কানপুরে হাড়হিম করা ঘটনা। দশম শ্রেণির ছাত্র কুশাগরা খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড়। খুনের অভিযোগে কুশাগড়ার টিউশন শিক্ষিকা রচিতা, তার প্রেমিক প্রভাত ও বন্ধু আরিয়ানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে একটি মুক্তিপণ উদ্ধার হয়েছিল। সেখানে 'আল্লাহ হু আকবার' লেখা ছিল। তদন্তকারীদের দাবি, প্রকৃত ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার লক্ষ্যে দোষীরা এই কাণ্ড করে।
পুলিশ তদন্তে নামার পর প্রাথমিকভাবে মনে করেছিল, কুশাগরার নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনা আসলে অপহরণ ও মুক্তিপণের। কিন্তু পরে রহস্য উন্মোচিত হতেই তদন্তকারীরাও তাজ্জব বনে যান।
কানপুরের এক বড় বস্ত্র ব্যবসায়ীর ছেলে কুশাগরা। সোমবার সন্ধেবেলা স্কুটারে কোচিং সেন্টারে যায় চিউশন পড়তে। কিন্তু অনেক রাত হয়ে গেলেও সে বাড়ি ফেরেনি। মাঝরাতে তার বাড়িতে একজন এসে একটি চিঠি ছুড়়ে যায়। তাতে লেখা ছিল, 'সন্তানকে ঠিক মতো ফেরত পেতে চাইলে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে।' সেই সঙ্গে চিঠিতে 'আল্লাহ হু আকবর' ধর্মীয় স্লোগানও ছিল। লেখা ছিল- 'আমি চাই না তোমাদের উৎসব নষ্ট হোক। তুমি আমার হাতে টাকা দাও আর এক ঘণ্টা পর ছেলে তোমার কাছে থাকবে।'
আল্লাহ হু আকবার...
চিঠিতে লেখা ছিল, 'এই ছেলেটির গাড়ি এবং মোবাইল দুটোই আপনার বাড়ির কাছে হোটেল সিটি ক্লাবের কাছে পার্ক করা আছে। আমি তোমার কোনও ক্ষতি চাই না। বারবার বলছি ঘাবড়াবেন না। আপনি আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।' এই চিঠি হাতে পাওয়ার পর মামলাটি অপহরণের বলেই মনে করতে শুরু করেন তদন্তকারীরা। কিন্তু আরও ভালো করে তদন্ত শুরুর পর পুলিশকর্মীরা প্রকৃত সত্য সামনে আনতে সক্ষম হন।
পুলিশ তদন্তে নেমে প্রথমেই থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আসাদের মধ্যে টিউশনি শিক্ষিকা রচিতা ও তার প্রেমিক প্রভাতকে ডেকে পাঠায়। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ে প্রভাত পুলিশকে বিপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ প্রভাতের উপর চাপ সৃষ্টি করে। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ভেঙে পড়ে প্রভাত।
এরপর পুলিশ রাতভর অভিযান চালিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। সেই ফুটেজ দেখে টিউশন শিক্ষিকা রচিতার বাড়িতে পৌঁছন তদন্তকারীরা। সেখানেই স্টোর রুমে কুশাগরের মৃতদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ জানায়, 'সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে কুশাগড়ার মৃত্যু হয় এবং পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য মুক্তিপণ দাবি করা হয়। সিসিটিভি খতিয়ে দেখা গেছে, কুশাগরা নিজ ইচ্ছায় ওই শিক্ষকের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সিসিটিভিতে তাকে বাড়ির ভেতরে যেতে দেখা যায়। এরপর রচিতা ও তার প্রেমিক প্রভাত দুজনকেই স্টোর রুমে যেতে দেখা যায়। প্রায় আধঘণ্টা পর দুজনেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলেও কুশাগরা ভেতরেই থাকে। পুলিশ জানায়, তখনই তাকে হত্যা করা হয়। এর পর সিসিটিভিতে প্রভাতকে কুশাগরের স্কুটার কেড়ে নিতে দেখা যায়। অজানা জায়গায় পার্ক করে রাখে। এরপর অভিযুক্ত প্রভাত ও তার বন্ধু আরিয়ান মুক্তিপণের চিঠি নিয়ে স্কুটারে বাড়ি যায়, এ জন্য স্কুটারের নম্বরও পরিবর্তন করা হয়।'
পুলিশ জানিয়েছে, মুক্তিপণ হিসেবে যে চিঠি উদ্ধার হয়েছে তার হাতের লেখা প্রভাতের। তার বন্ধু আরিয়ানকেও আটক করেছে পুলিশ। তবে কী কারণে খুন তা পরিষ্কার নয়। প্রথামিকভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, কুশাগরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তার শিক্ষিকার। এই সন্দেহ থেকেই খুন করে প্রভাত।