তাঁর মতো আজও কেউ হতে পারেনি। তাঁর হাসি, তাঁর ঢেউ খেলানো চুল, তাঁর সিগারেট খাওয়ার স্টাইল, সর্বোপরি তাঁর অভিনয় আজও মানুষের মনে অমলিন হয়ে রয়েছে। বাঙালিয়ানায় টইটুম্বুর উদযাপন সবটাই বাঙালি সেই কোন কাল থেকেই অনুকরণ করতে চেয়েছে। বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে তিনি ছিলেন এমন এক হীরের টুকরো, যার দিকে তাকালে চোখে অন্ধত্ব নেমে আসবে জেনেও চোখ ফেরানো যেত না। আমরা কথা বলছি সেই মহানায়ককে নিয়ে যাঁর বিকল্প আজও তৈরি হয়নি, তৈরি হবেও না। উত্তম কুমার মানেই সিনেমা হলে তিল ধারণের জায়গা নেই। সেই সময় মহানায়কের নায়িকা হতে চেয়েছেন এমন অভিনেত্রীর সংখ্যা নেহাত কম ছিল না। মহিলাদের ক্রাশ ছিলেন তিনি। মনে মনে উত্তম কুমারকে অনেক মেয়েই স্বামী ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলেন।
কত পারিশ্রমিক নিতেন উত্তম কুমার
তবে আজও সমান ভাবে মানুষের মনে জায়গা করে রয়েছেন মহানায়ক উত্তম কুমার। তাঁর সময়কালে অসংখ্য হিট ছবি তিনি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। তাঁর নামে রয়েছে একটি মেট্রো স্টেশনও। তবে জানেন মহানায়কের পারিশ্রমিক কত ছিল? চলুন জেনে নিন। প্রসঙ্গত, বর্তমান সময়ে ছবির ধরণ যেমন পরিবর্তন হয়েছে, তেমনই শ্যুটিং এর ক্ষেত্রেও নানা পরিবর্তন হয়েছে। সাদা কালো সিনেমা এখন রঙিন সিনেমায় পরিবর্তন হয়েছে। ছবির বাজেট থেকে শুরু করে অভিনেতাদের পারিশ্রমিকও বেড়েছে। তবে বাঙালির আবেগ তথা মহানায়ক উত্তম কুমারের পারিশ্রমিক কত ছিল তা নিয়ে কৌতুহল আজও রয়েছে।
আরও পড়ুন: Suchitra Sen: ফুলের তোড়া নিয়ে বাড়িতে, কী কারণে রাজ কাপুরের প্রস্তাব ফেরান সুচিত্রা?
মহানায়কের চাহিদা ছিল খুব বেশি
শোনা যায়, সেই সময় উত্তম কুমারের ভরা বাজার ছিল। তাঁর চাহিদা এতটাই বেশি ছিল যে পরিচালক-প্রযোজকরা যে কোনও মূল্যে তাঁকে সিনেমায় নিতে চাইতেন। তিনি একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন। তবে শুরুটা খুব সহজ ছিল না। প্রথম দিকে বেশ কয়েকটি ছবিতে তিনি অসফল হলেও পরবর্তীতে তাঁর সবকটি ছবি হিট হয়েছিল। প্রসঙ্গত, তিনি বাংলা ছবির প্রথম মহানায়ক যিনি সিনেমার ম্যাটিনি আইডলের তকমা পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: Suchitra Sen: উত্তম কুমারের মৃত্যু নয়, এই ব্যক্তির কথায় নিজেকে অন্তরালে রেখেছিলেন সুচিত্রা সেন
আড়াই-তিন লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক
শোনা যায়, সেই সময়কালে উত্তম কুমার এক একটি সিনেমার জন্য আনুমানিক আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক নিতেন। সেই স্বর্ণযুগে এই পারিশ্রমিক যে কতখানি ভারী অঙ্কের তা বুঝতে কারো সমস্যা হবে না। অন্য অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তুলনায় মহানায়কের পারিশ্রমিক ছিল একেবারে ভিন্ন। তিনি যে টাকা নিতেই তার ধারেকাছে কেউ আসতেন না। কিন্তু যে কোনও মূল্যেই উত্তম কুমারকে পরিচালক-প্রযোজকরা নিজেদের সিনেমার জন্য। নিতেন। পরে অবশ্য শোনা যায় যে শেষের দিকে মহানায়কের পারিশ্রমিক কিছুটা বদলে ছিল।
আরও পড়ুন: Jaya Cinema Demolition: ভেঙে ফেলা হচ্ছে লেকটাউনের জয়া সিনেমা, হবে শপিং মল
সাড়ে ১৩ টাকা প্রথম পারিশ্রমিক
উত্তম কুমারের প্রথম ছবি দৃষ্টিদান মুক্তি পায় ১৯৪৮ সালে। এই সিনেমায় তিনি শিশুশিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। পেয়েছিলেন সাড়ে ১৩ টাকা। সেই বছরই তিনি নায়কের ভূমিকায় দেখা দিলেন নবেন্দুসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত কামনা ছবিতে। সেই সময় তিনি পেয়েছিলেন দেড় হাজার টাকা পারিশ্রমিক। এর কিছু বছর পরই তিনি নিজের নাম বদলে অরুণ কুমার থেকে উত্তম কুমার হয়ে উঠলেন। সাড়ে চুয়াত্তর-এর পর মহানায়ককেআর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক হিট সিনেমা যেমন দিয়েছেন তেমনি বেড়েছে তাঁর পারিশ্রমিকও। সেই সময় নিতেন আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা। যা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে সেই টাকার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৯৫ লক্ষ টাকা।