দেশে তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন কার্যকর হতে চলেছে। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এই তথ্য দেন। তিনি জানান, তিনটি নতুন আইন ১ জুলাই থেকে কার্যকর হতে চলেছে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আইনেরও উন্নতি করা প্রয়োজন। মানুষ সময়মতো বিচার পাননি। সিস্টেমে সমস্যা ছিল, তাই পরিবর্তন করা হচ্ছে। দাবি করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী।
নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে, ১৮৬০ সালে প্রণীত IPC, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা নামে পরিচিত হবে। আবার ১৮৯৮ সালে প্রণীত CRPC ভারতীয় সিভিল ডিফেন্স কোড এবং ১৮৭২ সালের ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট ভারতীয় প্রমাণ আইন হিসেবে গণ্য হবে। শুধু এই তিন কোডের নাম বদলাবে এমনটা নয়। সঙ্গে বদলে যাবে অনেক কিছু। আমাদের দেশে কোনটি অপরাধ, কোনটি নয়, কোন অপরাধের কী শাস্তি এই সব নির্ধারিত হয় আইপিসি দ্বারা। তবে এবার থেকে এই কোডগুলোকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বলা হবে। IPC-তে ৫১১টি ধারা ছিল। তবে ন্যায় সংহিতায় ৩৫৬টি ধারা থাকবে। এই আইন কার্যকর হওয়ার পর মহিলারা অনেক সুবিধা পাবেন। তাদের বিরুদ্ধে যে অপরাধ হয়, সেগুলোর কঠোর সাজার সংস্থান রয়েছে নতুন ধারাগুলোতে।
এই আইনের ফলে মহিলারা কী সুবিধা পাবেন? IPC-তে, ধর্ষণকে ৩৭৫ ধারায় জায়গা দেওয়া হয়েছে। শাস্তির বিধান রয়েছে ৩৭৬ ধারায়। তবে ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় ৬৩ নম্বর ধারায় জায়গা পাবে ধর্ষণের মতো অপরাধ। এবং শাস্তির বিধান রাখা হবে ৬৪ থেকে ৭০ নম্বর ধারায়।
IPC-এর ৩৭৬ ধারা অনুযায়ী, ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হয় অপরাধীর। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ নম্বর ধারাতেও একই শাস্তির বিধান করা হয়েছে। আবার নাবালিকাদের ধর্ষণের জন্য কঠোর শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। ১৬ বছরের কম বয়সী কোনও মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বনিম্ন ২০ বছরের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এই শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলে অপরাধী সারাজীবন কারাগারে কাটাবে।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৫ নম্বর ধারায় একটি বিধান রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি ১২ বছরের কম বয়সী কোনও মেয়েকে ধর্ষণের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয় তবে তাকে ২০ বছর জেল খাটতে হবে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিতও করা হতে পারে। সঙ্গে রয়েছে মৃত্যুদণ্ডের বিধানও।
গণধর্ষণ মামলায় শাস্তিও আরও কঠোর করা হয়েছে। IPC-এর ৩৭৬ (D) ধারায় গণধর্ষণের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে৷ সেখানে গণধর্ষণ মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে ২০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং জরিমানার বিধান রয়েছে। ভারতীয় ন্য়ায় সংহিতাতেও গণধর্ষণের ক্ষেত্রে একই শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা ৭০(২) এর অধীনে, নাবালিকাকে গণধর্ষণের জন্য দোষী সাব্যস্ত যে কেউ কমপক্ষে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়। মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া যেতে পারে। আবার জরিমানার বিধানও রয়েছে। সেখানে, IPC-তে ১২ বছরের কম বয়সী মেয়েকে গণধর্ষণের জন্য দোষী প্রমাণিত হলেই মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বিয়ের অজুহাতে শারীরিক সম্পর্ক করার শাস্তির জন্য ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় ৬৯ নম্বর ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এতে কেউ বিয়ে, চাকরি বা পদোন্নতির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোনও নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করলে তার সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। এর পাশাপাশি জরিমানাও করা হবে। এতে পরিচয় গোপন করে বিয়ে করলেও ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। যৌতুকের জন্য মৃত্যুদণ্ডের যে বিধান সেক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি। IPC-এর ধারা ৩০৪ (B) এবং BNS-এর ধারা ৮০ যৌতুকের জন্য মৃত্যুর বিধান রাখা হয়েছে।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা অনুসারে বিয়ের সাত বছরের মধ্যে কোনও মহিলা অগ্নিদগ্ধ, আঘাত বা সন্দেহজনক কারণে মারা গেলে যৌতুক মৃত্যু বলে গণ্য করা হবে। তবে এক্ষেত্রে মৃত্যুর আগে যদি মহিলা থানার অভিযোগ করেন বা তেমন কোনও পদক্ষেপ করে থাকেন তবেই তা নয়া বিধান কার্যকর হবে। যৌতুকের জন্য মহিলার মৃত্যুর ক্ষেত্রে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে ন্যূনতম ৭ বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে। যা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।