বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় যেমন ভাল অভিনেত্রী হিসাবে পরিচিত তেমনি তিনি ঠোঁটকাটা হিসাবেও জনপ্রিয়। স্বস্তিকা বরাবরই তাঁর মা-বাবার খুব কাছের ছিলেন। কিন্তু প্রথমে মা আর তারপরে বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায় চলে যাওয়ার পর একেবারেই একা হয়ে গিয়েছেন অভিনেত্রী। এখন বাবার স্মৃতি আঁকড়ে ধরেই বেঁচে আছেন স্বস্তিকা। সামনে তাঁর ছবি টেক্কার মুক্তি। প্রায় গোটা দিন ধরেই চলছে প্রচারের ঝক্কি। সেই ব্যস্ততাময় জীবনেই স্বস্তিকার ভাবনায় ফিরে এলেন বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায়। তেমনই এক আবেগঘন পোস্ট লিখলেন স্বস্তিকা তাঁর বাবাকে নিয়ে।
শনিবার রাতে বাবার গায়ের গন্ধে হঠাৎই ঘুম ভেঙে যায় স্বস্তিকার। সেই স্মৃতিতেই ডুব দিলেন অভিনেত্রী। রবিবারই স্বস্তিকা তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে সেই স্মৃতির কথা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন। স্বস্তিকা লিখলেন, কাল রাতে ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেল। সেই চেনা গন্ধটা নাকে আসতেই উঠে পড়লাম। গন্ধটা পেয়ে জেগে গিয়েছিলাম, নাকি জেগে গিয়ে গন্ধটা পেলাম ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না। বাবা ষ্টুডিও থেকে বাড়ি ফিরলেই বাড়িটা যেমন ব্যস্ত হয়ে উঠত, কাল রাতে ঠিক তেমনটা হল। আর সেই ঘাম, পারফিউম, ইউডি কোলন মেশানো গন্ধটা বাড়িময় ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমি বালিশে মাথা রেখেই ভাবছি, আচ্ছা বাবা কি সত্যি বাড়ি ফিরেছে?
স্বস্তিকা তাঁর দীর্ঘ পোস্টে আরও লেখেন, মাসি কে ডেকে বলল, কিরে মামণি মাটি টা কেমন বালি বালি হয়ে আছে, সন্ধেবেলা ঠিক করে মুছিস নি? বাড়িতে ঘট বসে গেছে, আবার ঝাঁট দিসনি তো? মাসি কী বলল সেটা শুনতে পেলাম না। তারপরই বাথরুম এ ঢুকলো বাবা, রোজ যেমন যেত পা ধুতে। বাবার স্মৃতিতে ডুব দিয়ে স্বস্তিকা জানিয়েছেন যে বাড়ি ফিরে সন্তু মুখোপাধ্যায় বাথরুমে ঢুকে পা ধুতেন। অভিনেত্রী যেন জল পড়ার আওয়াজও পেলেন। ফুলকি , স্বস্তিকার পোষ্য, তাকেও বলল বলে অভিনেত্রীর মনে হয়েছে।
সেই ঘোর নিয়ে স্বস্তিকা আরও লেখেন, গাঢ় গেরুয়া রঙের পাঞ্জাবিটা পরে ছিল বাবা। বাথরুম থেকে বেরিয়ে বলল, ‘দাঁড়া একটু বসতে দে, মামনি আমার বড় গ্লাস টায় জল দে তো! বলে নিজের ঘরে চলে গেল।’আমি সেই একই ভাবে ডান পাশ ফিরে বালিশে মাথা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছি, আমি কখন বাড়ি ফিরেছি জিজ্ঞেস করল না তো? তাহলে কী ভুলে গেল যে আমি বাড়িতেই আছি? কত কিছু ভাবলাম! ওই চেনা গন্ধটা নাকে নিয়েই, কিন্তু ডান পাশ থেকে আর বা পাশে ফেরা হল না। বাড়িতে পুজো, সকাল সকাল উঠে পড়েছি, তখনও গন্ধটা নাকে লেগে আছে। আমি তো ঘুমোচ্ছিলাম না, আমার পরিষ্কার মনে আছে, আমি চেয়ে ছিলাম। খালি কোনও একটা অজ্ঞাত কারণে পাশ ফিরিনি, উঠেও যাইনি। ঘরের দরজা খোলা, তাকালেই বাবা কে দেখতে পেতাম। কিন্তু তাকালাম না। অথচ পাঞ্জাবির রংটা তো ঠিক মনে আছে।
কেন এমন ঘোরে ছিলেন। কেন এমন ভাবনা ঘিরে ধরল, তা নিয়ে পরের দিন ভাবলেন স্বস্তিকা। তিনি লিখলেন, দিন গড়িয়ে সন্ধে নামার আগে ছাদে উঠে খুব মন দিয়ে ভাবলাম। রাত হতে চলল এখনও ভাবছি। এক বার ঘুরে তাকালেই বাবাকে দেখতে পেতাম। কত বছর দেখিনি। তাকালাম না কেন? উঠে গেলাম না কেন? স্বপ্ন হলে সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পরে বাবার গায়ের গন্ধটা পেতাম? স্বস্তিকার এটা যে কেবলই কল্পনা, তা তিনি নিজেও জানেন। কিন্তু নিজেই ঘোর কাটাতে চাইছেন না তিনি। বিশ্বাস করতে চাইছেন, সত্যিই বাবা এসেছিলেন। তাই স্বস্তিকা লিখেছেন, মাসি কে একটা কথাও জিজ্ঞেস করিনি।
স্বস্তিকা আসলে বিশ্বাস করতে চাইছেন তাঁর বাবা সত্যিই তাঁর কাছে এসেছেন। হয়তো পুজোর কটা দিন মেয়ের কাছে থাকবেন বলে এসেছেন। অভিনেত্রী লিখেছেন, আবার যদি আসে, আমি যদি আবার দেখতে না পাই, যদি ডাকে শুনতে না পাই, এই ভয়ে ঘুমোতে পারি না। কত ওষুধ খাই তাও পারি না। যদি বাবা এসে ডাকে, আমি ভুলে গিয়েছি আর অপেক্ষা করি না ভেবে যদি সাড়া না পেয়ে চলে যায়!অভিনেত্রীর পোস্টে আকুতি, “আর তো দেখতে পাব না। সবার বাবারা ভাল থাকুক। সন্তানেরা তাদের আগলে রাখুক। চলে গেলে সব ছাই। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১১ মার্চ বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায়কে হারিয়েছেন অভিনেত্রী। বাবার খুব কাছের ছিলেন স্বস্তিকা। তাঁর চলে যাওয়ার পর খুব একা হয়ে যান অভিনেত্রী। মাঝে মাঝেই বাবাকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট করেন তিনি। হয়তো চারদিকে যা ঘটে চলেছে তারই কারণে নিজের বাবার অভাব বোধ করছেন স্বস্তিকা।