ার একমাত্র কারণ হল আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বটা একদিনের জন্য মরেনি। যখন কোর্টে তুমুল কেস চলছে তখনও আমি ওকে নেটফ্লিক্সে এইটা একটু দেখো, প্রিয়াঙ্কাও জানিয়েছে যে ওর অ্যামাজনে কী ভাল লাগছে। এই কালচারাল দেওয়া নেওয়াটা একদমই বন্ধ হয়নি। আর আমাদের মধ্যে একটা ব্রিজ ছিল, যেই ব্রিজটার নাম হচ্ছে সহজ। সেই ব্রিজের সূত্রে আমাদের দেখা-সাক্ষাৎতো হতেই থাকত। এখন তো আবার রিসাইকেল হয়েছে কেসটা,নতুন নতুন শুরু হয়েছে, এখন একটু লজ্জা লজ্জা লাগছে।
দুজনে একসঙ্গে আলাদা করে সময় কাটানো হয়েছে?
রাহুল: রাহুল-প্রিয়াঙ্কা ডেটে গিয়েছে, তবে তাঁদের সঙ্গে সহজ এতখানি জড়িয়ে যে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা আলাদা গেলেও সহজের কথাই বেশি বলে। বলতেও এখন লজ্জা করছে যে আমরা এখন প্রেম-টেম করছি।
'হরগৌরী পাইস হোটেল'-এ তোমার চরিত্র কোনওভাবে কী চিরদিনই তুমি যে আমার কৃষ্ণকে মনে করিয়ে দেয়?
রাহুল: না, এই পাগলামি টাতো সিনেমার শেষ পাঁচ মিনিটে ছিল। তার কোনও ডায়ালগ ছিল না। এটাতে গলার আওয়াজ চেঞ্জ করতে হয়েছে আমায়, একেবারে অন্য ফরম্যাট, এটা কমিক চরিত্র, কৃষ্ণের চরিত্র ছিল দুঃখের। লুকওয়াইস মিল তো আনতে চাইবে বাণিজ্যিক কারণে, সেটা তো প্রযোজক ও চ্যানেলের সিদ্ধান্ত। হরগৌরী পাইস হোটেলের চরিত্রটাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছি। এর সঙ্গে চিরদিনই তুমি যে আমার কৃষ্ণের কোনও মিল নেই।