নতুন বছরের গোড়ার দিকেই একটি খুনে টলে গিয়েছে গোটা দেশ। নিজের চার বছরের ছেলেকে নির্মমভাবে খুনের অভিযোগ উঠেছে খোদ মায়ের ওপর। ১৪ জানুয়ারি গোয়ায় ওই হত্যাকাণ্ডটি হয়। অভিযুক্ত সূচনা শেঠকে গতকাল তাঁর স্বামী ভেঙ্কটরমণের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়। দু'জনের মধ্যে ১৫ মিনিটের বৈঠক হয়েছিল। যাতে সূচনা এবং তাঁর স্বামী ভেঙ্কট রমণের মধ্যে প্রচুর তর্ক হয়।
ভেঙ্কট সূচনাকে ক্ষিপ্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তুমি ছেলেকে খুন না করলে কে করেছে? এই তথ্যে সূচনা চুপ করে ছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে উভয়ের মধ্যে প্রশ্ন ও উত্তর চলতে থাকে। তারপরে ভেঙ্কট রমন গোয়ার ক্যালাঙ্গুট থানায় তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পদার্থবিদ্যার পণ্ডিত ভেঙ্কট রমন এবং এআই বিশেষজ্ঞ সুচনা শেঠ প্রথমে একে অপরের মুখোমুখি হতে চাননি। কিন্তু পুলিশ তাঁদের মুখোমুখি বসিয়ে জোর করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এই সময় ভেঙ্কট বারবার সুচনাকে তাঁর ছেলের খুনি বললেও তিনি প্রতিবারই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। শুধু তাই নয়, এই ঘটনার জন্য স্বামীকে দায়ী করেছেন সূচনা।
ভেঙ্কটরমণ আরও জানান, যে সময় তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়, সে সময়ে তিনি কোনও কাজে ইন্দোনেশিয়ায় ছিলেন। পুলিশের কাছ থেকে তার ছেলের হত্যার খবর পাওয়ার পর তিনি ৯ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। এবং ১০ জানুয়ারি বেঙ্গালুরুতে পৌঁছে ছেলের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন।
পুলিশ অপরাধের দৃশ্যটি পুনঃনির্মাণ করেছে৷ গোয়া পুলিশ ৪ বছরের নিষ্পাপ শিশুটির হত্যার তদন্ত করছে। এর আগে ১২ জানুয়ারী অপরাধের দৃশ্যটির পুনর্নিমাণ করা হয়েছিল। পুলিশ সূচনার হোটেলে ঢোকার পর থেকে থাকা পর্যন্ত এবং তারপর ক্যাবে করে বের হওয়া পর্যন্ত দৃশ্যটি নতুন করে তৈরি করে। মৃতদেহ নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে যেতে সূচনা শেঠকে অন্য কেউ সাহায্য করেছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স স্টার্টআপ কোম্পানির সিইও সূচনা শেঠ তাঁর ছেলেকে হত্যা করার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণও প্রকাশ পেয়েছে। গোয়া পুলিশের সামনে সুচনা শেঠের রেকর্ড করা জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন যে, আদালত শিশুটিকে প্রতি রবিবার তাঁর বাবার সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দিয়েছিল। যা তিনি একদম চাননি। যেকারণেই তিনি ছেলেকে খুন করেছেন বলে অনুমান। সূচনা কোনও মূল্যেই ছেলেকে তার বাবার সঙ্গে দেখা করতে দিতে চাইছিলেন না।
যেদিন শিশুটিকে খুন করা হয়েছিল, সেই দিন সূচনা ভেঙ্কটকে ছেলের সঙ্গে দেখা করার কথা। কিন্তু ভেঙ্কট প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। ফোন করলেও তা বন্ধ ছিল। এরপরই ভেঙ্কট ছেলের খুনের খবর পান।
উল্লেখ্য, ছেলের হেফাজত নিয়ে গত এক বছর ধরে সূচনা শেঠ এবং তাঁর স্বামী ভেঙ্কটরমণের মধ্যে বেঙ্গালুরুর পারিবারিক আদালতে একটি মামলা চলছিল। আদালত এর আগে শিশুটিকে তার বাবার সঙ্গে ফোনে বা ভিডিও কলে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর নভেম্বর মাসে আদালত শিশুটিকে প্রতি রবিবার তার বাবার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেয়, যা সূচনা সহ্য করতে পারেননি।